হযরত আবু তুরাব বলখী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত আবু তুরাব বলখী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অতঃপর বৃদ্ধ তাঁকে বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। খাবার পরিবেশন করা হলে দেখা গেল গরম রুটিও আছে, আবার ডিম ভাজাও আছে। হযরত তুরাব (রঃ) ডিম রুটির দিকে যেই হাত বাড়ালেন, অমনি অদৃশ্য শব্দ শোনা গেল, মনে রেখ, দুশ’ ঘা বেত খাওয়ার পর এ খানা পেয়েছ। এখন খাও। ভবিষ্যতে যখনই তোমার মনে কান বাসনা জাগবে, তখনই এরূপ শাস্তি গ্রহণ করা ছাড়া তা কখনও পূর্ণ হবে না।
একবার হজ্জ যাত্রার সময় তিনি ও হযরত আবুল আব্বাসসহ বেশ কয়েকজন লোক মরুপ্রান্তর অতিক্রম করছেন। পান ও ওযু করার জন্য পানির প্রয়োজন দেখা দিল। সঙ্গে যে পানি ছিল, তা ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু খোঁজ করে কোথাও পানি মিলল না। তখন সেটা জানানো হল আবু তুরাব (রঃ)-কে। তিনি মাটির ওপর পা দিয়ে একটি দাগ টানলেন। আর অমনি একটি ঝরণার সৃষ্টি হল। পানির প্রয়োজন মিটল। একজন পেয়ালায় পানি পান করার ইচ্ছা প্রকাশ করল হযরত আবু তুরাব (রঃ) মাটির ওপর হাত দিয়ে একটি আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে থেকে কয়েকটি সাদা পেয়ালা বের হয়ে এল। লোকটির ইচ্ছা পূরণ হল। হযরত আবুল আব্বাস (রঃ) মক্কা শরীফে, পৌছানো পর্যন্ত পেয়ালাগুলো তাঁদের সঙ্গে ছিল।
হযরত আবু তুরাব (রঃ) আবুল আব্বাস (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, দরবেশদের কাশফ কারামত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, খুব কম লোকই এর ওপরে বিশ্বাস রাখে। তাঁর এ জবাব শুনে হযরত আবু তুরাব (রঃ) বললেন, যিনি ঈমানদার, তিনি এ দুটি বিশ্বাস না করে পারেন না।
এক গভীর অরণ্যে এক হাবশীর সঙ্গে হযরত তুরাবের (রঃ) দেখা হয়। তিনি ভীত স্বরে বললেন, আপনি কী মানুষ না জ্বিন? হাবশী তার জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি কী মুসলমান না কাফের? হযরত তুরাব (রঃ) বললেন, আমি মুসলমান। তখন হাবশী বললেন, মুসলমান তো কখনও আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতে পারে না। হযরত তুরাব (রঃ) বুঝলেন, তাঁকে সতর্ক করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ঘটনাটির অবতারণা করা হয়েছে।
এক নির্জন প্রান্তরে এক দরবেশের সঙ্গে হযরত আবু তুরাব (রঃ)-এর দেখা। দরবেশের সঙ্গে পাথেয় কিংবা কোন মাল-পত্র নেই। অথচ তিনি সফরে বেরিয়েছেন। এ বিষয়ে দরবেশকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন, আল্লাহ্ যাদের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের আবার অন্য জিনিসের কী দরকার?
হযরত আবু তুরাব (রঃ) পুরো একটি বছর কারো কাছে কিছু চাননি। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, আমার যখনই যা কিছুর দরকার হয়েছে, আল্লাহ্র কাছ থেকে তা গ্রহণ করেছি। আর যখন দরকার হয়নি তখন কিছুই চাইনি। তিনি বলতেন, মানুষ যদি সত্যনিষ্ঠ হয় তাহলে পুণ্য কর্ম করার পূর্বেই সে তার স্বাদ পেয়ে যায়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া