হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১৩
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লোকটি বলল, তিনি তো সর্বত্রই বিরাজমান। আর সব কিছুই দেখতে পান।
হযরত বললেন, তুমি যার রুজি খাবে, যার রাজ্যে বাস করবে, তার সামনে বসে তাঁরই অবাধ্য হবে এর চেয়ে অপরাধ আর বিশ্বাসঘাতকতা আর কি আছে?
(৪) যখন মৃত্যুর দূত এসে উপস্থিত হবে তখন তার কাছ থেকে তওবা করার সময় চেয়ে নেবে।
লোকটি বলল, কিন্তু আজরাইল কি তাতে রাজি হবেন? হযরত বললেন, যদি সে কথা বুঝে থাক, তবে এখনই তওবা করে নাও।
(৫) মৃত্যুর পর যখন মুনকার-নকীর প্রশ্ন করতে আসবে, তখন তাদের তাড়িয়ে দিও। লোকটি বলল, তা কি সম্ভব?
হযরত আদহাম (রঃ) বললেন, তাই যদি বুঝে থাক, তাহলে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও।
(৬) রোজ কিয়ামতে আল্লাহ যখন পাপীদের জাহান্নামে নিয়ে যাবার জন্য ফেরেশতাদের হুকুম দেবেন, তারা তো আমাকে জোর করে নিয়ে যাবে হযরত ইব্রাহীম (রঃ) বললেন, তাহলে পাপ কাজ ছেড়ে দাও। তাঁর কথা শুনে লোকটি বলল, আপনি যা যা বললেন, তা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। হযরত বললেন, তাহলে তুমি সমস্ত পাপকর্ম পরিত্যাগ কর।
এবার লোকটি বলল, আমার জন্য তাহলে এ কাজটি করাই ভাল আর অন্যান্য কাজ অপেক্ষা এটি সহজতরও বটে। এই বলে সে তখনই তওবা করে যাবতীয় পাপকর্ম থেকে বিরত হয়ে পুণ্যময় জীবন যাপন করতে লাগল।
কিছু লোক তাঁকে বলল, আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, অথচ তা কবুল হয় না কেন? তিনি বললেন, তার কারণ, আল্লাহকে তোমরা ভালো করেই জান। অথচ তাঁর নির্দেশ পালন কর না। রাসূলুল্লাহকে জান ও বিশ্বাস কর। অথচ তাঁকে অনুসরণ কর না। কোরআন শরীফ তিলাওয়াত কর, অথচ তার ওপর আমল কর না। পুণ্যবানদের জন্য জান্নাত তৈরি হয়েছে। তোমরা তা ভালোভাবেই জান। অথচ নিজেরা পুণ্যবান হওয়ার মত কাজ কর না। পাপীদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি হয়েছে তাও তোমাদের জানা। অথচ পাপকর্ম থেকে তোমরা বিরত হও না। তোমরা জান, শয়তান তোমাদের শত্রু অথচ তাকে শত্রু মনে কর না। বরং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন কর। মৃত্যু
অনিবার্য তোমরা জান। অথচ তার জন্য তোমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। সন্তানরা পিতামাতাকে কাফন-দাফন করে আসছে, অথচ তোমরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করছ না। মন্দ স্বভাব সংশোধন করে উত্তম স্বভাব অবলম্বন করছ না। নিজেদের বদভ্যাস আছে। অথচ অন্যদের খুঁত ধরতে যাও। ভেবে দেখ, এই যাদের অবস্থা, তাদের প্রার্থনা কি করে আল্লাহর দরবারে কবুল হবে?
তুচ্ছ প্রশ্নেরও তিনি তত্বপুর্ণ উত্তর দিতেন।
একজন বলল, গোশতের দাম খুব বেড়ে গেছে। কি করা যায় হুজুর?
তিনি বললেন, গোশত খাওয়া বাদ দাও। তাতে দাম বাড়ুক বা কমুক, কিছু যাবে আসবে না।
হযরত ইব্রাহীম (রঃ) একবার আমন্ত্রিত হলেন। কিন্তু আমন্ত্রণ-স্থলে যেতে তাঁর কিছু দেরী হল। সবাই বলাবলি করতে লাগল, লোকটা ঐ রকমই। কথা দিয়ে কথা রক্ষা করার গুরত্ব বোঝে না। এমন সময়ে তিনি হাজির হলেন। কথাগুলি তাঁর কানে গিয়েছিল। বললেন, নিয়ম হচ্ছে, মানুষ প্রথমে রুটি মুখে পুরবে, তারপর গোশত কিন্তু তোমরা দেখছি, গোশত প্রথমে মুখে নিচ্ছ। অর্থাৎ একটু অপেক্ষা না করেই পরনিন্দা শুরু করে দিয়েছি।
জীর্ণ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় তিনি একবার এক হাম্মামখানায় প্রবেশ করলে সেখানকার লোকে সাধারণ এক ভিক্ষুক মনে করে তাকে বাধা দিল। তখন তিনি একটি চমৎকার কথা বলেন। গরীব লোকজনের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন শয়তানের ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই, তখন উপাসনা ছাড়া কী করে আল্লাহর ঘরে ঢোকা যেতে পারে?
একবার হজ্জ মৌসুমে একটানা তিনিদিন উপবাসে কাটল তাঁর। তখন শয়তান এসে বলল, বলখের বাদশাহী ছেড়ে এভাবে কষ্টভোগ ছাড়া আর কিছু পেয়েছ কি?
তিনি অভিমান-ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আল্লাহকে বললেন, প্রভু গো! আপনার এ বন্ধুর মনে কষ্ট দেবার জন্যই কি আপনি শয়তানকে পাঠিয়েছেন? আল্লাহর তরফ থেকে উত্তর এল, তোমার জামার পকেটে যা আছে ফেলে দাও। তাহলে এর কারণে বুঝতে পারবে। তিনি পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন, দুটি রূপার টাকা আছে। সঙ্গে সঙ্গে টাকা দুটি ছুড়ে ফেললেন, আর শয়তানও অদৃশ্য হয়ে গেল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া