হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ প্রতি একশ বছরের মাথায় একজন ধর্মজ্ঞানীকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, আর তিনি ধর্মবিষয়ে পৃথিবীর মানুষকে শিক্ষা দেন। হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এমনই একজন আশীষ-প্রাপ্ত মানুষ-মহাজ্ঞানী, মহা-তাপস। তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু হযরত সলীম রায়ী (রঃ)।
উপযুক্ত মায়ের উপযুক্ত সন্তান তিনি। তাঁর বিদূষী জননীকে দেশের লোক যেমন শ্রদ্ধা করতেন, তেমনি বিশ্বাসও করতেন। অনেকে তাঁর কাছে অনেক কিছু আমানত রাখতেন। একবার দুজন লোক কাপড় ভর্তি একটা বাক্স রাখলেন। কিছু দিন পর একজন এসে তা নিয়েও গেলেন। কিন্তু আবার কিছুদিন পর অন্যজন এসে আবার বাক্স চাইলেন। তাঁকে বলা হল, তাঁর সাথী বাক্সটি নিয়ে গেছেন। তখন তিনি বললেন, আমরা দুজনে যে জিনিসটা রাখলাম, আপনি তা একজনকে দিলেন কিভাবে?
বলা বাহুল্য ইমাম-জননী খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তাঁর লজ্জার সীমা রইল না। ইমাম ঘটনাটি শুনে এক মুহূর্ত কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, কিন্তু আপনিই বা বাক্স নিতে একা এলেন কেন? আপনার সঙ্গীকেও আনতে হবে। তাঁর কথা শুনে বেচারা চুপ করে গেলেন। আর নিঃশব্দে চলে গেলেন সেখান থেকে।
তাঁর সর্বজনবিদিত গুরুর নাম ইমাম মালেক (রঃ)। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) যখন তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স প্রায় সত্তর। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) তাঁর পীরের বাসভবনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেন দারোয়ানের মতো। কেউ কোন ফতোয়া লিখে নিয়ে যখন বেরিয়ে যেতেন, তখন তিনি দরজায় বসে তা গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ে পড়ে দেখতেন। কোন অসঙ্গতি চোখে পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আবার ভেতরে ইমাম মালেক (রঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে দিতেন, যেন তিনি সেটি আবারও পরীক্ষা করে দেখেন। আর ইমাম মালেক (রঃ) বুঝতে পারতেন তাঁর শিষ্যই ঠিক। বলাবাহুল্য শিষ্যের যোগ্যতায় তিনি যেমন আনন্দ, তেমনি গর্ববোধ করতেন।
বাগদাদের সিংহাসনে তখন খলীফা হারুনুর রশীদ। এক রাতে বেগম যোবায়দার সঙ্গে তাঁর তুমুল ঝগড়া। বেগম তো খলীফাকে বলেই বসলেন, জাহান্নামী। বাদশাহও কম যান না। পত্নীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে তিনিও বললেন, যদি আমি জাহান্নামী হই, তবে তুমি তালাক। আর এরপরেই তাঁরা পরস্পরে পৃথক হয়ে গেলেন। ডাক পড়ল বাগদাদের বিজ্ঞজনের। সমস্যাটা তাঁদের সমীপে পেশ করা হল। সবাই বলতে লাগলেন, বাদশাহ জাহান্নামী না জান্নাতী, তা আমরা জানব কী করে? অথ্যাৎ সমস্যার সমাধানে সূত্র পাওয়া গেল না।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া