হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৭
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত হাসান (রঃ) তাঁর কাছে মারেফাতের শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, কয়েকটা টুপি সেলাই করে আমি বিক্রি করি। আর দুটি মুদ্রা পাই। একটি নিই ডান হাতে, অন্যটি বাম হাতে। দুটিকে একই হাতে ধারণ করি না। তা করলে হয়ত মুদ্রা সঞ্চয়ের দিকে মনটা ঝুঁকে যেতে পারে। আর তা হতে পারে আমার পথভ্রষ্ঠতার কারণ। এভাবে আমি আমার প্রবৃত্তির ওপর জয়ী হয়েছি।
অর্থাৎ তিনি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে মারেফাতের শিক্ষালাভ করেন, কোন মানুষের মাধ্যমে নয়।
৯। হযরত হাসান (রঃ) বলেন, শেষ বিচারের দিনে যদি আল্লাহর দীদার লাভে বঞ্চিত হই, তাহলে আমি এত বেশী কান্নাকাটি করব যে, তা দেখে জান্নাতীরা আমার প্রতি মমতায় অভিভূত হয়ে পড়বে।
তাঁর কথা শুনে হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ) বললেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু যে লোক আল্লাহর দেখা পাওয়ার জন্য এই দুনিয়াতে কাঁদে না, সে পরকালেও কাঁদবে না।
১০। স্বামী গ্রহণে তাঁর অনীহা ও আপত্তির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তিনটি বিষয় নিয়ে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। কেউ যদি এগুলি দূর করতে পারত, তাহলে আমি অবশ্যই স্বামী গ্রহণ করতাম। সে তিনটি বিষয় হল-
১। কেউ কি বলতে পারেন, ঈমানের সঙ্গে আমার মৃত্যু হবে?
২। রোজ কিয়ামতে আমি কি ডান হাতে আমার আমলনামা পাব?
৩। ঐ দিন একটি দল যাবে জান্নাতে অন্যটি জাহান্নামে। আমি কোন দলে থাকব বলতে পারে না?
তাঁকে যাঁরা প্রশ্ন করেন তাঁরা স্বীকার করেন, এগুলোর উত্তর দেওয়া এ মূহূর্তে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। তখন হযরত রাবেয়া (রঃ)-এর উত্তরঃ এসব চিন্তা যার মাথায় দিনরাত ঘুরপাক খায়, সে কিভাবে বাড়তি একটা চিন্তা মাথায় নিতে পারে?
প্রশ্নঃ আপনি কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাবেন?
উত্তরঃ এই মাটি থেকে এসেছেন, মাটির নিচেই যাব।
প্রশ্নঃ আপনি এখন কি করছেন?
উত্তরঃ অনুতাপ করছি।
প্রশ্নঃ সেটা কি রকম?
উত্তরঃ আমি ঐ জগতের খাবার খাই আর কাজ করি এই জগতের।
প্রশ্নঃ আপনি যেমন মধুর ভাষায় কথা বলেন, তাতে সরাইখানার কর্মাধ্যক্ষা হলে আপনাকে বেশ মানাত।
উত্তরঃ আমি নিজেই তো এক সরাইখানা। আমার ভেতরে যা আছে আমি তা বাইরে যেতে দিই। কিন্তু বাইরের কোন কিছু ভেতরে ঢুকতে দিই না। কে এল, কে গেল, আমার তা জানার দরকার নেই। আমি শুধু আমার ভেতরটা বা অন্তর নিয়ে ব্যস্ত, বাইরেরটা নিয়ে নয়।
রাসূল কারীম (সাঃ)-কে তিনি এক রাত্রে স্বপ্ন দেখেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
রাবেয়া (রঃ) উত্তর দেন, আপনাকে ভালোবাসে না কে? তবে আমি ডুবে আছি আল্লাহর প্রেমে। সেখানে আর কাউকে ভালোবাসি কিনা ভেবে দেখতেও পারছি না, এ রকম আমার অবস্থা।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া