হযরত হাসান বসরী (রঃ) – পর্ব ১৪

হযরত হাসান বসরী (রঃ) – ১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

ঘুম ভেঙে গেল। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, সত্যিই শামাউনকে দেয়া পত্রখানা তাঁর হাতের মুঠোয়। যেন স্বপ্ন নয়, এই মাত্র শামাউন স্বশরীরে এসে পত্রখানা তাঁকে দিয়ে গেল। তখন তিনি তাঁর প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, প্রভু গো! আপনার কাজের গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করার সাধ্য আমার নেই। সারা জীবন যে আগুন নিয়ে পড়ে থাকল, তাঁকে মাত্র একবার কলেমা পড়ার কারণে আপনি মুক্তি দিলেন শুধু তাই না, তাঁকে দেখাও দিলেন। তাহলে আজীবন যারা ঈমান মেনে রয়েছে, তাদের যে আপনি মুক্তি দেবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শামাউনের জান্নাতবাস তাঁর চেতনায় নবদিগন্তের দুয়ার খুলে দিল।

হযরত হাসান (রঃ) একবার বেড়াতে বেড়াতে দজলা নদীর তীরে হাজির হলেন। দেখলেন, এক কাফ্রী নির্জনে বসে এক মহিলার সঙ্গে কথা বলেছেন। আর পানপাত্র থেকে পানীয় পান করেছেন। দেখামাত্র কাফ্রী সম্বন্ধে তাঁর মনে এক খারাপ ধারণার সৃষ্টি হল। অর্থাৎ লোকটিকে মদ্যপ ও লম্পট বলে তাঁর মনে হল। এও ভাবলেন যে, তিনি অন্তত এই লোকটির মতো নিকৃষ্ট নন।

ঠিক তখন নদীর বুকে একখানি ভাসমান নৌকা ডুবে গেল। বাঁচাও বাঁচাও বলে চীৎকার করে উঠল নৌকার আরোহীরা। সঙ্গে সঙ্গে কাফ্রী ঝাঁপিয়ে পড়লেন নদীতে। আর সাতজন আরোহীর অন্ততঃ দু’জনকে তুলে আনলেন ডাঙায়। হাসান (রঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আমি দু’জনকে বাঁচালাম। আপনি অন্যদের উদ্ধার করুন। হাসান (রঃ) কিন্তু সে উদ্যেগ গ্রহণ না করে বরং কাফ্রীকেই তাদের প্রানরক্ষা করার অনুরোধ জানালেন। কাফ্রী তাদেরও উদ্ধার করলেন।

এবার হাসান (রঃ) মনে মনে নিজেকেই ধিক্কার দিলেন। আর ঘৃণা নয়, এবার তিনি তাঁর কাছে গিয়ে বসলেন, আপনি আজ আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দিন।

কাফ্রী বললেন, এই যে মহিলাকে দেখছেন, ইনি আমার জননী। আর ঐ পানপত্রে রয়েছে পবিত্র পানীয়। আমি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম, আপনি অন্ধ না চক্ষুমন। দেখলাম, আপনি অন্ধই বটে।

কাফ্রীর কথায় হযরত হাসান (রঃ) খুবই লজ্জিত হলেন। তাঁর প্রতি তিনি যে অন্যায় ধারণা পোষণ করেছিলেন, তাঁর জন্য ক্ষমা চাইলেন। বললেন, আপনি এতগুলি মানুষকে যেভাবে উদ্ধার করেছেন, আমাকেও তেমন করুন। আত্ন-অহমিকার অতলে আমিও নিমজ্জমান। দয়া করে আমাকে উদ্ধার করুন।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) – ১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।