হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৯
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ৮ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তাই আমি বলেছিলাম, তুমি পরিবর্তনের পন্থা গ্রহণ করবে না।
সমকালের অন্যতম বিখ্যাত পীর হযরত শাকীক বলখী (রঃ)। তাঁর এক মুরীদ হজ্জে যাবে। হযরত শাকীক (রঃ) জানতেন, বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) মক্কা শরীফে অবস্থান করছেন। তিনি মুরীদক শিষ্যকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। মুরীদ হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাঁর পীরের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। মুরীদ বললেন, তিনি হযরত শাকীক (রঃ)-এর শিষ্য। তাঁর গুরু সৃষ্টির মুখাপ্রক্ষী নন। তিনি তাওয়াক্কুলকে শক্তভাবে ধরে আছেন। আকাশ যদি তামার মতো আর মাটি লোহার মতো হয়, জমি যদি ফসল না দেয়, আকাশ থেকে যদি বৃষ্টি না ঝরে, পৃথিবীর সকল প্রাণী যদি তাঁর পরিবার ভুক্ত হয় তবুও তিনি তাওয়াক্কুল ছেড়ে দেবেন না।
মুরীদের কথা শুনে হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, এ যে একেবারে কুফরী ও শেরেকীর লক্ষণ বায়েজীদ যদি একটি কাক হয়ে যায়, তবুও সে যেন তার শহরে কখনও উড়ে না যায়। তিনি শাকীক বলখী (রঃ)-এর মুরীদকে আরও বললেন, ক্ষুধার্ত হলে মানুষের কাছ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে তুমি ক্ষুধা দূর করবে। এটা কোন অন্যায় নয়। সেক্ষেত্রে তাওয়াক্কুলের কথা মুখে পর্যন্ত আনবে না। কারণ, আমার ভয় হয়, ঐ অবস্থায় তুমি এমন পাপ করে বসবে, যার ফলে তোমার শহর পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
মুরীদ দেশে ফিরে গিয়ে তার মুরশিদকে সব কথা বললেন। হযরত শাকীক (রঃ) বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-এর কথার মর্ম বুঝতে পারলেন। আর তার নিজের ভুলও ধরে ফেললেন। কিন্তু সেটা শিষ্যকে জানতে দিলেন না। বললেন, হযরত বায়েজীদ (রঃ) নিজে কেমন লোক, তা কেন
তুমি জিজ্ঞেস করলে না? মুরীদ কোন জবাবে দিতে না পেরে আবার চলে গেলেন হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর দরবারে।
আর তার পীরের প্রশ্নটি তুলে ধরলেন। হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, এ তোমাদের মস্ত বড় একটি ভুল। আগেই বলেছি, আমি মুতাওয়াক্কেল নই। যদি তাই হতাম, তাহলে একটা কেউকেটা হতাম। কিন্তু যেহেতু আমি কিছুই নই, অতএব আমার তাওয়াক্কুলের প্রশ্নই ওঠে না।
শাকীক (রঃ)-এর শিষ্য বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ)-এর এ কথার গূঢ় রহস্য উপলব্ধি করতে না পেরে আবার ফিরে এলেন হযরত শাকীক (রঃ)-এর কাছে। এসে দেখলেন তিনি মুমূর্ষ। মৃত্যু আসন্ন। দেরী না করে তিনি হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর কথাগুলো গুরুর কাছে নিবেদন করলেন। হযরত শাকীক (রঃ) অন্তিম মুহূর্তে তার ভুল বুঝতে পারলেন। আর তওবা করলেন কিছুক্ষণ পরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
হযরত আহমদ খাযরুইয়া (রঃ) সমকালের এক বিখ্যাত সাধক। তাঁরও শিষ্য ছিল অসংখ্যা। একজন শিষ্য তো হাওয়ায় ভেসে বা পানিতে হেঁটে যেতে পারতেন। প্রায় এক হাজার শিষ্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে তিনিও একদিন হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর দরবারে হাজির। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, হযরত বায়েজীদ (রঃ)-এর সামনে দাঁড়াবার যোগ্যতা যাদের আছে একমাত্র তারাই আমার সঙ্গে এস। সবাই ভেতরে গেলেন। শুধু একজন দাঁড়িয়ে রইলেন দরজায়।
আর হযরত বায়েজীদ (রঃ) তাঁদের বললেন, আপনাদের মধ্যে যে সর্বোত্তম, তাঁকে ভেতরে ডাকুন। অতঃপর লোকটিকে ডেকে আনা হল। শুরু হল আলাপ-আলোচনা।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, ভাই আহমদ, এভাবে এখানে-ওখানে আর কত ঘুরে বেড়াবেন?
হযরত আহমদ খাযরুই (রঃ) বললেন, আপনার হয় জানা নেই, পানি এক জায়গায় আবদ্ধ থাকলে তাঁর রং ও গন্ধ খারাপ হয়ে যায়।
হযরত বায়েজীদ (রঃ) বললেন, তাহলে আপনি সমুদ্র হয়ে যান না কেন? সমুদ্রের পানির বর্ণ-গন্ধ বিকৃত হয় না।আলোচনা ক্রমশ মারেফতের উচ্চস্তরে ওঠে গেল। আর খাযরুই (রঃ) সেসব কথার গূঢ়ার্থ অনুধাবন করতে না পেরে বার বার বলতে লাগলেন, দয়া করে একটু সহজভাবে বলুন। তখন বায়েজীদ (রঃ) আলোচনায় স্তর নামিয়ে দিলেন। আর তিনি বুঝতেও পারলেন।
আহমদ খাযরুই (রঃ) বললেন, এখানে আসার আগে আপনার বাড়ীর সামনে আমি ইবলীসকে বন্দী অবস্থায় দেখলাম। এটা যদি একটু বলেন।
হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) – পর্ব ১০ পড়তে এখানে ক্লিক করুন