হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ৪
হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মহানবীর বংশধরগণের প্রতি তাঁর ভক্তি ও সম্ভ্রমবোধ ছিল অসাধারণ। আর এ ভক্তির সূত্রপাত বাল্যকালেই। শোনা যায়, পাঠ্যজীবনে তিনি একবার পড়াশুনা করছেন। নবী বংশী এক ছেলে দরজায় খেলা করছিলেন। তিনি যতবারই তাঁর সামনে এসেছেন, ততবারই তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হুযুর (সাঃ)- এর বংশের লোক আমার সামনে আসবে আর আমি বসে থাকব, এটা শোভনীয় নয়।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) জীবনে কখনও হারাম রুজি খাননি। একবার এক সৈনিকের আতিথ্য গ্রহণ করে তিনি তাঁর বাড়ীটে খান। পরে এর প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ একটানা চল্লিশ রাত ভোর পর্যন্ত নামাজ আদায় করেন।
অত বড় জ্ঞানী ও সাধক হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে অতি ক্ষুদ্র মনে করতেন। একবার এক ধনী ব্যক্তি মক্কার সাধক-দরবেশগণের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু টাকা পাঠান। তিনি তা গ্রহণ করেননি এই বলে যে, তিনি তেমন পুণ্যবান সাধক নন।
রোমের খ্রীষ্টান শাসক বাগদাদের খলীফা হারুনুর রশীদকে ফি-বছর বার্ষিক কর পাঠাতেন। একবার তিনি কিছু তত্ত্বজ্ঞানী পাদ্রী পাঠিয়ে খলীফাকে বললেন, আমার পাদ্রীগণের সঙ্গে আপনার পণ্ডিতগণ যদি তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাঁদের হারিয়ে দিতে পারেন, তাহলে আমি নিয়মিত কর দেব। আর তা যদি না পারেন, তবে কর দেওয়া বন্ধ করা হবে। রোম থেকে চারশ পাদ্রী এসেছিলেন। খলিফা এই আহবানে সাড়া দিয়ে বিখ্যাত পন্ডিতগণকে সমবেত করে তর্কানুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। তর্ক বসল দজলা নদীর তীরে। মুসলিম আলেমগণের নেতৃত্ব করার জন্য হযরত শাফেয়ী (রঃ)- কে বলা হল। তিনি তর্কসভায় উপস্থিত হয়ে দজলা নদীর পানির ওপর জায়নামাজ বিছিয়ে বসলেন। আর ডাক দিলেন খ্রীষ্টান পাদ্রীদের। আসুন, আমরা এখানে বসেই আলোচনা আরম্ভ করি। কিন্তু এই অলৌকিক কান্ড দেখে তারা আর তর্কযুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন না। শুধু তাই নয়, সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেন। আর এ খবর যখন রোম সম্রাটের কাছে গিয়ে পৌঁছাল, তখন তিনি বললেন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, এদেশে তর্কের স্থান নির্ধারিত হয়নি। তাহলে হয়ত দেশের সব খ্রীষ্টান মুসলমান হয়ে যেত।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া