হযরত মুহাম্মদ ইবনে আসলাম তুসী (রঃ) – পর্ব ১

মহা-তাপসগণের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ ইবনে আসলাম তুসী (রঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মূর্ত প্রতীক মনে করা হয়। কেননা তিনি রাসূলে কারীম জীবনাচরণ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। আবার খোরাসানের শান্তি-রক্ষক হিসাবেও তাঁর খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। খোরাসান প্রদেশের তুস শহরে তাঁর জন্ম হয় বলে তাঁর নামের সঙ্গে তুসী পদবী সংযোজিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে কঠিন সাধনার ক্ষেত্রে তিনি এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব।

আগেই বলা হয়েছে, মহানবীর তরীকা তিনি পালন করতেন অক্ষরে অক্ষরে। একবার তিনি চলেছেন নিশাপুরে। সঙ্গে রয়েছেন মুসা রেজা (রঃ)-এর পুত্র ইমাম আলী (রঃ)। উটের লাগাম ছিল ইসহাক ইবনে জাহেরিয়ার হাতে। মুহাম্মদ ইবনে আসলাম যখন শহরে প্রবেশ করছেন, তখন দেখা গেল, তাঁর পরনে রয়েছে মোটা কম্বল, মাথায় চটের টুপি, আর কাঁধে বইপত্রের বোঁচকা। অভূত-পূর্ব এ দৃশ্য দেখে নিশাপুরবাসীরা অশ্রু-সিক্ত হয়ে উঠলেন।

অসাধারণ বাগ্মিতা ছিল তাঁর। তাঁর বক্তব্য এমন হৃদয়-গ্রাহী ছিল যে, কম করেও পঞ্চাশ হাজার পথ ভ্রান্ত লোক তওবা করে আল্লাহর পথে শামিল হয়।

পবিত্র কোরআনকে মাখলুক বা অনিত্য সৃষ্ট বস্তু বলে স্বীকার করতে হবে-আলেম সম্প্রদায় ও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর ওপর এ রকম চাপ সৃষ্টি করা হয়। তিনি বললেন, ধর্ম-বিরোধী এ কথা আমি কিছুতেই স্বীকার করতে পারব না। আর এ অস্বীকৃতির ফলে তাঁর দু’বছর কারাদন্ড হয়।

কারাগারে থাকাকালীন তিনি প্রতি শক্রুবার জুমআ আদায়ের জন্য স্নান ও ওযু সেরে কাঁধে জায়নামাজ নিয়ে চলে আসতেন জেলখানার দরজায়। বলাবাহুল্য, দ্বারক্ষরা তাঁকে বাধা দিত আর তিনি এ কথা বলে ফিরে যেতেন, হে প্রভু! আমার যা করার, সাধ্যমত আমি তা করেছি, এখন সব কিছু আপনিই ভালো জানেন।

কারাবাস শেষ হল। একদিন শোনা গেল, নিশাপুরের নতুন শাসক আবদুল্লাহ ইবনে তাহের শহরে আসছেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সাড়া পড়ে গেল সারা শহরে। দলে দলে শহরবাসী ছুটে গেল তাঁকে সালাম জানাতে। একটানা তিন দিন ধরে শুধু মানুষ আর মানুষ। অভিভূতঃ আবদুল্লাহ জানতে চাইলেন, শহরের বিশিষ্ট লোকদের মধ্যে আর কেউ আসতে বাকী রয়েছে কিনা? তাঁকে বলা হল, মাত্র দু’জন লোক এখনও আসেননি।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত মুহাম্মদ ইবনে আসলাম তুসী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।