হযরত ফোজায়েল (রঃ) – পর্ব ৩

হযরত ফোজায়েল (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ফোজায়েল (রঃ) বড় ব্যথা পেলেন। বললেন, আমার সব কথা বৃথা গেল। এখনই আপানার অবিচার শুরু হয়ে গেল। আপনার ভার লাঘব করার জন্য আমি আপনাকে মুক্তির দিকে আহ্বান করছি।

আর আপনি আমার বোঝা ভারী করে নিজেকে মৃত্যু-গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। হায়, যায়, আমার একটি কথাও কাজে লাগল না। এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। খলীফা ও তাঁর অনুচর ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়া মাত্র তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন।

বাদশাহ বারমাকীকে বললেন, হ্যাঁ, ফোজায়েল (রঃ)-ই প্রকৃত সাধক বটে।

পিতা-পুত্রঃ

নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে খুব আদর করছেন ফোজায়েল (রঃ)। ছেলে বলল, আব্বা! আপনি কি আমাকে খুব ভালোবাসেন? পিতা বললেন অবশ্যই। প্রাণের ন্যায় ভালবাসি।

আপনি কি আল্লাহকে ভালোবাসেন?

নিশ্চয়ই। তাঁকে আমি মনে-প্রাণে ভালোবাসি।

কিন্তু তা কি করে সম্ভব? একই সময়ে একই হৃদয়ে দু’জনের ভালোবাসা কি স্থান পায়?

ফোজায়েল (রঃ) চমকে উঠলেন। এ কথা কি তাঁর পুত্রের? নাকি মহান আল্লাহ্‌র? সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় পুত্রকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে তিনি আল্লাহ্‌র দরবারে হাত ওঠালেন। প্রভু গো! আমি শুধু আপনারই ভালোবাসায় আমার হৃদয়-মন সমর্পণ করলাম।

আর একটি পরিবর্তন এল তাঁর পবিত্র জীবনে।

তিনি একবার দেখলেন, আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ বিলাপ করছে। সকাতর প্রার্থনা জানাচ্ছে মহিমাময় প্রভুর দরবারে। এ দৃশ্য দেখে তিনিও বিচলিত হয়ে বললেন, প্রভু আমার! এতগুলো মানুষ এক সঙ্গে যদি কোন কৃপণের কাছে কাকুতি-মিনতি করে সাহায্য প্রার্থী হয়। তাহলে সেও কিছুতেই তাদের আর নিরাশ করতে পারে না।

প্রভু গো! আপনি দাতা শ্রেষ্ঠ, দয়াময়! নিঃসন্দেহে আপনি প্রার্থনা মঞ্জুর করবেন।

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি মনে করেন আরাফাতে কান্নারত সবাইকে আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন? তিনি বললেন। এদের মধ্যে অধম ফোজায়েল যদি না থাকত, তাহলে সম্ভবতঃ সকলেই আল্লাহ্‌র কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করত। বিনয় মানুষকে কী মহত্ব দেয়। ঘটনাটি তাঁর এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর।

মানুষ কখন আল্লাহ্‌ প্রেমের শীর্ষবিন্দুতে পৌছায়? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানুষ যখন আল্লাহ্‌র প্রতি একই মনোভাব পোষণ করে- তাঁর কাছ থেকে কিছু লাভ করুক বা না করুক।

প্রশ্নঃ কোন লোক হয়ত এই ভয়ে “লাব্বায়েক” (আল্লাহ্‌ আমি হাজির) বলে না যে, পাছে তাঁর উত্তরে তাঁকে শুনতে হয় ‘লা-লাব্বায়েক’ (না, তুমি উপস্থিত হওনি) – এই ধরনের লোক সম্বন্ধে আপনি কী ধারণা পোষণ করেন?

উত্তরঃ আমি মনে করি, এ লোকের মর্যাদা লাব্বায়েক উচ্চারণকারীদের অপেক্ষা অনেক বেশী।

ফোজায়েল (রঃ) সম্পর্কে হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, দুনিয়ার উন্নতির উপায় যিনি অনুসন্ধান করেন, তিনি লোক-চক্ষে হেয়প্রতিপন্ন হন। ইবনে হাম্বল (রঃ) একবার তাঁর কাছে কিছু উপদেশ শোনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ফোজায়েল (রঃ) বলেন, আপনি অনুসারী হোন, কিন্তু অনুসরণীয় হবেন না। হযরত বিশর হাফী (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, পরহেজগারী উত্তম না রেজা? তিনি জবাব দেন, রেজা। কেননা, রেজাতে যিনি সন্তুষ্ট থাকেন, তিনি যা পান তাঁর চেয়ে বেশী চান না। যা পেয়েছেন তাতেই তিনি তৃপ্ত।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ফোজায়েল (রঃ) – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।