পোষা বিড়ালের কাঁটা— নূর কামরুন নাহার– দ্বিতীয় অংশ

তবে পরিবারটির আরো উন্নতি ঘটে। নতুন প্রজন্মের পুরোটাই অভিবাসী হয়ে পড়ে জয়গুননেচ্ছার সন্তানরা নির্দিষ্ট স্কয়ারফিটে স্থিতু হয় ঢাকার অভিজাত পাড়ায়। মাথার ওপর কংক্রিটের ছাদ আকাশ ঢেকে রাখে। ফ্রিজে মাছ মাংস সংরক্ষণ করে খায়। শহরের জীবনের ধুলো এড়াতে গাড়ি কেনে। এয়ারকন্ডিশনড রুমে বসে ইন্টারনেট আর স্কাইপিতে ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে, অতীতের উজ্জ্বল দিনের স্মৃতিচারণে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং মেঘনার তাজা মাছের স্বাদের কথা বলে।
মাটির প্রতি এইরকম বেদনা নিয়ে মিজানুরের ভাই-বোনেরা শহুরে জীবনের হাওয়াই মিঠাই ভোগ করলে মিজানুরের দিনকাল ভালো যায় না। সংসারের ব্যয় সামলাতে তাঁকে শেষ সম্বল পেনশনের টাকায় হাত দিতে হয়। সারাদিনে দু’তিনটা টিউশনি করতে হয়। বয়স্ক শিক্ষকের চাহিদা ধারণাতীতভাবে কমে যাওয়ায় টিউশনি জোগাড়েও বেশ বেগ পেতে হয়। বাসে ঝুলে দূরের টিউশনিতে যেতে হয়। তার শক্ত শরীরটা পোক্ত দেখালেও ভেতরে দুর্বলতা ভালোই অনুভূত হয়। ট্যারা চোখটাতে ছানি গভীর হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ত্যাড়া ঘাড়টা নিয়ে তাঁকে ভাইবোনদের দ্বারস্থ হতে হয়। দেশে-বিদেশে ভাগ্নেÑভাতিজাদের কাছে গলা খাকারি দিয়ে দুঃসময়ের কথা বলতে হয়। তাদের আজকের এ অবস্থানে তার অবদান কতটুকু তাও বলতে হয়। টেলিফোনিক এসব দুরালাপ ছাড়াও ভাই-বোনদের বাসায় ঘুরে ঘুরে আসতে হয়। দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকা করতে হয় সেই সব ভর-ভরন্ত দিন, পরিবারের সবার অতীত, দোষ-ত্রুটি, এখন এই পরিবারের এমন একটা কসমোপলিটান জীবনের পেছনে তার অবদান সব তুলে ধরতে হয় এবং এই সবের অনুপুঙ্খ বর্ণনার পর বর্তমান সমস্যার কথা বলতে হয়। সবশেষে মুঠোর মধ্যে কিছু পুরে বাসায় ফিরতে হয়।
এই রকমভাবে মিজানুরের দিনকাল চলতে থাকলেও মাঝেমাঝেই আর চলে না। কারণ আমরা জানি এ শহরে ব্যয় প্রতিদিন দ্বিগুণ হরে বাড়তে থাকে। তাকে তখন নানা প্রকার কসরতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। আমরা তখন তাকে পরিবারের সাথে রাগ করতে দেখি এবং তার বড়ভাইদের সাথেও রাগান্বিতভাবে কথা বলতে দেখি। কিছু আদায়ের জন্য যুক্তিহীনভাবে প্রচুর যুক্তি দাঁড় করাতে দেখি। তার ভাই এবং পরিবাবের অন্যরা এতে বিরক্ত বোধ করেন। আড়ালে তার সমালোচনা করেন। তারা নানাপ্রকার আলাপ আলোচনা ও বুদ্ধি পরামর্শের মাধ্যমে তাকে নিয়মিত একটা কিছু দেবার ব্যবস্থা করেন। সেখানে কার কার অবদান থাকে তা অবশ্য আমরা জানতে পারি না। তবে আমাদের ধারণা নিয়মিত ঐ আর্থিক সাহায্যে তার ভাই,ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগনে-ভাগনীরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। কারণ তারাও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। সেইসব আলোচনায় আমরা এটাও জানতে পারি নিয়মিত এ সাহায্য মিজানুরের কলেজপড়ুয়া মেয়ের পড়ার খরচ হিসেবেই দেয়া হয়ে থাকে কারণ তারা চান যে মিজানুরের মেয়ে যাতে অবশ্যই পরিবারের অন্যদের মতো উচ্চশিক্ষিত হতে পারে।
মিজানুর প্রতিমাসে একদিন ভাইয়ের বাসায় আসেন। সোফার মধ্যে ঘাড় ত্যাড়া করে বসেন। অতীত-বর্তমান নিয়ে একতরফা গুজুর গুজুর করেন। তারপর যেটাকে মাসোহারা বলা যায় সেটা হাতে গুজে একটু অন্যমনস্কভাবে যেন কোনো একটা কাগজ পকেটে ঢোকাচ্ছেন এমনভাবে পকেটে ঢোকান। তারপর একটু সামনে ঝুঁকে ট্যারা চোখটাকে সরু করে কি যেন খুঁজছেন এমনভাবে আচ্ছা যাই, মিতুর মার শরীরটা ভালো নেই, কিংবা মিতুর জন্য ওষুধ কিনতে হবে এরকম কিছু একটা বলে দুলে দুলে পা ফেলে বের হয়ে যান। প্রতিমাসের এ নিয়মিত হাজিরাতে আজও তিনি ভাইয়ের বাসায় এসেছেন। অবসর প্রাপ্ত মানুষের সময় জ্ঞান কমে যায়। মিজানুরেরও তাই। সে অসময়ে প্রায় একটা নাগাদ ভাইয়ের বাসায় ঢোকে। তার ভাই এ সময় থাকার কথা কিন্তু মিজানুরের ভাইকে বাসায় পাওয়া যায় না। সেটা কোনো সমস্যাই তৈরি করে না। কারণ মিজানুরের এ মাসোহারার কথা তার ভাবী জানেন এরকম আরো দু একবার সে এটা ভাবীর হাত থেকেই গ্রহণ করেছেন। মিজানুরকে দেখে ভাবী আলেয়া ড্রয়িংরুমে এসে বসেন। তিনি প্রায়শই অসুস্থ থাকেন। ভাবীকে দেখে মিজানুরের একতরফা বক্তৃতা আরো তেজী ও দীর্ঘ হয়। একই বিষয়ে এই দীর্ঘ আলাপচারিতা তার অপছন্দের। কিন্তু তিনি বিদূষী এবং আদব কায়দা জানা মহিলা। অস্বাভাবিক শীর্ণ এক শরীরে ঘাড়ের ওপরে মাথাটাকে কোনরকম জাগিয়ে রাখেন এবং কোন কথায় সায় দিতে মাঝে মাঝে ঘাড় অব্দি কাটা ঝাকড়া কোকড়ানো চুল নাড়া দেন। দীর্ঘ একতরফা কথোপকথন শেষে মিজানুর টাকা নেন এবং অন্যমনস্কভাবে একটা কাগজের মতো তা পকেটে রাখেন।
তারপর সামনে ঝুঁকে বলেনÑ আচ্ছা যাই।
সময়টা দুপুর ছুঁই ছুঁই। আমরা জানি মিজানুরের ভাবী আদব কায়দা রপ্ত করা মানুষ। একান্ত অনিচ্ছা নিয়েও তাই তিনি মৃদূ কণ্ঠে বলেনÑ ভাই সাহেব দুপুরে খেয়ে যান।
না যাই আমাকে মিরপুরের বাজার থেকে কাটা কিনতে হবে।
কাটা কিনবেন মানে?
না, কাটা মানে মুরগির ঠ্যাং ঠোং, এইসব আর কি?
মুরগির ঠ্যাং ? আলেয়া অবাক হয়ে তাকায়।
পলাশের বিলাইটার জন্য ।
বিলাইয়ের জন্য কাটা কিনবেন? মুরগির ঠ্যাং?
ওর বিলাইটা মুরগির ঠ্যাং, গলা এগুলো সিদ্ধ খায়। আর মাছ খায়। একসময় আমাদের বাড়ির মাছ মানুষ খাইছে। আম্মা কত শুঁটকি বানাইছে পাড়ার কত মানুষ খাইছে।
এইসব কথা আলেয়ার বহুবার শোনা। এ মুহূর্তে তার চেহারায় আশ্চর্যের ছাপ মুছে গিয়ে বিরক্তি এবং তাচ্ছিল্যের ছাপ।
তাইলে যাই দুপুরের পরে গেলে এগুলি আবার আর পাওয়া যায় না।
যাই বলে তিনি চোখের হাত রেখে যেন রোদ আড়াল করছেন এভাবে সামনের দিকে তাকান।
আলেয়া শীর্ণ দেহটা টেনে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলেÑ আসবেন ভাই সাহেব।
অস্পষ্টভাবে মিজানুর কিছু বলে কিন্তু সেটা আমরা আর শুনতে পাই না।
মিজানুরকে আমরা পরের মাসে আবার দেখি তার ভাইয়ের বাসায় মাসোহারার টাকা নিতে এসেছেন। এখন বিকেল প্রায় শেষের দিকে। সামনের সোফায় তার ভাই বসা। মিজানুর একতরফা দীর্ঘ বয়ান রাখছেন। মাঝে মাঝে তাকে একটু উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা যাচ্ছে। আলেয়া এই কথোপকথনের মাঝে কিছুক্ষণ আগে একবার এসেছিলেন। তারপর আবার বেডরুমে বিছানায় আশ্রয় নিয়েছেন। কথা পর্বের সাথে চা পানও চলছে। চা পান শেষে মিজানুরের ভাই তার হাতে মাসোহারা তুলে দেন। তিনি অন্যমনস্কভাবে একটা কাগজের মতো পকেটে ঢোকান এবং কিছু খুঁজছেন এভাবে সামনে ঝুঁকে বলেনÑ তাইলে যাই, সন্ধ্যা হইয়া যাইতাছে।
যাবি কি বাসায়?
হ, বাসায়ই যামু।
তুই নাকি টাকা নিয়া বিলাইয়ের কাটা কিনছ।
কাটা মানে ঐ মুরগির ঠ্যাং ঐ ময়লা টয়লা আর কি
বিলাই মাছের কাটা খায় না?
না, ঐ পলাশের বিলাইডা মুরগির ঠ্যাং হাডিড এইসব সিদ্ধ খায়।
বিলাই মাছের কাঁটা খায় না, আশ্চর্য কথা। টাকা দিয় এইসব কিনা….
এইগুলি তো একবারেই সস্তা। এই মাঝে সাঝে কিনি। ছেলেটা শখ কইরা একটা বিলাই পালে। বাড়িতে একসময় কতো পালা মুরগি ছিলো, মাছের কত শুঁটকি হইত কত মানুষ খাইছে।
মিজানুর একটু সামনে গিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে মাথাটা একবার এদিক আর একবার ওদিক ঘুরান। তারপর আস্তে করে বলেÑ তাইলে যাই।
মিজানুরে ভাই অস্পষ্টভাবে কি বলেন তা আমরা ঠিক শুনতে পাই না । আমরা ধারণা করি তিনি বলেনÑ আবার আসিস।
তার ছেলেটা বখে যাওয়া, সামলানো যায় না। ভালো কোনো চাকরি করে না। একটা বিড়াল পালে। মিজানুর বিড়ালের জন্য কাঁটা কেনেন। বিড়াল মাছের কাটা খায় না মুরগীর সেদ্ধ পা খায়। বিষয়টা এক কান দুকান করে একটা আলোচনার বিষয় হয়। এরকম আলোচনার মধ্যেই মিজানুরের দিন আরো নাজুক অবস্থায় দাঁড়ায়। তার মধ্যে ক্রমাগত ক্ষোভ বাড়ে। ক্ষোভের সাথে বাড়ে বাজারে জিনিসের দাম। সেই সাথে কমে না মিজানুরের পরিবারে শাহীভাব। পয়সা না থাকলে সাধারণত শাহীভাব থাকে না। মিজানুরের পারিবারেও আসলে শাহীভাব নেই, তবে অন্তরে শাহীভাব থাকার কারণে তাদের অশান্তিভাবও প্রকট। মিজানুর ভাগনেদের মাঝে মাঝে টেলিফোন করাটা আরো একটু বাড়ান। তাতে কোনো লাভ হয় কি না বোঝা না গেলেও ব্যাপক একতরফা প্রশস্তির মধ্যে দিয়ে মিজানুরের মনের ক্ষোভ কিছু প্রশমিত হয়। তার ভাগনে ভাতিজারা অবশ্য ভালো ব্যবহার করেন তারা ফোনের লাইন কখনও কাটেন না। তার এই বেড়ে চলা হা হুতাশ ও অতীতের ফিরিস্তি নিয়ে তারা মাঝে সাঝে পরস্পরের সাথে কিছু হাসিঠাট্টা করে। এবং এ ধরনের আলাপে তারা বিড়ালের কাটা কেনার বিষয়টি উল্লেখ করে। তারপর হাসে। তারপর তার অবিবেচনাপ্রসূত খরচ এবং মাসোহারার কথা বলে। তারপর তারা মিজানুর তার পরিবার আর একটা বেড়ালের ওপর কঠিন কণ্ঠে ক্ষোভ ঝাড়ে।
