হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৫
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৪র্থ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাসূলুল্লাহর প্রিয় দুই সহচর ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-এর এ বিবরণ শুনে শিউরে উঠলেন। এও কি সম্ভব? অথচ শুধু সম্ভব নয়, সত্য। ভালোবাসা, ভক্তি কাকে বলে, ওয়ায়েস (রঃ) তার এক প্রদীপ্ত প্রমাণ। আন্তরিক, অকপট, নির্মল ভালোবাসার এ নমুনা দেখে তাঁরা স্তম্ভিত। চোখের আড়ালে যিনি ছিলেন, তিনি কেমন করে সমগ্র চেতনা জুড়ে চৈতন্যময় হয়ে উঠেছেন। হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) এই মহান প্রেমিকের কাছে কিছু শিক্ষা নিতে চাইলেন। বিনীত কন্ঠে বললেন, জনাব, আমাদের জন্য দোয়া করুন।
ওয়ায়েস (রঃ) বললেন, আমার ঈমান অনুরাগহীন। তবুও দোয়া করছি। প্রতি ওয়াক্ত নামাযে এই দোয়াই করে থাকি প্রভু গো! বিশ্বাসী নর ও নারীকে আপনি ক্ষমা করুন। হযরত ওমর (রাঃ) কে বললেন, যদি ঈমানসহ কবরে যেতে পারেন, তাহলে দোয়া নিজেই আপনাকে খুঁজে নিবে।
ওমর (রাঃ) বললেন, আরও কিছু বলুন।
খলীফা! ওয়ায়েস (রঃ) বললেন, আপনি কি আল্লাহকে চিনেছেন?
হ্যাঁ, চিনেছি। যদি চিনে থাকেন, তাহলে অন্য কাউকে যেন না চেনেন, না জানেন। তবে তাই হবে আপনার পক্ষে সবচেয়ে ভাল। আরও কিছু বলুন।
আল্লাহ কি আপনাকে চেনে, জানেন?
তা তো অবশ্যই।
একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য কেউ যদি আপনাকে না জানেন, তো খুব ভালো কথা। এসব কথাবার্তার পর হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, দাঁড়ান, আপনার জন্য আমি কিছু নিয়ে আসি।
আল্লাহ ও রাসূল-প্রেমী এ লোকটি তখন জামার পকেট থেকে দু’টি পয়সা বের করে বললেন, উট চরিয়ে আমি এ পয়সা রোজগার করেছি। যদি আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে, এ পয়সা খরচ করার পরও আমি বেঁচে থাকব, তাহলে আমার আরো কিছু জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে। তার মানে, জীবন কখন ফুরায় কেউ জানে না। সুতরাং কোন কিছু সঞ্চয়েরও প্রশ্ন আসে না। অর্থাৎ খলীফার কাছ থেকে ওয়ায়েস কারনী (রাঃ) কিছু নিতে অস্বীকার করলেন।
পরে দুই মহান অতিথির উদ্দেশ্যে বললেন, এখানে আসার জন্যে অনেক দুঃখ-কষ্ট পেয়েছেন। আমি আপনাদের কম দুঃখ দেইনি। আশা করি আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন। এখন আপনারা বিদায় গ্রহন করুন। রোজ কিয়ামত খুব কাছে। আল্লাহর রহমতে সেদিন আবার দেখা হবে। আর তখন আমাদের সান্নিধ্য-সংস্পর্শ দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমি এখন আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত। এ কথা বলে হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-কে তিনি বিদায় জানালেন। তারপর নিজেও সেখান থেকে চলে গেলেন।
বস্তুতঃ এই সাক্ষাতের পর থেকেই খলীফা ও তাঁর সঙ্গী আলী (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওয়ায়েস কারণী (রাঃ)-এর নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এই জন্য আত্ন-নিবেদিত দরবেশের গোপন-গভীর নীরব সাধনায় বিঘ্ন দেখা দিল। তখন তিনি ঐ এলাকা ত্যাগ করে কুফায় চলে যান। শোনা যায়, এর পরে হারম ইবনে জামান ছাড়া আর কারও সাথে তাঁর দেখা হয়নি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন