বেবি ইয়িংলিয়াং ই কি তাহলে একুশ শতকের জুরাসিক পার্ক?

৯০দশকের জেনারেশনের কাছে জুরাসিক পার্ক ছিল সবার প্রিয় মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম! কারণ প্রধান আকর্ষণ ছিল বিলুপ্তপ্রায় ডায়নোসর। এই ডায়নোসরই কি তাহলে দেখা মিললো বর্তমান যুগে?চলুন জেনে আসি  আজকের ব্লগ থেকে।

২০২১ এর ডিসেম্বরে জীবাশ্মিত একটি ডিমের ভেতর অবিশ্বাস্যভাবে সংরক্ষিত একটি ডায়নোসরের ভ্রূণ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। চীনের গানঝৌ,জিয়াংসি প্রদেশে পাওয়া যায়।এটি ছিল প্রায় ৬৬থেকে ৭২ মিলিয়ন বছর পুরনো।ওভিরাপ্টরোসর(Oviraptorosaur) প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এই ভ্রূণটি পালকযুক্ত থেরোপড ডায়নোসরদের একটি গোষ্ঠী।  এটি আধুনিক পাখিদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও বটে!

কার্ল্ড অবস্থায় অর্থাৎ curled posture বা মোড়ানো অবস্থায় ভ্রূণটির মাছা ছিল নিচের দিকে,পিঠ ছিল বাঁকা এবং পা দুইটির অবস্থান ছিল দু’পাশে। ভঙ্গিটিকে বলা হয় tucking( টাকিং), যা আধুনিক পাখির ভ্রূণগুলোর বৈশিষ্ট্যের সাথে হুবুহু মিলে যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডায়নোসরের সময় থেকেই চলে আসা পাখির ডিম ফুটবার আগের এই ভঙ্গিটি একটি স্বাভাবিক আচরণ।

বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

একুশ শতকের প্রথম দশকের দিকে আবিষ্কৃত এই জীবাশ্মটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সংরক্ষণাগারে ছিল৷ পরবর্তীতে ইংলিয়াং স্টোন নেচার হিস্টরি মিউজিয়ামের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অবিশ্বাস্য ভাবে ভেতরে একটি ভ্রূণ খুঁজে পান।ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফসিলটির কোনরকম ক্ষতি এবং বিলুপ্তির আশংকা ছাড়াই বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে কাজ করেন।

 

বেবি ইয়িংলিয়াং নিয়ে কিছু তথ্য

বিশ্বের সবচেয়ে সংরক্ষিত ডায়নোসরের ভ্রূণগুলোর মধ্যে অন্যতম এই বেবি ইয়িংলিয়াং ২৭ সেন্টিমিটার লম্বা। এটি ১৭ সেন্টিমিটার ডিমটির মধ্যে আধুনিক পাখির ভ্রূণের মতো মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি ওভিরাপ্টরোসর প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত যা আধুনিক পাখিদের সাথে অতিমাত্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ৬৬-৭২মিলিয়ন বছর পুরনো,অর্থাৎ ক্রিটেসিয়াস যুগের(Cretaceous Period)।

ওভিরাপ্টরোসর

ওভিরাপ্টরোসররা ছিলো পাখির মতো দেখতে থেরোপড ডায়নোসর।এরা ক্রিটেসিয়াস যুগে বসবাস করতো। তাদের পালক থাকা সত্ত্বেও তারা ছিল অবৈধ পাখি।ছিল চঞ্চু আকৃতির মুখ,অনেকের মুখে দাঁত ছিলোনাওভিরাপ্টরোসর

ওভিরাপ্টরোসররা ছিলো পাখির মতো দেখতে থেরোপড ডায়নোসর।এরা ক্রিটেসিয়াস যুগে বসবাস করতো। তাদের পালক থাকা সত্ত্বেও তারা ছিল অবৈধ পাখি।ছিল চঞ্চু আকৃতির মুখ,অনেকের মুখে দাঁত ছিলোনা।শক্তিশালী এবং দ্রুতগামী পা ছিলো এবং তারা আধুনিক পাখিদের মতো নিঃসঙ্গভাবে ডিম ফুটাতে পারতো।এদের মধ্যে ওভিরাপ্টর প্রজাতি ছিল “ডিম চোর” বলে বিখ্যাত।যদিও পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন তারা নিজেদেরই ডিম রক্ষা করছিল,চুরি নয়।এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় ওভিরাপ্টরোসররা পাখিদের মতোই নিজেদের ডিমের দেখভাল করতো ও যত্ন নিতো।

মূলত ডায়নোসরের এই ফসিলটির আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের সামনে এর প্রজনন এবং হ্যাচিং পদ্ধতি নিয়ে নতুন দিকের সূচনা করে দেয়। ডায়নোসররা তাদের ডিম কিভাবে রাখতো এবং হ্যাচিং করতো -তা এখান থেকে সহজেই বের করা সম্ভব হয়েছে।আধুনিক পাখি এবং ডায়নোসরের মধ্যে তাদের ভ্রূণ বিকাশের তুলনা সহজসাধ্য কাজ।এটি আধুনিক পাখিদের বিবর্তন নিয়ে আরো শক্তিশালী ভূমিকা দেয়।২০২১ এর পর থেকে বিজ্ঞানীরা বেবি ইয়িংলিয়াং এর উপর আরো গবেষণা শুরু করেছেন।তারা অনান্য ডায়নোসরের ভ্রূণ এবং আধুনিক পাখিদের ভ্রূণ তুলনা করছেন,যাতে ডায়নোসরের ডিম ফুটানোর প্রক্রিয়া জানা যায়।

লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে কিভাবে? বিজ্ঞানের মজাদার ব্যাখ্যা!

জেনে নিন ঘরে বসে ইনকামের ৭টি উপায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *