কাণ্ড জ্ঞান

গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল শেয়াল পণ্ডিত। হঠাৎ ইঁদুরের সাথে দেখা। ইঁদুরের খুব মেজাজ খারাপ। শেয়াল জানতে চাইলো কি হে ভাই ইদুর তোমাকে খুব রাগান্বিত মনে হচ্ছে। ব্যাপার কি বলো দেখি। ইদুর বললো আর বলোনা পণ্ডিত মশাই, রাস্তা দিয়ে আসছিলাম হঠাৎ শুনি লোকজন বলতেছে হাতকাটা জাহাঙ্গীর নাকি পুলিশের ভয়ে ইঁদুরের গর্তে লুকাইছে। আচ্ছা তুমিই বলো ও ব্যাটা হাতকাটা জাহাঙ্গীর যদি আমাদের গর্তে এসে লুকায় তাহলে আমাদের প্রেসটিজ থাকবে? তাছাড়া আমরা থাকবো কোথায়?
শেয়াল পণ্ডিত সমবেদনা জানিয়ে বললো তাওতো তুমি একটু বুঝে শুনে মানিয়ে চলতে পারবে কিন্তু আমার তো অবস্থা আরো কাহিল। গেলাম মুরগীরামের বাড়িতে। বললাম ছেলে পুলে গুলোকে বাড়িতে না রেখে আমার ডেরায় রেখে এসো ভাল করে শিক্ষা দিয়ে দেব। মুরগীরাম বললো তা হবেনা বাপু, সেই দিন অতীত হয়ে গেছে। এখন আর শেয়ালের কাছে মুরগী বরগা দেবনা। আমি তখন বিষয়টা ধরতে পারিনি পরে রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখি লোকজন বলতেছে কোন পাতিনেতাকে টাকা দিয়ে তারা খুব ঠকেছে এবং এ থেকে তারা নাকি শিক্ষা নিয়েছে যে শেয়ালের কাছে মুরগী বরগা দিতে নেই।

একজন মানুষ অন্যজনকে ঠকিয়েছে সেখানে আমাদের টেনে আনছে কেন বুঝলাম না।
সুখ দুখের কথা বলতে বলতে হাঁটছিল শেয়াল পণ্ডিত আর ইদুর। পথেই গরুর সথে দেখা। সে তার বাছুরটাকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। শেয়াল পণ্ডিত তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো পিসেমশাই কোথায় চললেন? গরু বললো ছেলেটাকে মনু মাস্টারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ইদুর এবং শেয়াল পণ্ডিত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন নিয়ে যাচ্ছেন? গরু বললো সেদিন ঘাস খেয়ে ফেরার পথে মনু মাস্টারকে বলতে শুনেছে তিনি নাকি অনেক গরু পিটিয়ে মানুষ বানিয়েছে। কদিন পর কোরবানীর সময় আমার বাচ্চাটাকে হয়তো কোরবানি দিয়ে দেওয়া হতে পারে। তার আগেই যদি মনু মাষ্টার আমার বাছুরটাকে পিটিয়ে মানুষ বানিয়ে দেয় তাহলে আর ওকে কোরবানী হতে হবেনা।
ইদুর আর শেয়াল পণ্ডিত ভীষণ অবাক হলো। গরুকে তার গন্তব্যে যেতে দিয়ে নিজেরা হাটতে লাগলো। শেয়াল পণ্ডিত বললো এই সব নষ্টের মূলে দেখছি মানুষ। এদের মনে হয় কাণ্ডজ্ঞান নেই। যা খুশি বলে যাচ্ছে।রাগে গজগজ করে ইঁদুরও তার সাথে একমত পোষণ করলো।
ওই পথ দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছিল এক মহিষ। শেয়াল পণ্ডিত তাকে থামালো। জানতে চাইলো অমন ব্যাস্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছ? মহিষ বললো পণ্ডিত মশায় আর বলোনা খুব তেষ্টা পেয়েছিল তাই পাশের নদীর ঘাটে গিয়েছিলাম পানি খেতে। পানি খেয়ে যখন ফিরছি তখন কয়েকজনকে গল্প করতে দেখলাম। একজন অন্যজনকে বলছে দেখলি বাঘে মহিষে কিভাবে এক ঘাটে জল খাচ্ছে। চিন্তা করতে পারো আমি যখন পানি খাচ্ছিলাম পাশে নাকি বাঘও ছিল! কোন মতে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি!
শেয়াল পণ্ডিত মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তার কথা চিন্তা করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তাকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সে না ভাবলে কে ভাববে প্রাণীদের কথা।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!