হযরত শাহ গুজা কেরমানী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত শাহ গুজা কেরমানী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিশ্চয় আমার তওবার সময় এসে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভেঙে ফেললেন সখের বাদ্য-যন্ত্র। আর সেদিন থেকেই নিমগ্ন হলেন আল্লাহর ধ্যানে। অচিরেই তিনি পৌঁছে গেলেন সাধনার এমন এক স্তরে যে, তাঁর পিতা বললেন, চল্লিশ বছরের সাধনা করে তিনি যা লাভ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশী মর্যাদা লাভ করেছেন তাঁর তরুণ-পুত্র-মাত্র চল্লিশ দিনের সাধনায়। হযরত শাহ গুজা (রঃ)-এর এক সর্বগুণে গুণান্বিতা ধর্মনিষ্ঠ কন্যা ছিল।
তাঁর পানি গ্রহনের ইচ্ছা পোষণ করতেন দেশের বিত্তশালী মানুষ, ধনীর দুলাল। স্বয়ং কেরমানের বাদশাহও তাঁদের একজন। তিনি বিবাহের প্রস্তাব রাখলেন শাহ গুজা (রঃ)-এর কাছে। প্রস্তাবটি ভেবে দেখার জন্য শাহ গুজা (রঃ) তিন দিন সময় নিলেন। আর তিন দিন ঘুরে বেড়ালেন মসজিদে মসজিদে-যদি কোন ধর্মভীরু যুবকের সন্ধান পান। সম্পদশালীর ঘরে মেয়ে দিতে তাঁর মন চাইছে না।
এক মসজিদে দেখলেন, এক তরুণ দরবেশ নামাজ পড়ছেন নিবিষ্ট হয়ে। তিনি তাঁকেই জিজ্ঞেস করেন, তোমার বিয়ে হয়েছে?
দরবেশ উত্তর দিলেন, জ্বী না।
কোন পুণ্য-ময়ী পাত্রী পেলে বিয়ে করতে রাজি আছ কি?
কে আমাকে কন্যা দিবে। সম্বল বলতে আমার রয়েছে মাত্র তিন দেরহাম।
আমি দেব। তুমি এক দেরহাম দিয়ে আতর নিয়ে এস। এক দেরহাম দিয়ে রুটি। আর এক দেরহাম দিয়ে মিঠাই। বিবাহ হয়ে গেল।
স্বামীর বাড়িতে সোরাহীর মুখে শুকনা রুটি দেখে কন্যা জিজ্ঞেস করলেন, এ রুটি কিসের? স্বামী বললেন, গতকালের উদ্বৃত্ত রুটি। আজ খাব বলে রেখে দিয়েছি।
মর্মাহত কন্যা বললেন, আপনি আমাকে বাপের বাড়িতে রেখে আসুন। তরূণ স্বামী বললেন, একথা আমি আগেই বলেছিলাম। শাহ সাহেবের কন্যা আমার মতো গরীবের বাড়িতে কিছুতেই থাকবেন না। শাহ কন্যা বললেন, আপনি ভুল করছেন। অভাবের কারণে আমি পীড়িত নই। আমার দুঃখ আপনার ঈমান বড় দুর্বল। আপনি কী খাবেন, তা চিন্তা করে আগেই ব্যবস্থা করে রাখেন। আল্লাহর প্রতি আপনার নির্ভরতা কই? বিশ বছর ধরে আমার পিতা আমাকে ঘরে রেখেছিলেন, কোন ধর্মভীরুর হাতে তুলে দেবেন বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন লোক মিলল, যার কোন আল্লাহ নির্ভরতা নেই।
স্ত্রীর কথায় স্বামীর চৈতন্যোদয় হয়। তিনি সত্যিই ভুল করছেন। কিন্তু এ ভুল সংশোধনের উপায় কি? স্ত্রী বললেন, ঘর থেকে ঐ রুটি ফেলে দিন। আর তা যদি না পারেন তো ঘর থেকে আমাকেই বাদ দিন। স্ত্রীর কথায় দরবেশ ঐ রুটি অন্যকে দিয়ে দিলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া