হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ৩
হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ)- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একদিন এক যুবক তাঁকে দু’থলে আশরাফী উপহার দিয়ে পাঠালেন। বলে পাঠালেন, হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর সঙ্গে তাঁর পিতার বন্ধুত্ব ছিল। তারই নির্দেশন-স্বরূপ এ উপহার। তিনি নিজেই এগুলো উপার্জন করেছেন। অতএব সম্পূর্ণরূপে বৈধ। কিন্তু হযরত সুফিয়ান (রঃ) সে গুলো গ্রহণ না করে লিখে পাঠালেন, তোমার পিতার সঙ্গে আমার কেবল দ্বীনি বন্ধুত্ব ছিল, কোনরূপ পার্থিব সম্পর্ক নয়। কাজেই এই আশরাফী নেওয়া গেল না।
এ ঘটনা হযরত সুফিয়ান (রঃ) এর পুত্র শুনতে পেয়ে বললেন, আমি অনেকগুলো সন্তানের পিতা এবং অভাব-গ্রস্ত। আপনি ঐ আশরাফী ফেরত না পাঠিয়ে আমাকে দিলে আমার বড় উপকার হত। পুত্রের কথা শুনে হযরত সুফিয়ান (রঃ) বললেন, দ্বীন সম্পর্ককে এভাবে পার্থিব বিষয় দিয়ে নষ্ট করবেন না। তবে সে যদি নিজে তোমাকে কিছু দেয়, তুমি তা নিতে পার।
তিনি কারো কাছ থেকে কোন উপহার গ্রহণ করতেন না। এক ব্যক্তির উপহার গ্রহণ না করায় তিনি বলেন, এমন নয় যে, আপনি আমাকে উপদেশ দান করছেন, আর তাঁর বিনিময়স্বরূপ আমি এ উপহার দিচ্ছি। অতএব আপনি এটা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক কেন? তিনি বললেন, আমি তোমাকে উপদেশ দিয়ে থাকি। প্রয়োজন হলে হয়তো তোমাকেও দেব। তোমার তোহফা গ্রহণ করলে তোমার প্রতি আমার কিছুটা আকর্ষণ বেড়ে যেত। আর এর নামই হল দুনিয়া- যা থেকে আমি দূরে থাকতে চাই। আল্লাহ ছাড়া কোনদিকেই আমার এতটুকু ঝোঁক নেই। তুমি তা সৃষ্টির জন্য মোটেই চেষ্টা করো না।
তিনি চলেছেন কোন প্রাসাদের পাশ দিয়ে। তাঁর সঙ্গী বেশ মনোযোগ সহকারে প্রাসাদ দেখতে লাগলেন। তিনি তা লক্ষ্য করে বললেন, ধনী লোকেরা এভাবে বৃথা ব্যয় করে। আর দেখতে লাগলেন। তিনি তা লক্ষ্য করে বললেন, ধনী লোকেরা এভাবে বৃথা ব্যয় করে। আর সেগুলো যারা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে, তারাও পাপে লিপ্ত হয়।
একবার তিনি এক মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত সবাই সে ব্যক্তির গুণগাণ করছে। এসব দেখে শুনে তিনি বললেন, তোমরা যে-যা-ই বল, লোকটা কিন্তু মোনাফেক ছিল। আগে জানলে আমি তাঁর জানাযায় শামিল হতাম না। তাঁর প্রমাণ হিসেবে তিনি বললেন যে, দুনিয়ার লোক তাঁর প্রশংসা করছ। অর্থাৎ দুনিয়াদারদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। এটা সুলক্ষণ নয়।
একদিন দেখা গেল, গায়ের জামাটি উল্টা করে পরেছেন। কে যেন বলল, হুজুর, জামাটি ঠিক করে নিন। তিনি বললেন, তোমাদের চোখে ভালো দেখাবার ইচ্ছায় আমি জামা পরিনি। পরেছি কেবল আল্লাহর জন্য।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া