প্রচন্ড ক্ষমতাধর বাদশাহ মুহতাসিম বিল্লাহ্

প্রচন্ড ক্ষমতাধর বাদশাহ মুহতাসিম বিল্লাহ্। জমজমাট তার রাজ দরবার। চারদিকে কত শত উজির ও উপদেষ্টা। প্রত্যেকদিনের মত আজও রাজদরবার বসেছে। এমন সময় হাত পা বাধা অবস্থায় বাদশাহর সামনে হাজির করা হলো এক বৃদ্ধকে। সবার দৃষ্টি শুভ্র সাদা দাড়ির এ বৃদ্ধের দিকে। তিনি কি শুধুই বৃদ্ধ? তিনি একজন জগত বিখ্যাত ফকীহ, হাদীস বিশারদ, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। উজির উপদেষ্টারা সবাই তাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে, কিন্তু বাদশাহর ভয়ে সবাই নিশ্চুপ। বাদশাহ প্রত্যেকদিনের মত আজও বৃদ্ধকে একটি মাসআলা বাদশাহর পক্ষে দিতে বললেন। কিন্তু বৃদ্ধ সাহসীকতার সাথে বাদশার বিপক্ষে ফতোয়া দিলেন। বাদশা রেগে গেলেন। নাহ, যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধকে আর সম্মান দেখানো যাবে না। বাদশার একটি ইশারায় সারা দেশ থরথর করে কাঁপে কিন্তু এ বৃদ্ধকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না। আজ বৃদ্ধকে চরম শিক্ষা দিতে হবে। বাদশাহ রাজ দরবাদের সমস্ত জল্লাদদের ডাকলেন। বাদশাহ হুঙ্কার ছেড়ে বললেন ‘তাকে মারো। সর্বশক্তি দিয়ে বেত্রাঘাত করো। মেরে তার হাড্ডি ভেঙ্গে চুরমার করে দাও।‘
বাদশাকে খুশি করার জন্য জল্লাদরা তাকে মারতে লাগলো। একজন একজন করে জল্লাদ এসে বৃদ্ধকে মারে। মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে সে হাঁপাতে থাকে তখন আরেক জল্লাদ এসে সর্বশক্তি দিয়ে বৃদ্ধকে মারে। বার্ধক্যে জর্জরিত দুর্বল পিঠে জল্লাদরা মারতে মারতে সমস্ত জল্লাদ হাপিয়ে গেছে তবু বৃদ্ধ তার সিদ্ধান্তে অনড়। ভাবা যায়!!!!
বৃদ্ধের পিঠের সব হাড় ভেঙ্গে গেছে, কাধের হাড় চুর্ন বিচূর্ণ। বেতের আগাতে জামাও ছিড়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে গেছে। রক্তে ভেসে গেছে রাজ দরবার। উজির উপদেষ্টাদের চোখে পানি ঝরছে। সামান্য একটি মাসআলার জন্য দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমের উপর এতো অত্যাচারে বেদনাবোধ করছে সবাই।
দুপুরে সমস্ত জল্লাদরা ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, এমন সময় এক দরবারি আলেম আসলো বৃদ্ধের নিকট। তার নাম মারওয়াযী। তিনি বৃদ্ধের নিকট গিয়ে বললেন “কি দরকার ছিলো এতো কষ্ট নিজের কাধে আনার? একটি মাত্র মাসআলায় বাদশার সাথে তাল মেলালেই বা কি হয়? আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।”
নির্যাতীত বৃদ্ধ লোকটি এ দরবারি আলেমকে বললো ‘একটু বাইরে দেখে আসেন।‘ মারওয়াযী দরবারের বাহিরে বের হলেন। দেখলেন যতদূর চোখ যায় শুধু বৃদ্ধের ছাত্র ও ভক্ত। সবাই নিশ্চুপ। খাতা কলম হাতে সবাই কান পেতে বসে আছেন। মারওয়াযী তাদের একজনকে জিজ্ঞাস করেন আপনারা এখানে কি করছেন? জবাব দিলো বাদশা ও দরবারি আলেমদের বিপক্ষে আমাদের উস্তাদ কি ফতোয়া দেন, কি কি দলীল বর্ননা করেন তা লিখে রাখছি।
মারওয়াযী দরবারে ফিরে এলেন। বৃদ্ধ আলেমটি বললো “শোন মারওয়াযী, আমি নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে এ মাসালায় সামান্য একটু ভুল বললে আমার অগনিত ছাত্র ও ভক্ত বিভ্রান্ত হবে, তারা ভুল মাসআলা আমল করবে। তাদের মাধ্যমে অনাগত প্রজন্মের কাছেও ভুল মাসআালা পৌছে যাবে। আমি নিজে নিঃশেষ হবো তবু এতো এতো লোককে আমি ভুল মাসআলা দিতে পারবো না। এমন কাপুরুষতা আমার পক্ষে সম্ভব না।“
আজ কোথায় বাদশাহ মুহতাসিম বিল্লাহ? কোথায় তার দাপট? তার গুনগ্রাহীও কেউ বেঁচে নেই। মুহতাসিম বিল্লাহ্ হারিয়ে গেছে ইতিহাসের অতল গহ্বরে। কিন্তু সেদিনের সে বৃদ্ধ আজো রয়ে গেছেন বিশ্বের প্রত্যেকটা মানুষের অন্তরে। বার্ধক্য বয়সে শারীরিক শাস্তি ও অত্যাচারের অসহনীয় এমন দুর্দশায় ও তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ভুলেন নি তাই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রান্তে অজস্র অগনিত মাদ্রাসা মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্মানে। জগত বিখ্যাত এ ফকীহ আর কেউ নন, তাঁর নাম “ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রঃ) “।
লেখিকা- মাইমুনা আক্তার,
সহকারী শিক্ষিকা,
পস্তাইল সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!