হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৬
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একজন কেউ হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর কাছে দোয়া চান। তিনি আল্লাহকে বললেন, প্রভু গো! আপনার দাস আমাকে উসিলা করে আপনার নিকট প্রার্থনা করছে। তার মনের ইচ্ছা কী আপনি জানেন প্রভু। আল্লাহ্ হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর প্রার্থনা মঞ্জুর করতেন।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) হেঁটে চলেছেন রাজপথ ধরে। হঠাৎ তাঁর এক ভক্ত এসে পদচিহ্নের ওপর পা ফেলে ফেলে পেছনে পেছনে আসতে লাগল। আর বলতে লাগল, একেই বলে মুরশিদের কদমে চলা বা প্রকৃত অনুবর্তিতা। কিছুক্ষণ পর অনুসরণকারী নিবেদন করল, আপনি আপনার ছেড়া কম্বলের একটি দান করুন। আশা করি তাঁর বরকতে আমি উপকৃত হব।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তোমার দুটো কথা ও দুটো ধারণাই ভ্রান্ত। প্রকৃত অনুবর্তিতা হল কথা ও কাজের চর্চা করা। কম্বলের টুকরো চাওয়াও অবান্তর। যতক্ষণ না তুমি আমলের মতো আমল করছ, ততক্ষণে কম্বল তো দূরের কথা, আমার পায়ের চামড়া তুলে নিলেও তা কোন কাজে আসবে না।
একদিন তিনি রাস্তায় দেখলেন, এক পাগল বারবার আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বলছে, প্রভু! আমার ওপর কৃপা বর্ষণ কর। তিনি পাগলকে বললেন, তুমি এমন কি পুণ্য করেছ যার দ্বারা আল্লাহ্র কৃপা কামনা করছ? পাগল বলল, প্রভুর কৃপা বর্ষিত হলেই তো আপনা থেকে পুণ্যচর্চা শুরু হয়ে যাবে। বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তোমার এ কথাটি অবশ্যই অর্থবহ।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, আল্লাহ্র এবাদাত দ্বারা অভিষ্ট অর্জনের পথের বাঁধা সত্তরটির পৈতা ছিড়তে তিনি সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু অবশিষ্ট রয়েছে একটি, সেটিও ছিন্ন করার শক্তি কামনা করে আল্লাহ্র দরবারে তিনি বহু কান্নাকাটি করলেন। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হল। ওটা ছিঁড়ে ফেলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি আরও বেশী করে কঠোর সাধনার দ্বারা আল্লাহ্র দরবারে বারবার আঘাত হানলেন। সর্বশেষে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীনও হলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। শেষে অসংখ্যা বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে যদিও বা পৈতা ছিন্ন করলেন, কিন্তু দৃঢ় হৃদয়ে আল্লাহ্র দরবার অভিমুখী অগ্রসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি গৌরবময় সোপানে আরোহণ করতে পারেননি। পরে অবশ্য আল্লাহ্র অশেষ কৃপায় সাফল্য লাভ করেন।
একবার তিনি তাঁর শিষ্যদের উপদেশ দিচ্ছিলেন, আল্লাহ্ ছাড়া কোন কিছুই কামনা করো না। আল্লাহ্ যখন তোমাদের হয়ে যাবে, তখন দেখবে, সব কিছুই তোমাদের। অজ্ঞতাবশত মানুষ অনেক কিছু কামনা করে। কিন্তু সেগুলো তাঁকে আল্লাহ্ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রথম দিকে আমি নিজেও এই ধারণের ভুল করি। অর্থাৎ ত্রিশ বছর ধরে আমি আল্লাহ্র দরবারে নানা জিনিস চেয়েছি। কিন্তু যখন মারেফতের প্রথম স্তর অতিক্রম করলাম, তখন আমার অজ্ঞতা দূর হল। আমি আল্লাহকে বললাম, প্রভু গো! কোন কিছুই আমার চাই না। শুধু আপনি আমার হয়ে যান। এর ফল আমি পেরেছি। যখন সত্যিই আমি কোন কিছুই মুখাপেক্ষী থাকলাম না, তখন একবার হজ্জে গিয়ে বিস্ময়ে অভিভূত হলাম। দেখলাম, এর আগে যে কাবাঘর আমি প্রদক্ষিণ করেছি বহুবার, এবার সেই কাবাঘরই আমাকে প্রদক্ষিণ করছে।
হযরতের কাছে শেষ রাতের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কেননা, তিনি বলতেন, ঐ নিস্তব্ধ প্রহরে প্রেমময়ের সঙ্গে যে প্রেম হয়, তা অন্য সময় সম্ভব নয়। আর এই জন্য, শেষ রাতের একটি পলকের বিনিময়ে তিনি আট জান্নাত বা দু’জগতের রাজত্ব গ্রহণ করতেও রাজি ছিলেন না।
একদিন বোস্তাম শহরে এল এক রূপসী বীরাঙ্গনা। আর মক্ষিরানীর মতো সে শহরের তরুণদের আকৃষ্ট করল। এবাদাত, ধর্ম-সব যায় যায়। অভিভাবক সমাজ এর প্রতিকার কামনায় হযরতের দ্বারস্থ হলেন। তিনি প্রতিকারের আশ্বাসও দিলেন।
কর্মপন্থা স্থির করে ওই রাতেই তিনি রূপসীর ঘরে গেলেন। সঙ্গে কিছু টাকাও নিলেন। রূপসী তাঁকে চেনে না। একজন খদ্দের বলেই ভাবল। সুতরাং নিয়মমাফিক তাঁকে অভ্যর্থনা
করে বসার আসন দেখিয়ে দিল। তিনিও যথারীতি আসন গ্রহণ করলেন। আর গণিকার কাছ থেকে বেশী টাকার বিনিময়ে সারারাত তাঁর হুকুম তামিলের প্রতিশ্রুতিও আদায় করে নিলেন।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১৭ পড়তে এখানে ক্লিক করুন