হযরত আবু সাঈদ খাযযার (রঃ) – পর্ব ১
তাপস নগরী বাগদাদের আরও একজন সুযোগ্য সন্তান হলেন আবু সাঈদ খাযযার (রঃ)। সাধারণতঃ তিনি মারেফাতের ভাষ্যকর নামে পরিচিত। কেননা, সমকালে এ বিষয়ে তিনি ছিলেন সকলের শীর্ষে। তাঁর পাণ্ডিত্যও ছিল অসাধারণ। আধ্যাত্মিক বিষয়ে তিনি চারশ বই লিখেছেন। সেগুলো ইসলামের অমূল্য সম্পদ।
তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় হযরত যুননূরাইন (রঃ) ও হযরত বিশর হাফী (রঃ)-এর সান্নিধ্য-সংস্পর্শে। ফানা (ধ্বংস) ও বাকার (স্থায়িত্ব) তত্ব তিনিই সর্বপ্রথম বর্ণনা করেন। তাঁর মতামত তিনি উক্ত দুটি কথার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। মারেফাতের কিছু কিছু ব্যাপারে কোন কোন পণ্ডিত তাঁর বক্তব্য অস্বীকার করেন। এমনকি তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কুফরী অভিযোগও তোলেন। তাঁর একখানি বইয়ের নাম কিতাবুস সিররি- তত্ত্ব গ্রন্থ। এই বইয়ের কিছু কিছু কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।
ধর্মহীনতার অভিযোগের তাও একটি কারণ। যেমন, তিনি লিখেছিলেন, আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে সে আল্লাহ ব্যতীত সমগ্র সৃষ্টি এমনকি রিপু পর্যন্ত বিস্মৃত হয়ে যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেই তাহা স্থিত হয়। তখন যদি তাকে বলা হয়, তুমি কোথাকার লোক এবং কী কী কামনা করছ? তখন এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন, আল্লাহ, এমনকি তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে থাকবে, আল্লাহু জাল্লা জালালুহু। কেননা, এই শ্রেণীর সূফীগণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আল্লাহর জ্যোতির প্রেমে ডুবে যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এমন সীমায় পৌঁছায় যে, কেউ তাঁর সামনে আল্লাহ শব্দ উচ্চারণ করলেই তিনি আল্লাহর প্রেমে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন এবং ধারণা করেন যে, এই শব্দ দাসের নয়, বরং স্বয়ং মহান প্রভুর থেকে এসেছে। এখানে পৌছেই সমস্ত জ্ঞানীর জ্ঞানের ভরাডুবি ঘটে।
হযরত আবু সাঈদ (রঃ) কয়েক বছর সূফীদের সান্নিধ্যে থাকে। তখন তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোন মতবিরোধ ছিল না। পরে অবশ্য তিনি পৃথক হয়ে যান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কোন তাদের কাছে থাকার সামর্থ্য দেখতে পাইনি।
একবার রাসূলে কারীম (সাঃ) তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাকে ভালোবাস? তিনি জবাব দেন, মাফ করবেন, মহান প্রভুর ভালোবাসায় নিমগ্ন হয়ে অন্য যেকোন দিক থেকে আমি গাফেল হয়ে পড়েছি। রাসূল (সাঃ) বললেন, সে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসে, সে আমাকেও ভালোবাসে।
একবার তিনি শয়তান ইবলিসকে স্বপ্নে দেখে তাকে মারার জন্য লাঠি তোলেন। তখন অদৃশ্যবাণী আএস, ইবলিস লাঠিকে ভয় পায় না। বরং ভয় করে বিশ্বাসীদের অন্তর জ্যোতিকে। তখন আবু সাঈদ (রঃ) ইবলিসকে তাঁর কাছে ডেকে বসতে বললেন। ইবলিস বলল, আর বসে কাজ নেই। কারণ, যে বস্তু দিয়ে আমি মানুষ প্রবঞ্চিত করি, আপনি আপনার অন্তর থেকে তা বের করে দিয়েছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বস্তুটি কি? ইবলিস বলল, তা হল দুনিয়া। দুনিয়াত্যাগীরা আমার ছলনায় ভোলে না। অবশ্য আপনার যখন দুটি পুত্র আছে, তখন কোন না কোন সময় আপনি আমার ফাঁদে পড়বেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া