হযরত আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ) – শেষ পর্ব
একবার হযরত আমর ইবনে ওসমান (রঃ) তাঁর এক অসুস্থ তরুণ বন্ধুকে দেখার উদ্দেশ্যে ইস্পাহানে যান। তরুণ তাঁকে দেখে বললেন, আপনি একজন কাওয়ালকে ডাকুন। তিনি আমাকে দু’ছত্র গজল শুনিয়ে দিন। আশা করি, তাতে আমি আরোগ্য লাভ করব।
বন্ধুর ইচ্ছাক্রমে একজন গজল গায়ককে ডেকে আনা হল। হযরত আমর (রঃ) তাঁকে বললেন, আপনি আমার এই আরবী কবিতাটি একবার পাঠ করে আমার বন্ধুকে শুনিয়ে দিন।
এই বলে তিনি কবিতাটি শোনালেনঃ
আমার অসুখের দেখা দিয়েছে, কিন্তু তোমাদের
কাউকেই আমি শুশ্রুষাকারীরূপে দেখতে পেলাম না।
কিন্তু তোমাদের কেউ যদি রোগাক্রান্ত হত, (তা হলে) আমি
সদা-সর্বদা তাঁর শুশ্রুষায় নিয়োজিত থাকতাম।
কাওয়াল কবিতাটি অসুস্থ যুবককে আবৃতি করে শোনানো মাত্র তার অসুখ সম্পূর্ণ রূপে সেরে গেল। হযরত আমর ইবনে ওসমান (রঃ)-এর এই অলৌকিক ক্ষমতা দেখে যুবকটি পিতা পুত্রকে তাঁর হাতেই তুলে দিলেন, যেন সে সত্যিকারের একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। কথিত আছে, সুযোগ্য শিক্ষাগুরুর সাহচর্য লাভ করে যুবকটি অচিরেই বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তিতে পরিণত হন।
আফামান শারাহাল্লাহু সারারাহু লিল ইসলাম- এই কালামটির অর্থ জানতে চাইলে হযরত আমর (রঃ) বলেন, যখন দরবেশের দৃষ্টি আল্লাহ পাকের জ্ঞান, শান-শওকত, তওহীদ, শক্তিমত্তা, সার্বভৌমত্ব প্রভৃতির ওপর পতিত হয়, তখন বুকখনি এমন বড় হয়ে যায় যে, তার কাছে সবকিছু তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র বলে প্রতিভাত হয় এবং দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিটি পার্থিব বস্তু ম্লান ও নিষ্প্রভ দেখায়, খুব ক্ষীণ হয়ে ভাসতে থাকে।
তাঁর উপদেশবাণীসমূহঃ
১. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বিরাটত্ব ও মহান গুণাবলী বিষয়ে মনে বিন্দুমাত্র সংশয় রাখা উচিত নয়। কেননা, এর চিন্তা-ভাবনা মানুষকে ধর্মহীনতার দরজায় পৌঁছে দেয়।
২. প্রেম-প্রণয় আত্মনিবেদনেরই অন্তর্গত। কেননা, মানুষ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়, তার সঙ্গেই তো ভালোবাসার সম্পর্ক পাতায়। এই জন্য ভালোবাসা ও প্রণয়কে পরস্পর পৃথক করা যায় না। আবার, যেখানে খুশী বা সন্তুষ্টি নেই, সেখানে প্রেমে ওর কোন সম্ভাবনা নেই।
৩. দাস তারই সঙ্গে প্রেম করে, যে ছাড়া অন্য কেউ প্রেমের যোগ্য নয়।
৪. সব রকমের বিপদ-আপদ ও দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও আল্লাহর আদেশের ওপর সুদৃঢ় থাকাকে বলে সবর বা ধৈর্য।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আমর ইবনে ওসমান মক্কী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন