হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ২
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তখন রওজা মুবারক থেকে জবাব আসে, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ইয়া ইমামুল মুসলিমীন- হে মুসলিমগণের ইমাম, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকে মুসলিমগণের ইমাম বলে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাঁর মর্যাদা কোথায় গিয়ে পৌছায়, চিন্তার করলে আবেগ আপ্লুত হতে হয়। তিনি এক আশ্চার্য স্বপ্ন দেখলেন এক রাতে। রাসূলুল্লাহর পাক রওজা থেকে তিনি পবিত্র অস্থি তুলে জমা করছেন এবং একখানা আরেকখানা থেকে পৃথক করছেন। এই স্বপ্ন দেখে ভয়ে অস্থির হয়ে তিনি জেগে উঠলেন এবং বিখ্যাত স্বপ্নবিশারদ আল্লামা ইবনে সিরীনের এক শিষ্যের কাছে গিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলেন।
তিনি বললেন , এ স্বপ্নের অর্থ আপনি মহাবীর জ্ঞানরাজী, ফেকাহ ও হাদীসশাত্রে এরুপ বুৎপত্তি লাভ করবেন যে এর দ্বারা উক্ত শাস্ত্র- সমূহের ভাষ্যকার হবেন। আর সত্যকে অসত্য থেকে পৃথক করার ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দান করবেন। বলাবাহুল্য, এ স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থে ফলবতী হয়। তিনি আরও একবার স্বপ্ন দেখলেন, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন, হে আবু হানিফা, আল্লাহ আপনাকে আমার সুন্নত তরীকা জীবিত রাখার জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। নির্জনবাস করবেন না। শরীয়তের বিধান রক্ষায় তিনি ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী। এ বিষয়ে একটি ঘটনা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তখন মুসলিম দুনিয়ার খলীফা আস মনসুর। তিই বাগদাদের প্রধান কাজী ও অন্যান্য ওলামাকে ডেকে পাঠালেন।
তাঁরা এসে উপস্থিত হলেন। ওদিকে খলীফা মনসুর তাঁর এক বিশেষ অনুচরকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন খলীফা প্রত্যেক সহচরের নামে কিছু কিছু জমি- জায়গা লিখে দেন। নির্দেশ অনু্যায়ী সে কাজও সম্পন্ন হল। তারপর সাক্ষীস্বরূপ দস্তখত নেবার জন্য খলীফা তাঁর এক সহজর দলিলগুলি পাঠিয়ে দিলেন প্রধান কাজী শাবী ও অন্যান্য আলেমের কাছে।
প্রথমে প্রধান কাজী ও পরে অন্যান্যরা সই দিলেন। কিন্তু বেকে বলসেন আবু হানিফা (রঃ) সই না করে রাজকর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলেন, খলীফা এখন কোথায়? কর্মচারী জানালেন, তিনি এখন বালাখানায় ইমাম আজম বললেন, হয় আমাকে ওখানে নিয়ে চলুন না হয় তাঁকে এখানে আসতে বলুন। তবে সাক্ষী হবে সঠিক। কর্মচারী বললেন, প্রধান কাজীসহ সবাই যখন সই করেছেন, তখন আপনি অযথা আপত্তি করছেন কেন? ইমাম আজাদ বললেন, সে জেনে আপনার কাজ নেই। যা বলছি করুন। শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা খালীফার কানে গেল।
তিনি প্রধান কাজিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি দস্তখত করার সময় তা উপস্থিত থেকে শুনেছেন বা দেখেছেন? কাজি জবাব দিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, সেগুলি আপনার ইচ্ছাক্রমেই হয়েছে। তাই উপস্থিতির প্রয়োজনবোধ করিনি। খলীফা বললেন, এ কাজ ন্যায়গঙ্গত হয়নি। তাই আপনাকে আপনার পদ থেকে খারিজ করলাম। অতঃপর প্রধান কাজীর পদে চারজন বিশিস্ট ব্যক্তির মধ্যে যেকোন একজনকে নিযুক্ত করার কথা ভাবা হল।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া