হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২৩
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর দীদারে ইলাহীর স্বরূপ
হযরত বায়েজীদ (রঃ) একদিন আল্লাহ্ পাককে স্বপ্নে দেখলাম। আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মনের ইচ্ছা কি? তুমি কি চাও?
বায়েজীদ (রঃ) বললেন, প্রভু আমার! আপানার ও আমার ইচ্ছার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তখন প্রভু বললেন, তাহলে আমি যেমন তোমার, তেমনি তুমিও আমার হও। বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আপনার দিকের পথ আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহ্ বললেন, আমিত্ব বর্জন কর। পথ মিলে যাবে। তিনি প্রভুর নির্দেশ মেনে নিলেন।
অতঃপর তিনি একাগ্র চিত্তে তাঁর দিকে চোখ মেলে চাইলেন। আল্লাহ্ তাঁকে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করলেন। আলোকিত করলেন তাঁর জ্যোতি দিয়ে। বহু গুঢ় কথা কাছে ব্যক্ত করলেন। তাঁর গরিমা ও শান-শওকত দেখালেন। তখন হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁর নিজের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন, আল্লাহ্ পাকের গরিমাময় ঐশ্বর্য্য আর আভিজাত্যের তুলনায় তাঁর নিজের গৌরব অতি নগণ্য ও নিষ্প্রভ। সে তুলনায় তাঁর জ্যোতিও অনুজ্জ্বল।
বায়েজীদ (রঃ)-এর সম্মান মর্যাদা তাঁর প্রতিপালকের সম্মান- মর্যাদার কাছে নিতান্ত হেয় প্রতিপন্ন হল। কিন্তু আরও গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেলেন যে, তাঁর নিজের নূর তারই নূর থেকে, সম্মানও তারই সম্মান থেকে। তিনিই তো সব কিছুই উৎস। তিনি নিবেদন করলেন, প্রভু গো! এ কী ব্যাপার? প্রভু বললেন, হ্যাঁ তাই। সব কিছুই আমি এবং সব কিছুই আমার। আমি ও আমার ছাড়া কোন কিছু নয় ও কোন কিছুই নেই। শুধু কাজটি তোমার দ্বারা প্রকাশ পায় মাত্র। আর তা করার শক্তি, সাধ্য ও সরলতা আমার দ্বারাই ঘটে।
অতঃপর তাঁর প্রভু তাঁর অর্ন্তদৃষ্টি ও বহিদৃষ্টি ঢেকে দিলেন। আর এ অবস্থায় তিনি তাঁর তৌহীদের রূপ প্রদর্শন করলেন তখন হযরত বায়েজীদ (রঃ) আমিত্ব বিসর্জন দিয়ে হৃদয়কে সঞ্জীবিত করলেন। এবার প্রভু খুব দয়া করে তাঁর গুপ্ত তত্ত্বে তাঁকে প্রকাশ্য জ্ঞান দান করলেন। আর এই জ্ঞানের দ্বারা তিনি তাঁকে অনুভব করলেন অর্থাৎ তাঁর দীদার লাভে ধন্য হলেন।
এবার তাঁর পার্থিব কামনা-বাসনা নির্মূল হল। আর এভাবে সব কিছু পরিহার ও পরাভূতঃ করে তিনি কিছু দিন একা একা কাটিয়ে দিলেন।
অতঃপর দয়াময় প্রভু তাঁর প্রতি আরও দয়াপরবশ হলেন। তিনি তাঁর নূর দিয়ে হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর চোখ দৃষ্টি করলেন। আর তা দিয়ে তিনি সমগ্র সৃষ্টিকে প্রত্যক্ষ করলেন।
তারপর তারই প্রদত্ত জ্ঞান বলে তিনি তাঁরই কাছে নিবেদন করলেন, প্রভু গো! আমি আপনাকে ছাড়া অবস্থান করব তা আমার কাম্য নয়, আমি অস্তিত্বে সন্তুষ্ট নই। প্রভু! আমাকে আপনি ‘আমি’ ছাড়া করে রাখুন।
প্রভু বললেন, তা উত্তম। কিন্তু শরীয়তের সীমা রক্ষা করে চল। আদেশ নির্দেশের সীমা লঙ্ঘন করো না। তবেই তোমার সাধনা সফল হবে।
তাঁর দাস বললেন প্রভু আমি তো নিজে কিছুই জানি না, বুঝি না। একেবারেই অজ্ঞ। আপনিই আমাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করুন।
প্রভু প্রশ্ন করলেন, এ কথা তুমি কোথায় শিখলে?
দাস উত্তর দিলেন, প্রশ্ন কর্তাই তা বেশী জানেন। কেননা, এ প্রশ্ন ও জবাব তাঁরাই।
ক্রমে ক্রমে মনে হল, প্রভু তাঁর ওপর খুশী হয়েছেন। তিনি দাসের মনে আনন্দের ঢেউ তুলে দিলেন। তারপর বললেন, তোমার মনে যে বাসনা রয়েছে তা প্রকাশ কর।
তাঁর উত্তর, প্রভু গো! আমার বাসনা তো শুধুই আপনি। আমি কেবল আপনাকে চাই। আর কিছুই আমার কাম্য নয়।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে প্রভু বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। তুমি আল্লাহ্রই প্রত্যাশী। আর এ জন্যেই দেখতে ও শুনতে পেলে।
দাস বললেন, তা আমার ক্ষমতার নয়। বরং তা প্রভুর ইচ্ছায় ঘটেছে। তারপর তিনি তাঁর মহান প্রতিপালকের প্রশংসা করলেন।
এবার প্রভু তাঁকে তাঁর গৌরবের পাখা দান করলেন। মাথায় পরিয়ে দিলেন গৌরবের তাজ। আর গৌরবের পাখায় ভর করে তিনি গৌরবের আকাশে উড়তে লাগলেন। প্রভুরই সাহায্যে তাঁর অপূর্ব গুণাবলী অবলোকন করলেন। তিনি এবার তাঁর একত্বের দুয়ার খুলে দিলেন। আর তাঁর দপ্তরে দাসের নামও নথি-বন্ধ করলেন। এবার তাঁর কাছে প্রভুর তোহীদ আবিষ্কৃত হল।
অতঃপর তাঁর প্রতিপালক বললেন, এখন আর কেউ তোমার ভেতরে আমিত্বের লক্ষণ দেখবে না। তারপর এক পরীক্ষায় আগুনে পুড়িয়ে পবিত্র করে তিনি তাঁর দাসকে জিজ্ঞেস করলেন, বল, এ দুনিয়া কার? বল এ রাজত্ব কার?
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ২৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন