শাসক যখন সেবক হন !

৮৪০ ঈসায়ী সন। খলীফা মূতাসিম চলছেন রাজপথ দিয়ে। রাজকীয় সমারোহে সুসজ্জিত অশ্বে আরোহণ করে চলছেন তিনি। জনসাধারণ সসম্ভ্রমে পথ করে দিচ্ছে। চারদিক থেকে অগনিত মাসুষ সহাস্য বদনে সালাম জানাচ্ছেন খলীফাকে- খলীফা মুতাসিমকে। খলীফা সকলের দিকে চেয়ে, তাদের সাথে সালাম বিনিময় করে ধীরে ধীরে সামনে এগুচ্ছেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গিয়ে পড়ল রাস্তার উপরে এক বৃদ্ধের উপর। বৃদ্ধটি খলীফাকে পথ করে দেবার জন্য রাস্তা থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছিল। সরতে গিয়ে সে রাস্তার নর্দমায় পড়ে গেল। কাদায়, ময়লায় মলিন হয়ে গেল তার দেহ। নর্দমা থেকে উঠার চেষ্টা করছে সে। সাহায্য পাবার আশায় দু‘টি হাত যেন তার অজ্ঞাতেই উপরে উঠেছে। খলীফা সংগে সংগে তার ঘোড়া দাঁড় করালেন। নামলেন ঘোড়া থেকে। ছুটে গেলেন সেই নর্দমার ধা। সেই বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরে অতি সাবধানে তাকে উপরে টেনে তুললেন খলীফা। বৃদ্ধের দেহের কাদা-ময়লা খলীফার দেহের রাজকীয় সজ্জাকেও কর্দমাক্ত করে দিল। কিন্তু খলীফার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকেই পথ করে দিতে গিয়ে এক বৃদ্ধ কষ্ট পেয়েছে, এই বেদনাদায়ক অনুভূতিই তাঁর কাছে বড়। তিনি খলীফা কিন্তু মূলতঃ জনগণের সেবক। জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করাই তাঁর দায়িত্ব, কষ্ট দেয়া নয়। বৃদ্ধটি খলীফার কাছে থেকে সহস্য মুখে বিদায় নেয়ার পর খলীফা স্বস্তি লাভ করলেন। তারপর ঘোড়ার পিঠে ফিরে এসে আবার যাত্রা করলেন তাঁর গন্তব্য স্থলের দিকে।

—আমরা সেই সে জাতি – ১ম খন্ড আবুল আসাদ

Written By

More From Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শাসক যখন সেবক হন !

৮৪০ ঈসায়ী সন। খলীফা মূতাসিম চলছেন রাজপথ দিয়ে। রাজকীয় সমারোহে সুসজ্জিত অশ্বে আরোহণ করে চলছেন তিনি। জনসাধারণ সসম্ভ্রমে পথ করে দিচ্ছে। চারদিক থেকে অগনিত মাসুষ সহাস্য বদনে সালাম জানাচ্ছেন খলীফাকে- খলীফা মুতাসিমকে। খলীফা সকলের দিকে চেয়ে, তাদের সাথে সালাম বিনিময় করে ধীরে ধীরে সামনে এগুচ্ছেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গিয়ে পড়ল রাস্তার উপরে এক বৃদ্ধের উপর। বৃদ্ধটি খলীফাকে পথ করে দেবার জন্য রাস্তা থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছিল। সরতে গিয়ে সে রাস্তার নর্দমায় পড়ে গেল। কাদায়, ময়লায় মলিন হয়ে গেল তার দেহ। নর্দমা থেকে উঠার চেষ্টা করছে সে। সাহায্য পাবার আশায় দু‘টি হাত যেন তার অজ্ঞাতেই উপরে উঠেছে। খলীফা সংগে সংগে তার ঘোড়া দাঁড় করালেন। নামলেন ঘোড়া থেকে। ছুটে গেলেন সেই নর্দমার ধা। সেই বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরে অতি সাবধানে তাকে উপরে টেনে তুললেন খলীফা। বৃদ্ধের দেহের কাদা-ময়লা খলীফার দেহের রাজকীয় সজ্জাকেও কর্দমাক্ত করে দিল। কিন্তু খলীফার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকেই পথ করে দিতে গিয়ে এক বৃদ্ধ কষ্ট পেয়েছে, এই বেদনাদায়ক অনুভূতিই তাঁর কাছে বড়। তিনি খলীফা কিন্তু মূলতঃ জনগণের সেবক। জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করাই তাঁর দায়িত্ব, কষ্ট দেয়া নয়। বৃদ্ধটি খলীফার কাছে থেকে সহস্য মুখে বিদায় নেয়ার পর খলীফা স্বস্তি লাভ করলেন। তারপর ঘোড়ার পিঠে ফিরে এসে আবার যাত্রা করলেন তাঁর গন্তব্য স্থলের দিকে।

—আমরা সেই সে জাতি – ১ম খন্ড আবুল আসাদ

Written By

More From Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You May Also Like

ইফতারে মুড়িতে জিলাপি মাখার পক্ষে vs বিপক্ষে?

মুড়ির সঙ্গে জিলাপি খাবো নাকি খাবো না, এই নিয়ে তো ভয়ংকর তুফান এখন ফেসবুক জুড়ে।…

★ জিনের মিষ্টি ★-

আমার খালা বাড়ির এলাকার এলাকার এক হুজুরের কাহিনী। স্হানটা হচ্ছে সাতক্ষিরা গড়েরকান্দা। ষে যখন মাদ্রাসায়…

হোটেলে কাজ করেও স্কুলে প্রথম স্থান !

‘ভাইয়া ভাত দেব? তরকারি লাগবে?’ কোমরে গামছা৷ হাতে ভাতের গামলা৷ খদ্দের সামলানোর দক্ষতা দেখে কে…