হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১২
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
১৫। হযরত রাবেয়া (রঃ) এর প্রার্থনা ছিল খুবই নিগূঢ়, ব্যঞ্জনাধর্মী। যেমন-তিনি বললেন, প্রভু গো! বিচার দিবসে আপনি যদি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন, তাহলে আমি আপনার এমন এক গোপন রহস্য ফাঁস করব, যাতে জাহান্নাম আমার থেকে হাজার বছরের পথ দূরে পালিয়ে যাবে।
তাঁর প্রার্থনা সরল, কিন্তু সঙ্কেতময়। তিনি বললেন, প্রভু আমার! এ জগতে আমার জন্য যা রেখেছেন তা আপনার শত্রুদের দিয়ে দিন। আর ঐ জগতে আমার জন্য যা নির্দিষ্ট, তা আপনার মিত্রদের দান করুন। আমি ওসবের প্রত্যাশী নই। আমার জন্য আপনিই যথেষ্ট। জাহান্নামের ভয়ে আমি যদি আপনার এবাদত বন্দেগী করি, তাহলে আপনি আমাকে জাহান্নামে ছুঁড়ে দিন।
আর জান্নাতের আশায় যদি আপনার এবাদত করে থাকি, তাহলে আমাকে তা থেকে বঞ্চিত করুন। আর যদি শুধু আপনার উদ্দেশ্যেই এবাদত করে থাকি, তাহলে দয়া করে আমাকে আপনার চির সন্তুষ্টি দান করুন। আপনার দীদার থেকে আমি যেন বঞ্জিত না হই।
তাঁর প্রার্থনার অতলস্পর্শী আবেদন মানুষের মর্মমূল কাঁপিয়ে দেয়। আপনি যদি আমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন, তাহলে আমি আর্ত-চীতকারে বলবো, প্রভু গো! আমি তো আপনাকে ভালোবাসতাম। তারপরেও কি সেই প্রিয় বন্ধু তার বন্ধুর সাথে এরূপ ব্যবহার করে? এই প্রার্থনার উত্তরে তিনি শুনতে পান, তুমি আমার ওপর এমন ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করো না। তুমি আমার সেই বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা রোজ কিয়ামতে আমার সঙ্গে কথা বলবে।
কি আপ্লুত উচ্চারণ তাঁর প্রভু গো! এ জগতে আমার একমাত্র ইচ্ছা ও কাজ আপনাকে স্মরণ করা ও স্মরণে রাখা। আর পরকালে আপনার দীদারের প্রত্যাশা। প্রভু আমার! একমাত্র আপনিই আমার কামনা ও লক্ষ্য। আমার হৃদয়কে আপনি আমার সংস্পর্শেই রাখুন আর আমার দুর্বল নামজকে কবুল করুন।
বিদায় ক্ষণেঃ
অবশেষে একদিন তাঁর প্রভুর ডাক এল, আসন্ন হয়ে উঠল জগত ও জীবন থেকে বিদায় নেবার পালা। তাঁর অন্তিম শয্যার পাশে ছুটে এলেন কত বিশুদ্ধ-হৃদয় মানুষ। হযরত রাবেয়া (রঃ) তাঁদের বললেন, আপনারা দয়া করে আল্লাহর দূতগণের জন্য জায়গা করে দিন। তাঁরা আসছেন। তাঁর কথায় সবাই বাইরে চলে গেলেন। ঘরের দরজা বন্ধ করা হল। বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা শুনতে পেলেনঃ হে পবিত্রআত্না! তোমার প্রভুর দিকে সানন্দে প্রত্যাবর্তন কর।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া