প্রতি বছর মিজানুরের কোনো না কোনো ভাগনে- ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি বেড়াতে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন মামা চাচা ফুফুর বাসায় সৌজন্য সাক্ষাৎ রাখেন। শহরের বড় বড় মার্কেট হতে দামী জিনিস ক্রয় করেন। সেগুলো নিয়ে তারা টেলিফোনে দীর্ঘ আলাপ করেন। তাদের সন্তানেরা দামী রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যায় এবং বাদামের খোসার মতো পয়সা ওড়ায়। মিজানুরের বাসায় তাদের যাবার প্রয়োজন হয় না কারণ মিজানুর নিজেই তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেন। ডিসেম্বরে মিজানুরের ভাগনি এবং এক ভাতিজা দেশে বেড়াতে আসে। তাদের আগমন এবং ডিসেম্বর মিলে সময়টা অনুষ্ঠানের বেশ উপযোগী। মিজানুরের বড়ভাই অবসর গ্রহণের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তিন বছর চাকরি করেন। সম্প্রতি সেখান থেকে অবসর নিয়ে এককাঁড়ি টাকা পেয়েছেন। টাকা খরচ করার মতো পর্যাপ্ত কোন খাত আর অবশিষ্ট নেই, তবে হ্যা তার স্ত্রী শৌখিনভাবে ডাক্তার দেখান, তার মেয়ে বছর-দুবছরে দেশে আসলে পুরনো গাড়িট বদলে ফেলে। এবং তখন বন্ধুদের পেছনে খরচ করার বেশ একটা সুযোগ ঘটে। এ রকমভাবে কিছু অর্থ খরচ হলেও তার হাতে এখন অলস টাকা। তার বাড়িতেই একটা দাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন তিনি। পরিবারের সবাইকে দাওয়াত খাওয়ানোর ইচ্ছা তার বহুদিনের। এরকম অনুষ্ঠানে মিজানুর পরিবার নিয়ে উপস্থিত থাকা অপছন্দ করেন। আগে তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করতেন কোনো না কোনো ব্যাপারে গোস্বা করে। এখন অনেক অনুষ্ঠানে তিনি দাওয়াত পান না। অন্যদের শানশওকতের তুলনায় তার এ দুরবস্থায় তিনি এক ধরনের কমপ্লেক্সে ভুগেন। সেটাকে ইনফেরওরিটি কমপ্লেক্স বলা যায়। সে কারণে তিনি আবার তার অবদানের ফিরিস্তি আরো উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেন। সেটা আবার অনেক সময় শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে দমকা বাতাসের মতো কিছু অশান্তি নিয়ে আসে। ফলে তিনি যেমন এসব অনুষ্ঠানে আসা পছন্দ করেন না। তেমনি তার আসাটাকে এখন আর কেউ খুব বেশি স্বাগতও জানান না।
