হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)- পর্ব ৫
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একদিন একটি ছেলে এসে নিবেদন করল, হযরতের সেবায় সে এক লক্ষ দীনার দান করতে চায়। যুনযুন (রঃ) তাঁকে সবর করতে বললেন। কেননা, ছেলেটি তখনও নাবালক। তাঁর কথা শুনে ছেলেটি ফিরে গেল। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে সে আবার এসে হযরতের দরবারে তওবা করে ঐ লক্ষ দীনার দান করে। কিছুদিন পরে ছেলেটি আবার তাঁদের কাছে এসে দেখতে পেল, তাঁরা খুবই অভাব-গ্রস্থ। অর্থের প্রয়োজন। অথচ তাঁরা কপর্দক-শূন্য। তখন সে হযরত যুনযুন (রঃ)-এর কাছে গিয়ে আফসোস করে বলল, আমার কাছে যদি আরও এক লক্ষ দীনার থাকত, তাহলে আমি তাও দিয়ে দিতাম।
তার কথা শুনে হযরত বুঝলেন; আমার কাছে যদি আরও এক লক্ষ দীনার থাকত, তাহলে আমি তাও দিয়ে দিতাম।
তার কথা শুনে হযরত বুঝলেন; ছেলেটি দরবেশ জীবনের গুরুত্ব এখনও অনুধাবন করতে পারেনি। তার মনে এখনও অর্থ-ভাবনা বেশ সক্রিয়, এ বিষয়ে তাকে একটু শিক্ষা দেওয়া উচিত। তিনি তিন দেরহাম মূল্যের কিছু জিনিস কিনে আনার জন্য তাঁকে এক আতর বিক্রেতার কাছে পাঠালেন। ছেলেটি যা কিনে আনল, তা গুঁড়া করে তিনটি গুলি পাকিয়ে সূচ বিদ্ধ করে আনতে বললেন। সে তাই করল। এবার হযরত যুনযুন (রঃ) গুলি তিনটির ওপর ফুঁ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মূল্যবান মণিতে পরিণত হল। তিনি সেগুলোর দাম যাচাই করবার জন্য তাকে জহুরির কাছে পাঠালেন। কিন্তু বিক্রি করতে বারণ করলেন। নির্দেশমত তা মণিগুলো জহুরিকে দেখালে তারা প্রতিটির জন্য এক লক্ষ দীনার মূল্য ধার্য্য করল। তখন তিনি ছেলেটিকে বললেন, দেখলে তো, দরবেশগণ অর্থের প্রত্যাশী নন। বরং তাঁরা স্বেচ্ছায় দারিদ্য বরণ করেন।
ছেলেটির চৈতন্যদয় হতে দেরী হল না। সে আল্লাহর কাছে তওবা করল। আর তার মন থেকে অর্থের মোহ মুছে গেল চিরদিনের জন্য।
হযরত যুনযুন মিশরী (রঃ) বলেছেন, তিনি অসংখ্য লোককে আল্লাহর পথে ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সাড়া পেয়েছেন মাত্র একজনের কাছ থেকে। সে এক রাজকুমার। একদিন মসজিদের পাশ দিয়ে সে কোথাও যাচ্ছিল। হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) তখন উপস্থিত শ্রোতাদের বলছিলেন, যে দুর্বল সবলের বিরুদ্ধে দ্বন্দে লিপ্ত হয়, তার চেয়ে নির্বোধ আর কে আছে? কথাটা কানে গিয়েছিল রাজপুত্রের। সে এসে হযরতের কথার মর্ম জানতে চাইল। তিনি বললেন, দেখ, মানুষ কত দুর্বল। আর তার তুলনায় আল্লাহ কত লক্ষ কোটি গুণ সবল। তবুও দুর্বল মানুষ মহাশক্তিধর আল্লাহর বিরোধিতা করে। এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতার প্রমান আর কী আছে?
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া