হযরত আবু হাশেম মক্কী (রঃ)-পর্ব ১
মুসলিম দুনিয়ার খলীফা হেশাম বিন আবদুল মালেক। মহা-প্রতাপশালী, মহামান্বিত। কিন্তু তিনিও এক মহাতাপসকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি শাসক। শাসক কাজে নিযুক্ত থেকে আমি কিভাবে মুক্তি পেতে পারি।
দরবেশ উত্তর দিলেন, আপনার প্রতিটি দেরহাম যেন সিদ্ধ স্থান থেকে উপার্জিত হয় আর সিদ্ধ স্থানে ব্যয় করা হয়। তা কি সম্ভব? খলীফার কুণ্ঠিত জিজ্ঞাসা। জাহান্নামের ভয়ে যে ভীত আর জান্নাতের লোভে লালায়িত, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যার উদ্দেশ্য, তার পক্ষ সেটি খুবই সহজ ও সম্ভব।
এই মহা প্রাজ্ঞ সাধক হলেন হযরত আবু হাশেম মক্কী (রঃ)। অত্যন্ত আল্লাহভীরু, ধর্মনিষ্ঠ এক মানুষ। জগতের বহু উজ্জ্বল পুরুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটেছিল তাঁর। বিশেষ করে হযরত আনাস (রাঃ) ও হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখের সান্নিধ্য তাঁর ভাবী জীবনকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।
বহু বিদগ্ধ পণ্ডিত বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর জীবনালেখ্য আলোচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হযরত আবু ওসমান মক্কী (রঃ)।
তাঁর বক্তব্য ছিল, পার্থিব কামনা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, বিচার দিবসে পার্থিব বিষয়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বলা হবে, যে বস্তুগুলোকে নিকৃষ্ট বলে আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট করেন, এরা মনের আনন্দে সেগুলোকেই গ্রহণ করে। আজ এইজন্য এদের কার্যকলাপকে পদপিষ্ট করা হল।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে এমন কোন বিষয় বা বস্তু নেই, যা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হয় না, ব্যগতা বা অস্থিরতার শিকার হতে হয় না। তার কোন আনন্দময় পরিণতি নেই। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর তুচ্ছতম বস্তুর প্রতি মানুষের আসক্তি পরকালের বৃহতম বস্তুসমূহ থেকে তাকে বঞ্চিত করে।
মানুষের জন্য দুটি বিষয়ই মূল কথা। প্রথমটি হল, জিনিস তার জন্য সংরক্ষিত তা সে পাবে। যদি তার থেকে সে দূরে পালিয়ে যায়, তবু তা পেছনে পেছনে ছুটে যাবে। দ্বিতীয়টি হল, যা তার নয়, অন্যের জন্য রাখা হয়েছে, তা সে পাবে না। তার জন্য যত চেষ্টায় সে করুক, প্রাণপাত করেও সে কিছুতেই তা থেকে পেতে পারে না।
তাঁর আর একটি কথা খুবই মূল্যবান। তিনি বলতেন, দোয়া না করার ফল দোয়া করে ব্যর্থ হওয়ার দুঃখও বিপদ থেকে বেশী মারাত্মক।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া