হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা –দ্বিতীয় পর্ব

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

নামায ও হজ্জের ক্ষেত্রে যে পাঁচজনের স্মরণ ও তাদের অনুসরণ একান্ত প্রয়োজন তাদের নামই আল্লাহ তা’য়ালা পাথরে খোদিত করে কাবাগৃহের দেয়ালে চিরদিনের জন্য লাগিয়ে দিলেন। কিয়ামতের দিন কাবাগৃহ জিয়ারতকারীগণকে এ পাথর শনাক্ত করবে। এটা তারই আলামত।

অনেক দিনের চেষ্টা, পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কাবাগৃহ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেন। অতঃপর পিতা-পুত্র একত্রে পাঠ করেন – “রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাছ ছামিউল আলীম।” অর্থাৎ, হে মেহেরবান প্রভু! আপনি আমাদের প্রচেষ্টা ও শ্রম কবুল করুন এবং এ শ্রমের বিনিময়ে আমাদিগকে আপানার করুণা প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি পরম শ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। অতঃপর তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করে বললেন, হে প্রভু! তুমি মক্কা এলাকাকে আবদ্ধ করে দাও, এখানের মানুষদিগকে ধন-সম্পদ ও নিরাপত্তা দান কর এবং অধিবাসীগণকে ফলমূল ইত্যাদি দিয়ে রুজির বাবস্থা করে দাও।

আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – এর দোয়া কবুল করে তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যারা আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাসী নয় তাদেরকেও আমি পৃথিবীতে রিজিক দান করব কিন্তু পরকালে তাদেরকে আগুনের আজাব ভোগ করতে হবে যা অত্যন্ত কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সুষ্ঠভাবে কাবা ঘরের কাজ সমাধা করতে সক্ষম হয়েছে এজন্য তিনি বার বার আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। ইতোমধ্যে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এসে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন আল্লাহ তা’য়ালা আপনার কৃতকর্মের জন্য ছালাম জানিয়েছেন এবং আপনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে কাবাঘর তৈরি করেছেন, এজন্য আপনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। তবে অনাহারীকে আহার দান করা ও উলঙ্গকে বস্ত্রদান করা এর চেয়ে কম মর্যাদার কাজ নয়।

এরপর আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) – কে আদেশ দিলেন, সারা পৃথিবীর মানুষকে এ ঘরের মর্যাদা সম্বদ্ধে অবগত কর এবং এ ঘর প্রদক্ষিণ করে হজ্জ সমাধা করতে বল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, আমার এ দাওয়াত আর কতদূর পৌঁছান সম্ভব হবে? সারা পৃথিবীর মানুষকে কিভাবে শুনাব? আল্লাহ তা’য়ালা বললেন, তুমি প্রথমে দাওয়াত দাও। পৃথিবীর মানুষের নিকট তা পৌছানোর দায়িত্ব আমার। এমনকি যারা পিতার পৃষ্ঠদেশে বা মায়ের গর্ভে রয়েছে তাদেরকেও আমি এ দাওয়াত পৌঁছে দেব। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তখন এক পাহাড়ে উঠে বললেন, হে দুনিয়ার মানুষ! তোমারদের উপর আল্লাহ তা’য়ালা হজ্জ ফরজ করে দিয়েছেন। যাদের সামর্থ আছে তারা হজ্জ সমাধার জন্য বাইতুল্লাহ চলে আস। তখন যাদের ভাগ্যে হজ্জ আছে তাদের রুহ আওয়াজ দিয়ে উঠল, “লাব্বাইক, হে প্রভু! আমরা তোমার কাবার দ্বারে হাজির আছি। সকল প্রশংসা নেয়ামত ও সাম্রাজ্য একমাত্র তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নেই, হে মহান প্রভু ও আমাদের মালিক। ” হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দাওয়াতের বাণী উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিক থেকে এমনকি আকাশ ও মাটি থেকে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সকলেই চিৎকার দিয়ে বলছে “লাব্বায়িক আল্লাহুমা লাব্বায়িক”। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) অবাক হয়ে চতুর্দিকে তাকালেন কিন্তু কোন জন মানুষের চিহ্ন তিনি দেখেতে পেলেন না। শুধু বাতাসে ভেসে আসা গগন বিদারী আওয়াজ শুনলেন “লাব্বায়িক”।

 সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কাবাঘর নির্মাণ ও কতিপয় মো’যেযা – তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন   

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।