মহান মেজ্ববান

একটি প্রশান্তময় গৃহ।

ছায়াঘেরা শান্ত সুনিবিড়।

কল্যাণ আর অফুরন্ত আলোর রোশনিতে সীমাহীন উজ্জ্বল।

কার বাড়ি? কোন্ বাড়ি?

আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেন সবাই।

এতো মদিনার সেই বাড়ি, যে বাড়িতে প্রথমে পবিত্র পা রেখেছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা)।

মহান আলেঅকিত রাসুল! রাসূলের (সা) সঙ্গে চিলেন সেদিন তাঁরেই সাথী হযরত আবু বকর (রা)।

হ্যাঁ, সেইদিন।

যেদিন রাসুল (সা) আবুবকরকে নিয়ে পৌঁছুলেন মদিনায়।

মদিনার কুবা পল্লী।

চারপাশ তার স্নিগ্ধ, শান্ত।

কী এক মোহময় পরিবেশ।

অসীমতার মায়ার বন্ধন।

রোশনীতে আলো ঝলমল। যেন সোনার মোহর ছড়িয়ে আছে পূর্ণিমা জোছনায়।

চকচক করছে কুবা পল্লীর প্রতিটি ধূলিকণা। ধূলিকণা!

তাও যেন রূপ নিয়েছে একেবারে খাঁটি সোনায। একেবারেই খাদহীন। কে জানে না কুবা পল্লীর নাম?

কে চেনে না তার পথঘাট, গলিপ্রান্তর?

সবাই চেনে।

সবাই জানে।

জানে এবং চিনে মদিনার ও মক্কার প্রতিটি মানুষ।

কেন চিনবে না?

কুবা পল্লী তো বুকে ধারণ করে আছে এক উজ্জ্বল ইতিহসা, ইতিহাসের চেয়েও মহান এক সত্তা।

আল্লাহর পক্ষ থেকে হিজরতের অনুমতি পেলেন দয়ার নবীজী (সা)। এটাই প্রথম হিজরত!

রাসূল (সা) চলেছেন অতি সন্তর্পণে। সামনে দিকে। সাথে আছেন বিশ্বস্ত বন্ধু হযরত আবু বকর (রা)।

রাসূল (সা) ছেড়ে যাচ্ছেন তাঁর প্রিয় জন্মভূমি মক্কা। সেই মক্কা!

যেখানে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন সাগর সমান রহমত নিয়ে।

যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের দিনগুলো।

কত স্মৃতি, কত কথা, কত ঘটনা প্রবাহ মনে পড়ছে দয়ার নবীজীর (সা)।

তিনি হাঁটছেন আর পেছনে তাকাচ্ছেন।

দয়ার নবীজীর ভারী হয়ে উঠলো স্মৃতিবাহী হৃদয়।

তাঁকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে ভালোবাসার মক্কা!

মক্কা থেকে রাসূল (সা) চলেছেন মদিনার দিকে। এটাই আল্লাহর মঞ্জুর। এটাই প্রথম হিজরত।

মদিনর উপকণ্ঠে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে কুবা পল্লী।

বহু পূর্ব থেকেই কুবা পল্লীর রয়েছে ঐতিহ্যেঘেরা সুনাম ও খ্যাতি।

আল্লাহর প্রিয় হাবীব রাসূলে মকবুল (সা) ও তাঁর সাথী আবুবকর কুবা পল্লীতে পৌঁছেই একটু থমকে দাঁড়ালেন।

তারপর।

তারপর তিনি এবং তাঁর সাথী প্রবেশ করলেন কুবা পল্লীর অতি খান্দানী একটি বাড়িতে।

বাড়িটি কার?

কে সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি?

