আমার ফেসবুকের মেসেজ অপশন টা হাইড করা। পরিচিত ছাড়া কেউ সেখানে মেসেজ পাঠাতে পারে না। কিন্তু মেসেজ বাটনে জ্বলজ্বল করা থাকা লাল চিহ্নটা বলছে কেউ মেসেজ পাঠিয়েছে। “জ্বীন কফিল” নামের কেউ মেসেজ পাঠিয়েছে।
আমার ফ্রেন্ড লিস্ট ছোট মোটামুটি সবাইকেই চিনি। জ্বীন কফিল নামে কেউ আছে বলে ঠিক মনে পড়লো না। তাহলে কি কেউ আবার নাম বদলে ফেলল?
এমনটা মাঝে মাঝেই হয়। পরিচিত মানুষ গুলো নাম পাল্টিয়ে কেমন অপরিচিত হয়ে যায়।
যাক আমি মেসেজ ওপেন করে দেখি সেখানে লেখা “হা হা হা”! তারপর অট্টাহাসি দেওয়ার ইমো।
কি রে ভাই?
কেডা এইডা?
শুরুতেই এমন করে কেন?
নিশ্চই পরিচিত কেউ, ফাজলামি করতেছে। বললাম
-আপনি কে ভাই?
-হা হা হা! আমি আপনার গোলাম আমার মালিক। আপনার ইচ্ছাই আমার কাছে হুকুম।
খানিকটা বেকায়দায় পড়লাম। গোলাম হতে পেরে কেউ এতো খুশি হতে পারে আমার জানা ছিল না। বেটা আসলেই ফাজলামি করতেছে। কিন্তু কে এইটা? নিশ্চয় আমার পরিচিত কেউ হবে।
কিন্তু কে?
আমি জ্বীন কফিলের প্রোফাইলে গেলাম। প্রথম কথা হচ্ছে জ্বীন কফিল আমার বন্ধু না। তাইলে বেটা আমাকে মেসেজ পাঠালো কিভাবে?
কি জানি?
জ্বীন কফিলের পিকচার গুলো দেখতে লাগলাম। বেশ একটা রাজকীয় ছবি দেওয়া প্রোফাইল পিকচারে। তবে একটু যেন পুরানো আমলের। কাভার ফটোটা দেখে মনে হচ্ছে আগ্নেওগীরির ভিতরকার ছবি। স্টাটাসে কেমন যেন অদ্ভুদ ভাষায় কিছু লেখা। তাতে আবার কয়েক হাজার লাইকও আছে। বেটা নিশ্চই অটো লাইকার ব্যবহার করে। ফাজিল একটা।
আমি আবার ইনবক্সে ফেরত্ আসলাম। খানিকটা বিরক্ত। অপিচিত মানুষের কাছ থেকে এই রকম ইয়ার্কি মার্কা মেসেজ দেখলে আমার বিরক্ত লাগে। বললাম
-আপনি কে ভাই?
-আমি আপনার গোলাম হুজুর!
-গোলাম? কোন গোলাম?
-ছি ছি জনাব, আমি ঐ গোলাম না। আমির শুয়োরের বাচ্চা না, আমি জ্বীনের বাচ্চা।
-শুনেন ভাই আমার আপনার সাথে ইয়ার্কি মারতে ভাল লাগছে না। আপনি প্লিজ অন্য কারও সাথে ফাজলামো করেন।
-কিন্তু হুজুর, আপনি যদি তিনটা ইচ্ছা না বলেন তাহলে আমি তো মুক্তি পাবো না।
-দেখুন সহ্যের একটা সীমা থাকা উচিত্। আমি এমনি ভাল কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে চরম মুখ খারাপ করি।
-হুজুর আপনি আমাকে যতই গালি দেন না কেন তিনটি ইচ্ছা পুরন না করে আমি আপনার পিছু ছাড়বো না।
মুখ দিয়ে খারাপ কথা আনতে গিয়েও আনলাম না। এমনিতে বেশ রাত হয়ে গেছে। কালকে সকালে আবার ক্লাস আছে। এখন যদি গালাগালী শুরু করি তাহলে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সহজে ঘুম আসবে না। কাল সকালের ক্লাস মিস হয়ে যেতে পারে। বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে একটা ইচ্ছা পুরন কর। আমাদের ক্লাসে তাইফা নামের একটা মেয়ে আছে। মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ। এমন কিছু কর যেন মেয়েটা আমার প্রেমিকা হয়ে যায়।
-জো হুকুম মালিক। আর দ্বিতীয় ইচ্ছা মালিক।
বললাম
-আগে প্রথমটাই পুরন কর। যদি পুরন করতে পারো তাহলে আগামী কালকে দ্বিতীয় ইচ্ছাটা বলব।
-আচ্ছা মালিক।
-শুভ রাত্রী!
