কেনানের উদ্দেশ্যে শাম ত্যাগ

হযরত ইয়াকুব (আঃ) দীর্ঘদিন মামার নিকট থাকার পর কেনান গমনের অনুমতি চাইলেন। মামা তাঁকে অনেক ধন সম্পদ ও দু’মেয়েকে সাথে দিয়ে বিদায় দিলেন। তিনি দু’স্ত্রী, বহু মাল-সামান এবং অনেক চতুষ্পদ জীব নিয়ে কেনানের উদ্দেশ্যে শাম ত্যাগ করেন। পথে পথে হযরত ইয়াকুব (আঃ) এ ভয়ে ভীত ছিলেন যে, আজ পর্যন্ত যদি তাঁর ভাই ঈসুর মনে পূর্বের ক্ষোভ বিদ্যমান থাকে তবে তিনি কি করবেন। সাক্ষাত হলে পূর্ব ক্ষোভ বশতঃ হয়ত তাঁকে হত্যা করবে। এ চিন্তা করে করতেই তিনি কেনানের নিকটবর্তী হলেন। এদিকে ঈসুও শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। পথিমধ্যেই দু’ভাইয়ের সাক্ষাত ঘটে। হযরত ইয়াকুব (আঃ) ঈসুকে দূর থেকেই চিনে ফেলেন। তিনি চাকর নকরদেরকে বললেন, ঈ যে, এক লোক আসছে দেখতে পাচ্ছ, তিনি যদি জিজ্ঞেস করেন এসব মাল সামগ্রী কার? তবে তোমরা বলবে, ঈসুর গোলাম ইয়াকুবের। তিনি শাম দেশে গিয়েছিলেন এখন সেখান থেকে এসেছেন। এ সময় হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর ভয়ে চাকর নকরদের মাঝে লুকিয়ে ছিলেন। বকরীর তাঁবুর নিকট এসে ঈসু জিজ্ঞেস করলেন, এ বকরী কার? সবাই বলল, ঈসুর গোলাম শাম প্রবাসী ইয়াকুবের। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর নাম শুনে ঈসু অশ্রুসজল চোখে বললেন, ইয়াকুব ঈসুর গোলাম নয়, সে তাঁর ভাই। সে ভাই ঈসুর প্রাণের চেয়েও প্রিয়। লোকজন সবাই ঈসুকে বলছে, হযরত ইয়াকুব (আঃ) শাম দেশেও ঈসুর গোলাম নামেই নিজের পরিচয় দিয়েছে।

হযরত ইয়াকুব (আঃ) দূর থেকে ভ্রাতা ঈসুকে অশ্রু-সজল চোখে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। দু’ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সঝোরে কাঁদতে থাকেন। সেকিন সেখানে যাত্রাবিরতী করে পরের দিন হযরত ইয়াকুব (আঃ) স্ত্রী, সন্তানাদি ও চাকর নকরদেরসহ বাড়িতে পৌঁছেন। কেনান থেকে আসার পর রাহীলের গর্ভে আরেক পুত্র জন্ম গ্রহন করে। তাঁর নাম রাখা হয় বেনইয়ামীন। বেনইয়ামীনের জন্মের পর তাঁর মা রাহিলা ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর খালা লাইয়া তাঁকে লালন পালন করেন। তিনি নিজের সন্তান্দের এবং ইউসুফের চেয়েও বেনইয়ামীনকে বেশী স্নেহ করতেন। পড় পুত্র সন্তান জন্ম নেয়ার পর আল্লাহ পাক হযরত ইয়াকুব (আঃ) কে নবুয়াত দান করেন। কেনানের অনেক লোক তাঁর নবুয়তের উপর ঈমান এনে সৎপথ প্রাপ্ত হন।

ঈসু যখন ভাই ইয়াকুবের নবুয়ত লাভের নিশ্চিত প্রমাণ প্রাপ্ত হন তখন দু’ভাই এক স্থানে বসবাস করার চিন্তা পরিহার করেন। তাই ঈসু ভাই ইয়াকুবকে বললেন, ভাই! দীর্ঘদিন কেনানে বসবাস করেছি। তুমি অনেকদিন প্রবাসে ছিলে। এখন তুমি এ এলাদার জন্য আল্লাহ পাকের মনোনিত নবী। সুতরাং তুমি এখানেই থাক। আমি অন্য কোথাও গিয়ে বাস করব। এ সময় ঈসুর সন্তানাদি ও তাঁদের অধনস্ত বংশধরের সংখ্যা অনেক। তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। ঈসুর এক ছেলের নাম ছিল রোম। তিনি রোমকে নিয়ে বর্তমান কালের রোম এলাকায় এসে বসবাস করতে থাকেন। রোমের নামানুসারেই এ শহরের নামকরণ হয়। ঈসু রোমেই ইন্তেকাল করেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সন্তানাদি ও ইন্তেকাল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

