হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) – পর্ব ১
অল্প বয়সী একটি ছেলে-বয়সের তুলনায় রীতিমতো গম্ভীর আর ভাবুক। কোথাও বড় একটা যায় না। কোন দাওয়াত কিংবা অনুষ্ঠানেও যায় না। চুপচাপ বসে থাকে নির্জনে। আর কত কী ভাবে। সেই ছেলে একদিন এক অপূর্ব স্বপ্ন দেখল। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন, হে বালক! তুমি কে? বালক উত্তর দিল, ইয়া রাসূলুল্ললাহ, আমি আপনার এক অধম উম্মত।
তিনি তখন তাঁকে কাছে ডাকলেন। আর তাঁর পবিত্র মুখের লালা বালকের মুখে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, যাও, তুমি আল্লাহর বরকত লাভ করবে। ঐ রাতে সে আর একটি স্বপ্ন দেখল। হযরত আলী (রঃ) তাঁর হাতের আংটি খুলে তাঁর আঙ্গুলে পরিয়ে দিল।
এমন পরম সৌভাগ্যবান বালক পরবর্তীকালে বিশ্বজোড়া খ্যাতির অধিকারী হন। পৃথিবী তাঁকে জানে হযরত ইমাম শাফেয়ী (রঃ) নামে। মাত্র তেরো বছর বয়সেই তিনি ঘোষণা করেন, কারোর কিছু জানার থাকলে তাঁর কাছে জেনে নিতে পারে। আর পনেরো বয়সেই তিনি ফতোয়া দিতে শুরু করেন।
শরীয়ত ও মারেফত সমুদ্রের তিনি এক সফল ডুবুরী। হাকীকত ও তরীকতের ক্ষেত্রেও মণিপূর্ণ খনি। হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর মতো অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ ব্যক্তিও তাঁকে প্রচুর সম্মান দিতেন। অনেক সময় তা দৃষ্টিকটু দেখাতো বলে কেউ কেউ বলতেন। একজন বয়ঃকনিষ্ঠ ব্যক্তিকে এমন সম্মান প্রদর্শন শোভনীয় নয়। হযরত আহমদ (রঃ) বললেন, তিনি আমার চেয়ে অনেক বেশী জানেন। আর তাঁর সাহচর্যে থেকেই আমি হাদীস শাস্ত্রের বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যা শিখেছি। তিনি না থাকলে, আমি জ্ঞানের দরজায় শুধু দাঁড়িয়ে থাকতাম।
ভেতরে যাওয়া সম্ভব হত না। আর ফেকাহ বিদ্যার দরজা চিরতরে বন্ধ থাকত। আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর মতে, ইসলামে ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর অবদানই সর্বাপেক্ষা বেশী। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)-এর মতে, যদি ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর জ্ঞান এক পাল্লায় আর পৃথিবীর অর্ধেক লোকের জ্ঞান অন্য পাল্লায় চড়ানো হয়, হযরত শাফেয়ী (রঃ)-এর পাল্লাই ভারী হবে। হযরত বেলাল খাস (রঃ) বলেন, আমি হযরত খিজির (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন, শাফেয়ী (রঃ) এক বিশেষ শ্রেণীর ওলীদের অন্তর্ভুক্ত।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া