হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ) – পর্ব ১
এক দরবেশ তাঁর অনুচরবর্গসহ এক অরণ্যে গিয়ে গৌঁছালেন। আর অরণ্যের মধ্যে বিচরণ করতে করতে তাঁরা একটি ধনভান্ডার দেখতে পেলেন। রাশি রাশি সোনা আর রূপা স্তূপীকৃত ছিল সেখানে। বিপুল এ ধনরাশি দেখে অনুচরবর্গের আনন্দের সীমা রইল না। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন তার ওপর। আর যা কিছু ছিল, সব নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিলেন। কিন্তু দরবেশ কী করলেন? ধনাগারের দুয়ারে তিনি একটি কাঠের ফলক দেখতে পান। তাতে লেখা ছিল আল্লাহর পবিত্র নাম। অন্য দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি ঐ কাঠের ফলকখানি গ্রহণ করে পরম ভক্তিভরে বারবার চুমু দিতে লাগলেন।
ঐ রাতেই তিনি স্বপ্ন দেখলেন স্বয়ং আল্লাহ বলছেন, আপনার অনুগামীরা সোনা-রূপার দিকে আকৃষ্ট হল। কিন্তু আপনি ওসব লক্ষ্য না করে আমার নামাঙ্কিত কাঠের ফলককেই মহামূল্যবান মনে করলেন। অতএব আমি খুব খুশী। এর পুরষ্কারস্বরূপ আমিও আপনার-জ্ঞান বিদ্যার দরজা খুলে দিলাম।
স্বয়ং আল্লাহর আশীর্বাদ-ধন্য এই মহা-তাপসের নাম হযরত যুনযুন মিসরী (রঃ)। মিসরের সাধক তিনি। মারেফতপন্থীদের শিরোমণি, তৌহীদবাদীদের মধ্য-মণি। কিন্তু দুঃখের কথা, মিসরে তাঁর কোন কদর হয়নি। তারা তাঁকে কাফের বলে চিহ্নিত করে। তাঁর আচার-ব্যবহারে অনেকেই সংশয় পোষণ করত। আর তিনিও তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেননি বলে তাঁর আসল পরিচয়ও তাঁর জীবিতকালে কেউ জানতে পারেনি।
প্রথম জীবনে তিনি এক তরূণ তাপসের নাম শুনে তাঁকে দেখতে গিয়ে দেখেন, এক দরবেশ গাছের ডালে ঝুলে রয়েছেন। আর নিজের মনে বলছেন, হে দেহ! আল্লাহর আদেশ পালনে তুমি আমাকে সাহাস্য কর। না হলে তোমাকে আমৃত্যু উপবাসী রেখে শাস্তি দেব। অর্থাৎ তিনি নিজের শরীরকে শাসন করছেন। তাঁর কথা শুনের হযরত যুনযুন (রঃ) কেঁদে উঠলেন। তাঁকে কাঁদতে দেখে ঝুলন্ত দরবেশ বললেন, এমন কেউ আছে কি, যে কম লজ্জাশীল ও বেশী পাপিষ্ঠ মানুষকে সাহায্য করে?
হযরত যুনযুন (রঃ) এবার তাঁকে সালাম জানিয়ে তাঁর অবস্থার কথা জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমার এ দেহ আল্লাহর এবাদতে আমাকে সাহায্য করছে না। আমি তাই একে শাস্তি দিচ্ছি। হযরত বললেন, আমি মনে করেছিলাম, আপনি হয়ত কাউকে হত্যা করেছেন অথবা বড় কোন পাপ করেছেন।
দরবেশ বললেন, না, তুমি ঠিক বোঝনি। লোক সংসর্গকেই আমি ঐ ধরণের অপরাধ সাদৃশ বলে মনে করি।
মনে হয় আপনি প্রকৃতই সংসারবিরাগী।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া