মিজানুর সব ধরনের ত্যাড়ামি নিয়েও আজকের অনুষ্ঠানে সপরিবারে অংশ নিয়েছেন। প্রত্যেক রুমেই মানুষের কলরব। ঘরের ভেতর হাসি আনন্দ ফেটে পড়ছে। সুস্বাদু খাবারের খোসবুর সাথে ভুরভুর করে বাতাসে ভাসছে দামী সেন্টের গন্ধ। বাড়িতে মিলিত হয়েছে তিন প্রজন্ম। মিজানুর, তাদের ভাগনে ভাতিজা এবং তাদের ছেলেমেয়েরা। উজ্জ্বল এই মিলন মেলায় সবাই তাদের উন্নতির পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে। আলেচনায় বিভিন্ন প্রজন্মের গ্রহণ করেছেন। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ এবং কিছুটা অতীত চর্বণ। আলোচনায় সবাই নিজেদের আরো উন্নতি, আরো কিছু রঙ্গিন স্বপ্নের বর্ণনা করছে। সেই সাথে যথাসম্ভব অহংকারী ভঙ্গিতে তুলে ধরছে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি। মিজানুর ঠিক কোনো ঘরেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। এই রঙ্গের মেলায় তিনি তার বিশেষ ভঙ্গিতে অতীতকে জীবন্ত করে টেনে আনতে পারছেন না। নিজেকে প্রচার করার কোনো সুযোগই তার ঘটছে না। এই ঝলমলে আসরে তার নিজেকে নিষ্প্র্রভ আর অকোজে মনে হচ্ছে। সে একটু গুটিয়ে একা একা কোনায় বসে থাকছেন। দু’একটা কথায় সুর মিলাচ্ছেন এবং আবার চলে আসছেন। মিজানুরের ছেলেরও একি অবস্থা। তাদের গল্পের সাথে তার সুর কিছুতেই মিলছে না। তারপর আবার প্রায় সবাই তাকে জিজ্ঞেস করছে- তার চাকরির কি খবর। চাকরি হচ্ছে না কেন? এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যেও একা হয়ে সে নিশ্চুপ বসে থাকে ড্রয়িং রুমের এক কোনায়।
এরকম বসে থাকার মাঝেই তার ফুফাতো ভাই বলেÑ তোমরা নাকি একটা বিড়াল পালো?
হ্যাঁ।
কতদিন ধরে পালো ?
পালি তো অনেক দিন।
এরকম কথোপকথন শুরু হলে আসর একবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়। সবাই তার দিকে দৃষ্টি ফেরায়। একজন প্রশ্ন করেÑ
বিড়ালটার রং কি?
সাদা-কালো ।
তোমাদের বিড়াল নাকি কাঁটা খায় না।
না মাছের কাঁটা খায় না।
কি খায়?
মুরগির গলা পা এসব সেদ্ধ করে দিলে খায়, ভাত খায়।
দুধ ভাত নাকি, ঘি-ভাত?
পলাশ কোনো কথা বলে না।
ঘরজুড়ে একটা হাসির রোল ওঠে।
একজন বলেÑ এটা কি মোগল সম্রাটের বশংধর নাকি?
ঘরে আবার একটা হাসির রোল ওঠে। পলাশ মাথাটা আরো একটু নিচু করে ফেলে।
আর একজন বলেÑএটা শেরশাহের বংশধর।
কেউ প্রশ্ন করে-বিড়ালটা পাইলা কই?
একজন বলেÑ এটা কি বিদেশী?
না দেশী, আমাদের বাসার কাছেই ছিলো ।
এইটা কি তুমি পালো? এইটা তোমার বিড়াল?
না এইটা আব্বার বিড়াল।
তোমার আব্বা বললো এইটা তোমার বিড়াল
না এইটা আব্বার বিড়াল।
এরকম একটা মজার কথা জীবনে শোনা যায় নাই এরকম একটা ভঙ্গিতে একজন বলেÑ ঐ শোন শোন এইটা মামার বিড়াল। ঘরে প্রচ- এক হাসির রোল ওঠে। তারপর দুইজন বলে- এইটা নাকি কাকার বিড়াল, তারপর আরো দুইজন বলে- এইটা নাকি মামার বিড়াল …..হা হা হা নবাব বিড়াল। বাদশাহ আকবর। এইটা মামার বিড়াল….
বিড়ালটা কার সে রহস্য আমরা ভেদ করতে পারি না। আমরা পলাশকে দেখি বারান্দায় এসে দাঁড়াতে। আমরা আরো দেখি বারান্দার আরেক কোণে মিজানুর দাঁড়ানো। তাদের মাথা আমরা মাটির দিকে নিবিষ্ট দেখি। যেন তারা হারিয়ে যাওয়া সুঁই খুঁজছেন। তাদের কারো চোখ ঘোলা কি না আমরা দেখতে পাই না। ওই ঘরে বেশ কিছু কথাবার্তা চলে প্রচ- হাসির শব্দে তাও আমরা আর বুঝতে পারি না।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!