হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৯
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দিনের বেলায় তাঁকে কুলি-মজুর মনে করা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কেননা, তিনি দিনে ঘাস কাটতেন মাঠে। আর তা বিক্রি করে রুটি কিনতেন। আর সে রুটিও দিয়ে দিতেন দরবেশের। আর রাতের বেলায় বিরামহীন এবাদত এটাই তাঁর কাজ।
লোকে জিজ্ঞেস করত, আপনার চোখে কি ঘুম আসে না? তিনি বলতেন, আল্লাহর আসক্তিতে আমার শান্তি লোপ পেয়ে গেছে। হৃদয়ে যার অশান্তি, তার ঘুম আসবে কি করে? নামাজ সম্পন্ন করে মুখের ওপর হাত রেখে বললেন, আল্লাহ না করুন, এ নামাজ যদি আমার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হয়, তাহলে কেমন হবে?
একদিন খাবার জুটল না। অনাহারে তিনি চার রাকাআত শোকরানার নামাজ পড়লেন। পরদিনও তাই। আর সেদিনও তিনি চার রাকাআত শুকরিয়া নামাজ পড়লেন। আর এ অবস্থায় আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, প্রভু গো! এখন কিছু খেতে দিলে ভালো হত। মোনাজাত শেষ হলে এক তরুণ এসে তাঁকে অতিথি হিসেবে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে সে তাঁর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে বলল, হুজুর! আমি আপনার পুরাতন ভৃত্য। আমার যা কিছু দেখছেন, সবাই আপনার। হযরত বললেন, কিন্তু আমি তো তোমাকে মুক্তি দিয়েছিলাম। তোমার যা কিছু, সবই তোমার। তুমিই এ সবের মালিক। যাক, যা হবার হয়েছে। এবার আমাকে যেতে দাও। বলে তখনই তিনি তাঁর আস্তানায় ফিরলেন। আর হাত উঠালেন আল্লাহর দরবারে।
প্রভু আমার ভুল হয়েছে। আর কখনও কোন কিছু চাইব না। আমি মাত্র এক টুকরো রুটি চেয়েছিলাম। আর আপনি রাজ্যের সম্পদ আমার সামনে ধরে দিলেন।
শিষ্যের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ও অনুরাগের একটি অবিস্মরণীয় উদাহরণ আছে। তাঁর এক শিষ্য অসুস্থ অবস্থায় শুয়েছিলেন এক পুরানো ভাঙ্গা মসজিদে। মসজিদের দরজা কপাটশূন্য। হু-হু করে হিমেল হাওয়া ঢুকছে ঘরে। দরজায় কিছু ঝুলিয়ে দিয়ে বাতাস আটকানো যাবে, তারও উপায় নেই। অথচ অসুস্থ লোকটিকে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। হযরত আদহাম (রঃ) নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়ে রইলেন দরজায় যতদূর সম্ভব ঠাণ্ডা বাতাস প্রতিহত করলেন। আর এইভাবে রাত ভোর হয়ে গেল।
আর একটি উদাহরণঃ
এক সফরে তাঁর ভ্রমণ সঙ্গী ছিলে হযরত সোহায়েল ইবনে ইব্রাহীম (রঃ)। হঠাৎ তিনি দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য হযরত আদহাম (রঃ) নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে দিলেন। এমনকি গাধাটিও। আর দেশে ফেরার সময় কিছুটা সুস্থ, দুর্বল সোহায়েল (রঃ) কে কাঁধে নিয়ে তিন দিনের পথ অতিক্রম করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া