হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ২
হযরত রাবেয়া বসরী (রঃ)- পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর স্বপ্ন প্রদত্ত বাণী বৃথা যায়নি। অভাব-পীড়িত, অতিদরিদ্র মানুষটি সত্যিই এক মহিমান্বিত কন্যা-রত্ন লাভ করলেন। এ কন্যাই রমণীকুল শিরোমণি মহাতাপসী রাবেয়া (রঃ)। এক দরিদ্র-জীর্ণ পরিবারে নিষ্প্রদীপ কুটিরে আলোর ফুল হয়ে তিনি ফুটলেন। তাঁর আলোক প্রভায়, সুবাসে শুধু সেই কুটিরই নয়, তমাসাচ্ছান্ন পৃথিবীর যাবতীয় অন্ধকার দূর হয়ে গেল।
হযরত রাবেয়া (রঃ) ক্রমশঃ বড় হলেন। কিন্তু সহসা তাঁর জন্য পৃথিবী হঠাৎ শূন্য হয়ে গেল।
হযরত রাবেয়া (রঃ) ক্রমশঃ বড় হলেন। কিন্তু সহসা তাঁর জন্য পৃথিবী হঠাৎ শূন্য হয়ে গেল। প্রথমে চির-বিদায় নিলেন রত্ন প্রসবিনী জননী। পরে পিতা। রয়ে গেল চারটি অনাথা কন্যা।
শুরু হল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। মা নেই, বাপ নেই, অথচ ক্ষুধা আছে, তৃষ্ণা আছে, আছে জীবন। চার বোনে এর ওর বাড়ীতে কাজ করতে লাগলো। ঝিয়ের কাজ। কখনও খাওয়া জোটে, কখনও জোটে না। এক আধাবেলা খেয়ে বা না খেয়ে তাঁদের দিন যায় রাত যায়। তার ওপর বসরায় দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। কে কাকে খেতে দেয়, কে-ই বা কাকে দেখে। বাপ-মা তাদের আদরের সন্তানদেরও বেঁচে খেতে শুরু করে। তখন কে বা কার! তখন নিজের পেট বড় হয়ে দেখা দেয় আর কারো কথা মনে আসে না। রাবেয়া (রঃ) এর তিন বোন এ দুঃসময় কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তাদের আর হদিস পাওয়া গেল না। এখন রাবেয়া (রঃ) একা বিশাল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা।
অবশ্য আরও একজন আছেন। তিনি অনন্ত করূণাময় আল্লাহ মানুষের মহান প্রতিপালক। মানুষের জীবনে তিনি জেগে আছেন প্রতি পল, অনুপল পর্যন্ত।
নিঃসঙ্গ অবস্থায় কান্নাকাটি করে কিছুদিন কাটল রাবেয়া (রঃ)-এর। পরে একদিন অনাথিনীকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গেল এক পাষাণ-হৃদয়। আর তাঁকে বিক্রি করে নিল ততোথিক কঠোর হৃদয় এক গেরস্তের কাছে।
রাবেয়া এখন ক্রীতদাস। নীরবে বাড়ীতে দিন-রাত কাজ করেন। এতটুকু এদিক-ওদিন হলে কপালে জোটে প্রহার আর নির্যাতন, নিষ্ঠুর গঞ্জনা। এক ফোঁটা আদর নেই কথাও, নেই ভালোবাসা। শুধু কাজ আর কাজ। আর পীড়ন আর যন্ত্রণা। কিন্তু সহ্যের একটা সীমা আছে।
আর পারেন না রাবেয়া (রঃ)। একদিন মনিবের বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন গোপনে। মুক্তি। অবাধ মুক্তি। মুক্তির নেশায় তিনি দৌড়াতে শুরু করলেন। দৌড়াতে গিয়েই আচমকা মুখ থুবড়ে পড়লেন মাটিতে। একখানা হাত সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গেল। আল্লাহ তাঁকে কোন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন, হয়তো তখন তিনি তা বুঝলেন না।
হাতের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তিনি হাত উঠালেন মহান প্রতিপালকের দরবারে। আল্লাহ গো! আমি এক অসহায় দাসী। আমার একখানি হাত গেল, যাক। তার জন্য আমার কোন দুঃখ নেই। কেবল আপনি আমার ওপর প্রসন্ন থাকুন, তাহলেই আমি খুশী। প্রভু আমার! আপনি আমার ওপর প্রসন্ন কিনা, দয়া করে আমাকে জানান।
তাঁর আপ্লুত প্রার্থনায় সাড়া পাওয়া গেল। আকাশ থেকে উত্তর আসে-দুঃখ করো না, হতাশ হয়ো না। দুঃখে-কষ্টে ভেঙে পড়ো না। মনে রাখবে, রোজ কিয়ামতে তোমার যে মর্যাদা হবে, তা দেখে ফেরেশতারাও ঈর্ষা পোষণ করবে। সবাই তোমাকে সাধুবাদ দেবে। অভিনন্দন জানাবে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া