তিনি আর কেউ নন। নাম কুলসুম ইবনুল হিদম (রা)।

রাসূলও (সা) দারুণ পছন্দ করলেন বারিটি। এখানেই তিনি তাঁর সাথী আবুবকরসহ কাটিয়ে দিলেন একে একে চারটি দিন।

কুলছুম ইবনুল হিদমের (রা) বাড়িতে চারদিন থাকার পর দয়ার নবীজী (সা) পৌছুলেন মদিনার মূল ভূখণ্ডে।

এখঅনে এসে রাসূল (সা) ও আবুবকর (রা) অবস্থান করেন আর এক সৌভাগ্যবান সাহাবী আবু আইউব আল আনসারীর বাড়িতে।

কিন্তু রাসূল (সা) মদিনার পদধূলি দিয়েই যার বাড়িতে উঠলেন, তিনি কুলসুম ইবনুল হিদম।

রাসূল (সা) উপস্থিত তার বাড়িতে!

কি সৌভাগ্যের ব্যাপার!

আনন্দ আর ধরে না তার হৃদয়ে।

খুশিতে বাগবাগ।

কিযে করবেন রাসূলের (সা) জন্য, কিভাবে যে বরণ করে নেবেন এই মহিমান্বিত মেহমানকে। দিশা করতে পার ছেন না কুলসুম ইবনুল হিদম (রা)।

মুহূর্তেই তিনি হাঁকডাক শুরু করলেন। ডেকে জড়ো করলেন বাড়ির চাকর-বাকরকে।

ডাক পেয়েই ছুটে এলো সকলেই। তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল নাজীহ। কুলসুম নাজীহকে তার নাম ধরে ডাক পারলেন।

রাসূলের (সা) কানে গেল নামটি।

নাজীহ অর্থ সফলকাম।

রাসূল (সা) নামটি শুনেই সাথী আবুবকরকে (রা) বললেন, হে আবুবরক! তুমি সফলকাম হয়েছো।

এই বাড়িতে শুধু রাসূলই (সা) নন। সে সময় রাসূলের (সা) অনেক সঙ্গী-সাথীই মেহমান হিসেবে তার বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন।

যেমন রাসূল (সা) ও আবুবকর (রা) কুলসুমের (রা) বাড়িতে অবস্থানের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলেন মক্কার পথ পেছনে ফেলে আলী ও সুহাইব (রা)।

তাঁরাও অবস্থান করলেণ কুলসুমের (রা) বাড়িতে।

এছাড়াও তার বাড়িতে উঠেছিলেন মক্কা থেকে আগত রাসূলের (সা) একান্ত সাথী আবু মাবাদ আল মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা), যায়িদ ইবনে হারিসা (রা), আবু মারসাদ কান্নায ইবন হিসন (রা), আবু কাবশা (রা) প্রমুখ সাহাবী।

চমর ‍দুঃসময়ে কুলসুম এইভাবে খুলে রেখেছিলেন তাঁর বাড়ির দরোজা নবীর (সা) সাথীদের জন্য।

রাসূল (সা) মদিনায় আছেন।

মক্কা থেকে একে একে অনেকেই এসেছেন সেখানে হিজরত করে।

খুব কাছের সময়।

মদিনায় তৈরি হচ্ছে মসজিদে নববী। সেই সাথে তৈরির কাজ চলছে রাসূলের (সা) বিবিদের আবাসস্থল।

তখন।

ঠিক তখনই ইন্তেকাল করলেন কুলসুম ইবনুল হিদম (রা)।

রাসূলের (সা) মদিনায় আগমনের পর কোনো আনসারী সাহাবীর (রা) এটাই প্রথম ইন্তেকাল!

না। এতটুকুও কষ্ট পেলেন না কুলসুম ইবনুল হিমদ (রা)।

বরং তিনি এক প্রফুল্ল চিত্তে, মহা খুশি ও আনন্দের মধ্যেই চলে গেলেন, জীবনের ওপারে।

কেন তিনি কষ্ট পাবেন?

কেন তিনি ব্যথিত হবেন

তাঁর তো রয়েছে রাসূলের (সা) ভালোবাসা। রয়েছে তার চেয়ে অনেক অধিক সম্পদ। রাসূলের (সা) মেজবান হবার, প্রথম সৌভাগ্যের পরশ।

সফল তিনি।

সফল আশ্চর্য এক মহান মেজবান কুলসুম ইবনুল হিদম দুনিয়া ও  আখেরাতে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!