হযরত হাসান বসরী (রঃ) – পর্ব ৭
হযরত হাসান বসরী (রঃ) -৬ষ্ঠ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঈমানের শক্তি ও সাহসিকতাঃ
এক জনসমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন হযরত হাসান বসরী (রঃ)। এমন সময় সেদিকে ছুটে আসছেন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ। সঙ্গে এক সেনাদল। শ্রোতাদের মধ্যে কানাকানি হয়ে গেল, আজ হাসান বসরী (রঃ)-এর পরীক্ষা। তিনি ভাষণ স্থগিত রেখে হাজ্জাজের সামনে মৌন হয়ে যান কিনা দেখা যাবে। অতঃপর দেখা গেল, একটু পরেই ধাবমান হাজ্জাজ সভায় ঢুকে ঝুপ করে বসে পড়লেন এক পাশে। আর সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে হযরত হাসান (রঃ) যথারীতি
বক্তৃতা দিতে থাকলেন। ভাষণ শেষে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ এসে হযরতের হাতে চুমু দিলেন। বললেন, যদি আল্লাহ্র ওলীকে দেখার কারও সত্যিকারের ইচ্ছা হয়, সে যেন হযরত হাসান (রঃ)-কে দেখে যায়।
একবার হযরত আলী (রাঃ) এক উদ্ভট আদেশ দিলেন। বক্তৃতামঞ্চ ভেঙে ফেলতে হবে। আর এলোমেলো বক্তৃতা বন্ধ করতে হবে। নিশ্চিত কোন কারণ ছিল না। হলে হযরত আলী (রাঃ)-এর এমন আদেশ জারি করতেন না। কিন্তু সে আদেশ হযরত হাসান (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে খাটল না। তিনি যেমন বক্তৃতা দেন, তেমনি দিয়ে চলেছেন। একদিন হযরত আলী (রাঃ) তাঁর বক্তৃতা সভায় এসে হাজির। ভাষণরত হাসান (রঃ)-কে তিনি হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন, আপনি আলেম না শিক্ষক?
হযরত হাসান বললেন, আমি আলেম নই। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যে হাদীস আমি জেনেছি, তারই পুনরাবৃত্তি করছি মাত্র। একথা শুনে তিনি বক্তৃতা দিতে নিষেধ করলেন না। বরং তাঁর প্রশংসা করে বললেন, তরুণটির সততা আছে। আর সে সুবক্তাও বটে। একথা বলে তিনি সভা ত্যাগ করলেন। কিছুক্ষণ পরে তরুণ বক্তা জানতে পারলেন, এই মাত্র যিনি কথা বলে চলে গেলেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)। জানামাত্র তিনি বক্তৃতামঞ্চ থেকে নেমে হযরত আলী (রাঃ)-এর খোঁজে বের হলেন। বেশ কিছু দূরে গিয়ে তাঁকে পেয়ে গেলেন। বিনীত ভাবে বললেন, হুযুর! আল্লাহ্র ওয়াস্তে আমাকে অযুর তারবীব শিক্ষা দিন। হযরত আলী তাঁকে পানি আনতে বললেন। পানি আনা হল এবং বিষয়টি হযরত হাসান (রঃ)-কে তিনি শিখিয়ে দিলেন।
কোরআন তেলাওয়াত শুনলেই এক লোক অজ্ঞান হয়ে যেত। আর মুখ দিয়ে শব্দ হত। হাসান বসরী (রঃ) তাকে বলেন, এসব ছাড়। কেননা, তোমার এ ভাব-বিহ্বলতা স্বতঃস্ফূর্ত নয়। তুমি ইচ্ছা করে এমন করছ। এটা ভান। গুনাহর কারণ। তিনি আরও বললেন, কারো কোন কথা শুনে যদি ইচ্ছা করে কেউ কান্নার ভান করে, তাহলে তা শয়তানের কান্না বলে মনে করতে হবে।
হযরত হাসান বসরী (রঃ) – ৮ম পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া