হযরত ফোজায়েল (রঃ)- শেষ পর্ব
হযরত ফোজায়েল (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ফোজায়েল (রঃ) আল্লাহ্র কাছে প্রায়ই বলতেন, প্রভু গো! আপনি অনেক সময় আমাকে অনাহারে রাখেন এমনকি রাতের বেলায় আমার ঘরে আলোর ব্যবস্থাও থাকে না। জানি, এসব আপনার প্রিয়জনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমাকে আপনি এ মর্যাদা দান করলেন কেন জানি না, তবে যদি এতই করলেন, তবে আরও রহমত দান করুন। আমাকে আপানার শাস্তি থেকে রেহাই দিন।
তাঁকে কখনও হাসতে দেখা যায়নি। কিন্তু যেদিন তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয়, সেদিন তিনি হেসে ওঠেন। কারণ জিজ্জেস করলে তিনি বললেন, বুঝলাম যে, আল্লাহ্ আমার ছেলের মৃত্যুতে খুশী। তাই তাঁর খুশীর সঙ্গে আমিও খুশী হলাম। আর স্বাভাবিকভাবে আমার মুখে হাসি ফুটল।
তিনি বলেন, নবী- রাসূলগণের প্রতি আমার কোন ঈর্ষা নেই। কেননা, তারাও মৃত্যু, কবর, কবর, কিয়ামত, বিচার ও পুলসেরাতের শিকার। হাশরের মাঠে তাঁরাও নফসী নফসী করবেন। ফেরেশতাগণের ওপরও আমার কোন হিংসা নেই। কেননা, মানুষের চেয়ে তাদের ভয় আরও বেশী। আমার হিংসা কেবল তাদের প্রতি যারা এখনও মাতৃগর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেনি।
এক ব্যক্তির চমৎকার কোরআন পাঠ শুনে তিনি তাঁকে তাঁর পুত্রের কাছে, কোরআন শিক্ষা করতে বললেন। তবে সূরা ‘আল কারিয়া’ পাঠ করতে নিষেধ করলেন। কেননা, ঐ সূরায় রোজ কিয়ামতের যে বর্ণনা আছে, তা শুনে ছেলেটি হয়ত বেসামাল হয়ে ওঠবে। হলও তাই। কারী সাহেব তাঁর ছেলের কাছে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করলেন, আর ঘটনাচক্রে ‘আল কারিয়া’ সূরাটিও আবৃত্তি করলেন। তা শুনে ছেলেটি এত জোরে চেঁচিয়ে উঠল যে, মুহুর্তের মধ্যে সে মারা গেল।
হযরত ফোজায়েল (রঃ) মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে যান। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলে রাখেন, তাঁর মৃত্যুর পর ও স্ত্রীর মৃত্যুর আগে স্ত্রী যেন মেয়ে দুটিকে নিয়ে আবু কোবায়েস পর্বতে গিয়ে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করেন যে, প্রভু গো! আমার স্বামীর ইচ্ছাক্রমে এ প্রার্থনা করছি। জীবিতকালে আমি আমার কন্যা দুটির হেফাজাত করেছি সাধ্যমত। এখন আমার জীবন সন্ধ্যা ঘনায়মান। তাই অনাথিনীদের আপনার হাতেই সমর্পণ করছি। আপনি ইচ্ছা মত এদের ব্যবস্থা করুন।
অতঃপর একদিন হযরত ফোজায়েল (রঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলেন। একদিন তাঁর পত্নীর জীবনেও শেষলগ্ন এসে গেল। স্বামীর নির্দেশমত কন্যাদ্বয়সহ আবু কোবায়েস পর্বতে গিয়ে তিনি আল্লাহ্র দরবারে অন্তিম প্রার্থনা জানালেন। আর তখন ঐ পথ ধরে চলছিলেন ইয়েমেনের বাদশাহ। তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই পুত্র। তিনি ফোজায়েল (রঃ)-এর পত্নীর প্রার্থনা শুনে কৌতূহল- ক্রান্ত হয়ে তাদের কাছে এলেন। সব বৃত্তান্ত শুনলেন। তারপর বললেন, আপনার যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে আমার এই ছেলে দুটির সঙ্গে আপনার মেয়েদের বিয়ে দিতে চাই। তাপস-পত্নী বললেন, না, আমার কোন আপত্তি নেই।
জনপদ থেকে তখনই পালকি সংগ্রহ করে এনে ইয়েমেনের সুলতান সাড়ম্বরে তাদের দেশে নিয়ে গেলেন এবং মহা ধুমধামের সঙ্গে শুভ শাদী মোবারক সম্পন্ন হল।
আল্লাহ্র প্রিয়জন, এই মহান তাপস অর্জন করলেন আল্লাহ্র অপূর্ব রহমত।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া