কেনানের উদ্দেশ্যে শাম ত্যাগ

হযরত ইয়াকুব (আঃ) দীর্ঘদিন মামার নিকট থাকার পর কেনান গমনের অনুমতি চাইলেন। মামা তাঁকে অনেক ধন সম্পদ ও দু’মেয়েকে সাথে দিয়ে বিদায় দিলেন। তিনি দু’স্ত্রী, বহু মাল-সামান এবং অনেক চতুষ্পদ জীব নিয়ে কেনানের উদ্দেশ্যে শাম ত্যাগ করেন। পথে পথে হযরত ইয়াকুব (আঃ) এ ভয়ে ভীত ছিলেন যে, আজ পর্যন্ত যদি তাঁর ভাই ঈসুর মনে পূর্বের ক্ষোভ বিদ্যমান থাকে তবে তিনি কি করবেন। সাক্ষাত হলে পূর্ব ক্ষোভ বশতঃ হয়ত তাঁকে হত্যা করবে। এ চিন্তা করে করতেই তিনি কেনানের নিকটবর্তী হলেন। এদিকে ঈসুও শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। পথিমধ্যেই দু’ভাইয়ের সাক্ষাত ঘটে। হযরত ইয়াকুব (আঃ) ঈসুকে দূর থেকেই চিনে ফেলেন। তিনি চাকর নকরদেরকে বললেন, ঈ যে, এক লোক আসছে দেখতে পাচ্ছ, তিনি যদি জিজ্ঞেস করেন এসব মাল সামগ্রী কার? তবে তোমরা বলবে, ঈসুর গোলাম ইয়াকুবের। তিনি শাম দেশে গিয়েছিলেন এখন সেখান থেকে এসেছেন। এ সময় হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর ভয়ে চাকর নকরদের মাঝে লুকিয়ে ছিলেন। বকরীর তাঁবুর নিকট এসে ঈসু জিজ্ঞেস করলেন, এ বকরী কার? সবাই বলল, ঈসুর গোলাম শাম প্রবাসী ইয়াকুবের। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর নাম শুনে ঈসু অশ্রুসজল চোখে বললেন, ইয়াকুব ঈসুর গোলাম নয়, সে তাঁর ভাই। সে ভাই ঈসুর প্রাণের চেয়েও প্রিয়। লোকজন সবাই ঈসুকে বলছে, হযরত ইয়াকুব (আঃ) শাম দেশেও ঈসুর গোলাম নামেই নিজের পরিচয় দিয়েছে।

হযরত ইয়াকুব (আঃ) দূর থেকে ভ্রাতা ঈসুকে অশ্রু-সজল চোখে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। দু’ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সঝোরে কাঁদতে থাকেন। সেকিন সেখানে যাত্রাবিরতী করে পরের দিন হযরত ইয়াকুব (আঃ) স্ত্রী, সন্তানাদি ও চাকর নকরদেরসহ বাড়িতে পৌঁছেন। কেনান থেকে আসার পর রাহীলের গর্ভে আরেক পুত্র জন্ম গ্রহন করে। তাঁর নাম রাখা হয় বেনইয়ামীন। বেনইয়ামীনের জন্মের পর তাঁর মা রাহিলা ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর খালা লাইয়া তাঁকে লালন পালন করেন। তিনি নিজের সন্তান্দের এবং ইউসুফের চেয়েও বেনইয়ামীনকে বেশী স্নেহ করতেন। পড় পুত্র সন্তান জন্ম নেয়ার পর আল্লাহ পাক হযরত ইয়াকুব (আঃ) কে নবুয়াত দান করেন। কেনানের অনেক লোক তাঁর নবুয়তের উপর ঈমান এনে সৎপথ প্রাপ্ত হন।

ঈসু যখন ভাই ইয়াকুবের নবুয়ত লাভের নিশ্চিত প্রমাণ প্রাপ্ত হন তখন দু’ভাই এক স্থানে বসবাস করার চিন্তা পরিহার করেন। তাই ঈসু ভাই ইয়াকুবকে বললেন, ভাই! দীর্ঘদিন কেনানে বসবাস করেছি। তুমি অনেকদিন প্রবাসে ছিলে। এখন তুমি এ এলাদার জন্য আল্লাহ পাকের মনোনিত নবী। সুতরাং তুমি এখানেই থাক। আমি অন্য কোথাও গিয়ে বাস করব। এ সময় ঈসুর সন্তানাদি ও তাঁদের অধনস্ত বংশধরের সংখ্যা অনেক। তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। ঈসুর এক ছেলের নাম ছিল রোম। তিনি রোমকে নিয়ে বর্তমান কালের রোম এলাকায় এসে বসবাস করতে থাকেন। রোমের নামানুসারেই এ শহরের নামকরণ হয়। ঈসু রোমেই ইন্তেকাল করেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সন্তানাদি ও ইন্তেকাল সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

শেয়াল ও মুরগি

এক বাগানের একটি খাঁচায় একপাল মুরগিছানা থাকত ওদের মায়ের সঙ্গে। ওরা ছিল বেশ শান্ত-সুবোধ। কেউ…

ছাগল ও সিংহ

ক্লাসে কিছু ছাত্র থাকে যারা- যেমন বুদ্ধিমান তেমনি জ্ঞানী। আবার কিছু ছাত্র আছে যাদের স্মৃতি…

সততার মূল্য

‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’—এ প্রবাদটি আমরা সবাই জানি। কেবল প্রবাদে নয়, পবিত্র কোরআন ও হাদিসেও সততার…