আমি পিসি বন্ধকরে ঘুমাতে গেলাম। নিজের কাছেই কেমন একটা হাস্যকর হাস্যকর লাগছিল। যাক জীন কফিল! ফেসবুকে জীন।
সকালবেলা ক্লাসে ঢুকেই একটা অদ্ভুদ জিনিস লক্ষ্য করতে লাগলাম। কিছু একটা যেন ঠিক স্বাভাবিক ঠেকলো না আমার কাছে। এদিক ওদিক তাকাতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। তাইফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের দৃষ্টি দেখেই বুকের ভিতর কেমন ধক করে উঠলো। এই মেয়েতো কোন দিন আমার দিকে ফিরেও তাকায় না আজ তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
তাহলে কি?
আমি হাস্যকর সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দিলাম। এমন কিছু হতেই পারে না।
ক্লাস শেষে যখন বের হতে যাবো তখন তাইফা একেবারে আমার সামনে এসে হাজির। সবার সামনে আমার হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গেল তিনতলায়। এটা আমাদের ডিপার্টমেন্ট ডেটিং জোন হিসাবে পরিচিত।
আমার কিছুতেই তর সইছিল না। কখন বাসায় যাবো আর কখন আবার জ্বীন কফিলের সাথে কথা বলবো। কিভাবে এটা হল আমি নিজেই জানি না তবে কাজ যে হয়েছে এটা একশভাগ নিশ্চিত। নতুবা যে মেয়েটা কোন দিন আমার সাথে ঠিক মত কথাও বলে নি সে আজকে সবার সামনে আমার হাত ধরে তিন তলায় কেন নিয়ে যাবে।
কেন আজকে বলবে যে সে আমাকে পছন্দ করে। কোন ভাবেই সম্ভব না। এই সব জ্বীন কফিলের কেরামতি!
এমন কি বাসে করে আসার সময় প্রায় সারটা পথ তাইফা সারাটা সময় আমার সাথে কথা বলেছে! কত কথা!
যেন কত দিনের পরিচিত আমার!
বাসে করে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকবার মোবাইল থেকে মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু জ্বীন কফিলকে খুজেই পেলাম না। এমন কি মেসেজ বক্সেও জীন কফিলের নাম খুজেই পেলাম না। মনে হয় পিসি ছাড়া জ্বীন কফিল ধরা দেয় না।
বাসে করে বাসায় যাওয়ার সময় চিন্তা করতে লাগলাম বাকি দুইটা ইচ্ছা কি চাওয়া যায়। এমন কিছু চাইতে হবে যেন বাকি সারা জীবনে আর কিছু না করতে হয়।
বিলগেটের মেয়েকে বিয়ে করলে কেমন হয়?
জেনিফার ক্যাথরিন গেটস!
পরক্ষনেই চিন্তাটা বাদ করে দিলাম। ছি ছি! এই সব কি ভাবছি? তাইফার সাথে সবে মাত্র প্রেমটা হল। এখন অন্য কিছু ভাবা যাবে না। আচ্ছা অনন্ত জলীলের ফিল্মের নায়ক হলে কেমন হয়?
নাহ!
এই কাজ জ্বীন কফিলও পারবে না।
যাক আমার মাথায় আর কিছু আসছিল না। তবে পুরো রাস্তা ধরে কেবল একটার পর একটা ইচ্ছার কথা চিন্তা করতে লাগলাম পরক্ষনেই সেটা বাতিল করে দিতে লাগলাম। কি চাওয়া যায় কিছুতেই খুজে পেলাম না।
বাসায় এসে হাত মুখ না ধুয়েই পিসি চালু করলাম।
-জ্বীন কফিল!
উত্তর এল সাথে সাথেই।
-হুকুম করুন মালিক।
-তুমি আছো?
কখন যে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না।
-তুমি কি সত্যিই জীন?
-একশ পার্সেন্ট।
-কিন্তু তোমরা না আগে চেরাগ বা প্রদ্বীপের ভিতর থাকতে।
-হুম। কিন্তু সেটা তো আলাউদ্দিনের সময়কার কথা। এখন আমরা আধুনিক?
-আমরা? আরও অনেকে আছে নাকি?
-কেন আপনি আমার ফেসবুক ওয়াল দেখেন নি? আমার ফেসবুক বন্ধুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। ফলোয়ারও প্রায় লাখ খানেক। এরা সবাই তো জ্বীন।
-তাই নাকি? তুমি দেখছি বিরাট সেলিব্রেটি।
-হুজুর লজ্জা দিচ্ছেন!
