হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১৩
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
৩৩। কঠিন বিপদ ও দুঃখ – কষ্টের মধ্যেও বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন রাখার নাম হল সন্তোষ।
৩৪। যে আল্লাহর ইচ্ছা ও নিজের ভাগ্যের ওপর বিশ্বাসী ও সন্তুষ্ট, সেই প্রবৃত্তি বা রিপুকে চিনতে পেরেছে।চোখ দিয়ে দেখার সঙ্গে জ্ঞানের সম্পর্ক এবং অন্তদৃষ্টি দিয়ে অবলোকনের সঙ্গে বিশ্বাসের লক্ষণ হল তিনটি। যেমন-
ক) প্রত্যেক বস্তুতে আল্লাহর নিদর্শন দেখা,
খ) প্রতিটি কাজে আল্লাহর দিকে ফেরা ও
গ) প্রতিটি কাজে আল্লাহকে ডাকা। বিশ্বাস বাসনাকে দমিয়ে রাখে। বাসনার স্বল্পতা যোহদ ডেকে আনে। যোহদ প্রতিষ্ঠিত করে মারেফতকে। আর মারেফত দ্বারা আখেরাতে ফুল-ফল ও ফসল পয়দা হয়।
৩৫। সামান্য বিশ্বাস সারা দুনিয়া থেকেও সেরা। কেননা, আল্লাহর প্রতি এতটুকু বিশ্বাসই মনকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে।
৩৬। যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কেবল মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, সে যেন ফেরাউনের বিছানায় উপবিষ্ট হয়।
৩৭। যে লোক কু-প্রবৃত্তির প্রতারণার প্রতি লক্ষ্য করল না বা সতর্ক হল না, সে আল্লাহর দরবারে খাঁটি হতে পারল না।
৩৮। যিনি সত্যের সন্ধান পেয়েছেন তাঁর কোন ভয় নেই। সত্য ছাড়া জগতের সব বস্তু দূর হয়ে গেলেও তাঁর ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, যিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছেন, তিনি সৃষ্টির কোন পরোয়া করেন না।
৩৯। সত্য প্রদর্শনের দাবীদার শুধু বঞ্চনার শিকার নয়, বরং তার দাবীও মিথ্যা হতে পারে। কেননা, প্রকৃত সত্য-দ্রষ্টা আত্ন-প্রকাশ অপরাধ বলে মনে করে।
৪০। কোন শিষ্যই প্রকৃত শিষ্য হওয়ার দাবী করতে পারেন না, যতক্ষণ না যে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকারের পর তার গুরু বা মুরশিদের আনুগত্য স্বীকার করে।
৪১। যে ব্যক্তি কুপ্রবৃত্তি দমন করে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়, আল্লাহ প্রকাশ্যে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
৪২। আল্লাহকে যে ভয় করে সে অবশ্যই আল্লাহর পথে অবিচল থাকে। আর যে আল্লাহর পথে অবিচল, সে অবশ্যই মুক্তি-প্রাপ্ত হয়।
৪৩। সম্ভোগ ও তৃপ্তির অধিকারী বান্দা নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়। যে লোক নিরর্থক কাজে পরিশ্রম করে, তা তার জন্য নিস্ফল প্রতিপন্ন হয়।
৪৪। যে ব্যক্তি সমস্যাসমূহ থেকে মুক্তির চেষ্টা করে, সে তার চেয়েও জটিল সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। যে ব্যক্তি অলাভজনক বস্তুর পেছনে ঘোরে, তার লাভজনক বস্তু বিনষ্ট হয়।
৪৫। সৎ ও সত্য কথায় যার মনে দুঃখ লাগে, বুঝতে হবে তার মর্যাদা বোধ নেই।
৪৬। যে লোকের মুখ ও মন একরূপ নয়, তার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪৭। আল্লাহকে স্মরণকারী স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুকে সত্ত্বর ভুলে যায়।
প্রশ্নোত্তরঃ
হযরত যুনযুন (রঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, দুনিয়া কি?
তিনি উত্তর দিলেন, যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে, তাই হল অধম দুনিয়া।
প্রশ্নঃ অধম ব্যক্তি কে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি দীদারে এলাহীর পথ পায়নি এবং সে পথের সন্ধানও করেনি।
প্রশ্নঃ কার সঙ্গ অবলম্বন করা ভাল?
উত্তরঃ যার মধ্যে আমি ও তুমির প্রভেদ নেই।
প্রশ্নঃ আপনি আল্লাহকে কিভাবে চিনলেন?
উত্তরঃ আমি সত্তা ও গুণাবলী দ্বারা তাঁকে চিনেছি। আর সৃষ্টিজগতকে চিনেছি রাসূলে কারীম (সাঃ) –এর উসিলায়। কেননা, আল্লাহকে সৃষ্টা হিসাবে চেনা যায়। আর রাসূল যেহেতু মাখলুক বা সৃষ্টি, অতএব সৃষ্টিকে চিনতে হয় সৃষ্টি দ্বারা।
প্রশ্নঃ মানুষ আল্লাহর কাছে কখন সাহায্য চায়?
উত্তরঃ সব দিক থেকে নিরাশ হবার পর।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া