হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমার চেয়েও বড় বিরাগী লোক আছেন। তাঁকে দেখতে চাও তো সামনের পাহাড়ের দিকে যাও।
তাঁর কথামত হযরত যুনযুন (রঃ) ঐ পাহাড়ে গিয়ে দেখলেন, এক তরুণ একখানা পা বাইরে ফেলে রেখে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আর সে পায়ে অসংখ্য ক্ষত-পোকা কিলবিল করছে। হযরত তাঁকে সালাম জানিয়ে তাঁর অবস্থা জানতে চাইলেন।
তরূণ বললেন একদিন আমি এই মসজিদে বসে ছিলাম। তখন এক রূপসী নারী এ পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তার রূপে আকৃষ্ট হয়ে আমি এক পা অগ্রসর হয়ে যাই। তখন কানে আসে দৈববাণীঃ ত্রিশ বছর আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থেকে তুমি কিনা শয়তানের পথ অবলম্বন করলে। তুমি কি লজ্জাহীণ? সঙ্গে সঙ্গে আমার চৈতন্য ফিরে আসে। সেই থেকে আমি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি। দেখি, আল্লাহ আমার কী ব্যবস্থা করেন। এই বলে তরূণ এবার হযরত যুনযুন (রঃ)-কে বললেন, এবার বল, তুমি কি জন্য এখানে এসেছ? যদি সত্যিকারের সংসারত্যাগী দরবেশ দেখতে চাও, তাহলে ঐ চূড়ায় চলে যাও।
কিন্তু পাহাড়-চূড়ায় ওঠতে না পেরে হযরত যুনযুন (রঃ) আবার তরূণ দরবেশের কাছে ফিরে এলেন। তখন তরূণ নিজেই তাঁর পরিচয় দিয়ে বললেন, ঐ পাহাড়ের মাথায় এক কুঁড়েঘরে এক সাধক বহু দিন ধরে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। একবার এক ব্যক্তি কথা প্রসঙ্গে তাঁকে বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া লোকের জীবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়। তাঁর কথা শুনে কেমন যেন জেদ চেপে গেল তাপসের মাথায়। তিনি নিজে রুজি-রোজগারের কোন চেষ্টা করবেন না। দেখি আল্লাহ রুজির ব্যবস্থা করেন কি না। আর সত্যিই তিনি কয়েকদিন পানাহার করলেন না। আল্লাহ মৌমাছিদের আদেশ দিলেন, তারা যেন তাঁকে নিয়মিত মধু সরবরাহ করে।
তাঁর কথা শুনে হযরত যুনযুন (রঃ)-কে স্পর্শ করে। তাঁর মনে এই প্রতীতি জন্মায় যে, আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরতা থাকলে তিনিই ব্যবস্থা করেন। দরবেশের কাছ থেকে ফেরার পথে তিনি দেখলেন, এক অন্ধ পাখী গাছের ডাল থেকে মাটিতে পড়ে গেল। তার মনে কৌতূহল জাগল, এই পাখীটি কিভাবে আহার যোগাড় করে দেখা যাক।
দেখলেন, এটি ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে ফেলল। আর অমনি খাবার ভর্তি একটি সোনার পেয়ালা, আর পানিপূর্ণ একটি রুপার পাত্র বের হয়ে এল। পাখী পানাহার সম্পন্ন করে আবার গাছের শাখায় ওঠে গেল আর পাত্র দুটিও অদৃশ্য হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে তাঁর আল্লাহ নির্ভরতা আরও বেড়ে গেল। আর তিনি সফলও হলেন। আমরা দেখছি, স্বয়ং আল্লাহ তাঁর ওপর প্রসন্ন হয়ে জ্ঞানের ভান্ডার খুলে দেন।
একদিন এক নদী তীরে বসে তিনি ওযু করছেন। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ল সামনের বাড়ীর ছাদে এক রূপসীর ওপর। সে বলল, দূর থেকে তোমাকে আমি পাগল ভেবেছিলাম। কাছে এলে মনে হল তুমি এক আলেম। আরও কাছে এলে ভাবলাম বুঝি দরবেশ। তারপর দেখলাম, তুমি কিছুই নও।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া