-না ঠিক আছে। তোমার প্রতিটা পোস্টে তো কয়েক হাজার লাইক কয়েকশ কমেন্ট। তুমিতো জ্বীন সমাজে বিরাট বিখ্যাত।
-আপনার দয়া হুজুর।
জ্বীনের সাথে কথা বলছি ভাবতেই কেমন অবাক লাগছে। যে কেউ শুনলে অবশ্য হাসবে। কাউকে বলা যাবে না। আমি জীন কফিলকে বললাম
-আচ্ছা আগে তো প্রদ্বীপ ঘষলে কিংবা প্রদ্বীপ থেকে মুক্ত করলে তোমরা সেই লোকের ইচ্ছা পূরন করতে। তা আমাকে কিভাবে খুজে পেলে , মানে আমার তিনটা ইচ্ছা কেন পূরন করতেছো?
-ওয়েল আগে যেমন আমরা প্রদ্বীপে থাকতাম এখন আমরা এপস এর ভিতর থাকি। আপনার কি মনে আছে আপনি গতকাল কে একটা এপসে এলাউবাটনে চাপ দিয়ে ছিলেন?
আমি কালকের কথা মনে করার চেষ্টা করি। আসলেই গতকালকে আমি ভুলকরে একটা অনলাইন এপস চালু করে ফেলেছিলাম। যদিও যে কোন এপস্ থেকেই আমি দুরে থাকি তবে এটা চালু করে ফেলেছিলাম ভুল করে।
বুঝলাম এরা আসলেই ডিজিটাল হয়ে গেছে। ডিজিটাল আলাদিনের দৈত্য!
জ্বীন কফিল বলল
-তো হুজুর আপনি তৈরি তো?
-হুম।
-আপনি কি আপনার দ্বিতীয় ইচ্ছাটা বলতে প্রস্তুত।
-হুম।
আমি মেসেজ বাক্সে টাইপ করলাম
“আমি এই দেশের আজীবন….
কেবল এই পর্যন্ত লিখেছি আর তখন কারেন্ট চলে গেল ধুপ করে। শ্লার কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলি না!
মিনিমাম এক ঘন্টার আগে তো কারেন্ট আসবে না। এই একঘন্টা আমি কাটাবো কিভাবে?
মনে হচ্ছিল কারেন্টটারে চিবিয়ে খাই। ইস আমার যদি একটা ল্যাপটপ থাকতো তাহলে তো আর এই ঝামেলায় পড়তে হত না। আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে কারেন্ট আসার অপেক্ষায় থাকলাম। তৃতীয় ইচ্চাটা কি হবে এই চিন্তা করতে লাগলাম।
কারেন্ট আসলো ঠিক এক ঘন্টা পরে। আমি আবার তরিঘরি করে কম্পিউটার চালু করলাম। কিন্তু ফেসবুক চালু করতেই লগিন পেইজ টা আসলো। আমার পিসি কেউ হাত দেয় না তাই সাধারন লগ আউট করি না। ফেসবুক চালু করতেই আমার হোম পেইজ চলে আসে।
আমি লগিন করলাম ঠিক তখনই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। লেখা উঠলো “ইয়োর একাউন্ট হ্যাজ বিন ডিজএবেল”।
কেন?
অসম্ভব?
আরও চার পাঁচবার চেষ্টা করলাম প্রত্যেকবারই একই ফলাফল। আমার একাউন্ট এমন কেন হল?
মানুষের একাউন্ট হ্যাক হয় আমার টা সোজাসুজি ডিজএবেল হয়ে গেল?
তাহলে?
জ্বীন কফিল কি হ্যাকারও নাকি?
কিছু একটা মনে হতেই আমি মোবাইল বের করে তাইফার ফোন ফোন দিলাম। বাসে আসার সময় তাইফার সাথে কথা হয়েছিল।
-হ্যালো? কে বলছেন?
আমি যেন আবারও আকাশ থেকে পড়লাম। বাসে আসার সময় তাইফা কি রকম আহ্লাদ করে কথা বলছিল আর এখন বলছে কে বলছেন?
-তাইফা বলছো?
-জি না এটা তো তাইফার নাম্বার না।
-কি?
কয় কি? তাহলে আমি কার সাথে কথা বললাম? তাইফার সাথে কি আমার আদৌও কথা হয়েছে?
ঠিক এমন সময় আমার ফোনে একটা ফোন এসে হাজির! হাতেই ছিল! রিংটোন শুনে নিজেই কেঁপে উঠলাম! স্ক্রিনে নাম দেখি সাজিবের নাম্বার!
রিসিভ করলাম!
-হ্যালো? ফয়সাল?
-হুম!
-কি রে আজকে এলি না কেন ক্লাসে?
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না! এতোক্ষন তাহলে? কি হল এসব!
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।