হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৪
হযরত মালেক দীনার (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সে মালেক দীনার (রঃ)-কে প্রশ্ন করে, আপনি আবার এসেছেন কি কারণে জানতে পারি কি?
উত্তরে তিনি বললেন, আমি এসেছি আপানকে সুসংবাদ দিতে। তিনি আকাশবাণীর বিবরণ শোনালেন।
লোকটি কিন্তু স্তমিত হয়ে গেল। আল্লাহর বন্ধু সে? আশ্চর্য! সে ভাবতে থাকে। ভাবতে ভাবতে স্থির করে, তাই যদি হয় তাহলে আজ থেকে আমিও আমার মনের গতি প্রকৃতি বদলে দিলাম। আর যা কেউ আশা করেনি তাই হল। যাবতীয় সম্পত্তি, ধন-দৌলত আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়ে একদিন সে লোকালয় ছেড়ে চলে গেল। অত্যাচারিত মানুষের দল দেখল, মালেক দীনার (রঃ)- দৌলত একটি অন্ধকার হৃদয় হতে সূর্য উঠে বিশ্ব চরাচরে তার কিরণমালা ছড়িয়ে দিল।
এ ঘটনার বহুদিন পর লোকটির সঙ্গে মক্কা মোয়াজ্জামায় হযরত মালেক (রঃ)-এর দেখা হয়। তখন তিনি ক্ষীণ, কৃশকায়। কিন্তু দেহাবয়বে এক অপার্থিব আলক-প্রভা। তখন তিনি পৌঁছে গেছেন জীবনের শেষ দিগন্তে। হযরত দীনার (রঃ)-কে দেখে তিনি বললেন, শুনুন, আল্লাহ সত্যিই বলেছেন যে, তিনি আমার বন্ধু। আর আমি এখন আমার বন্ধুর কাছেই চলেছি। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। গ্রামবাসীর কাছে আমার ক্ষমা প্রার্থনা রইল। বলতে বলতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন। যেন মালেক দীনার (রঃ)-এর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন এতদিন। শেষ কথা বলে দিয়ে তিনি সত্যি তার প্রিয় বন্ধুর কাছে ফিরে গেলেন।
হযরত মালেক (রঃ) ছিলেন ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি। পাক কোরআনে আল্লাহ এই ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ও সংযমের কথা বার বার বলেছেন। তাঁর পথের যারা পথিক, সহিষ্ণুতা ও সংযম তাঁদের পথ চলার পাথেয়।
এক সময় মালেক দীনার (রঃ) একটি ভাড়াটে বাড়ীতে বাস করতেন। বাড়ীর সামনেই ছিল এক ইহুদি পরিবার। সাধারণভাবে ইহুদীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ হয়। তাঁর ওপর লোকটি ব্যক্তিগতভাবে হযরত দীনার (রঃ)-এর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিল। সে করল কি, মালেক দীনার (রঃ)-এর বাড়ীর দরজার কাছেই শৌচাগার বানাল। আর এর মলমূত্র গড়িয়ে যেত তাঁর বাড়ী বরাবর। এমনকি দূর্গন্ধে সেখানে টেকা দায় হত। অথচ মালেক (রঃ) এই অপ্রতিবেশী সুলভ অসামাজিক ব্যবহারের বিনিময়ে ইহুদীকে একটি কটু কথা বলেননি। কোনদিন কলহ-ঝগড়াও করেননি। শুধু আল্লাহর দরবারে নিবেদন করেন, তিনি যেন ঐ হৃদয়হীন ইহুদীকে হেদায়েত করেন। চোখের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলেন আঁধারের পর্দা।
বেশ কিছুদিন চলে গেল।
একদিন ইহুদী জিজ্ঞেস করে, আমার পায়খানাটার জন্য আপনার কোন অসুবিধা হয় না তো?
হযরত মালেক (রঃ) উত্তর দেন, তা তো নিশ্চয় হয়। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। একটা গামলা আর ঝাড়ু আছে। প্রত্যেকদিন ধুয়ে সাফ করে দিই।
ইহুদী বলে, এতদিন ধরে আপনি অসুবিধা ভোগ করছেন, অথচ কোনদিন বিরুক্তি বা রাগও প্রকাশ করেননি।
তা কেন করব? হযরত বলেন, আল্লাহ আমাদের বলেছেন, ক্রোধ দমনকারীকে তিনি ভালোবাসেন।
সত্যিই এতদিন ইহুদীর চোখের ওপর থেকে কালো পর্দা সরে গেল। শত্রুর অন্যায়-অত্যাচার নীরবে সহ্য করা ও তার প্রতি এতটুকু রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ না করা যদি ইসলামের রীতি হয়, তাহলে মানুষের মুক্তি সাধনে একমাত্র ইসলামই সক্ষম। সে হযরত মালেক (রঃ)-এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেবার অনুরোধ জানাল।
অপরিসীম ধৈর্য্য, অভাবনীয় সাফল্যে উত্তীর্ণ হলেন তিনি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া