একদিন গ্রীষ্মকালের স্নিগ্ধমধুর প্রভাতে বায়ু সেবনের জন্য বীরবলকে সঙ্গে নিয়ে সম্রাট প্রাতভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। অনেকদূর পর্যন্ত কথা বলতে বলতে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফেরার সময় বেশ রৌদ্র উঠল, এবং আবার অসহ্য গরম পড়ে গেল। সম্রাট বললেন, উঃ বড্ড গরম লাগছে! অনেক বেলা হয়ে গেছে। তুমি আমার ভারী জামাটা কাঁধে নেবে বীরবল ?’ “যে আজ্ঞে।’ বীরবল সম্রাটের সেই জামাটা কাঁধে ফেলে ধীরে ধীরে চললেন। অনেকটা দূর গিয়ে সম্রাট একবার মুখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘খুব ভারী মনে হচ্ছে? নিশ্চয়ই তোমার কষ্ট হচ্ছে? এই বোঝা কতটা ভারী হবে বলো তো?” বীরবল জবাব দিলেন, তা একটা গাধার বোঝা হবে বইকী।’ সম্রাট স্তব্ধ হয়ে বীরবলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর পথ চলতে লাগলেন এবং রাজদরবারে পৌছে গেলেন। রাজদরবারের মাঝখানে সিংহাসনে বসে সম্রাট আকবর প্রশ্ন করে বসলেন, “বলো তো বীরবল, সত্য ও মিথ্যার মাঝখানে ব্যবধান কতটুকু? সবাই চুপ। বীরবল এদিক-ওদিক তাকিয়ে পরিষ্কার কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘মাত্র চার ইঞ্চি হুজুর। এর বেশি কোনওমতেই হতে পারে না।’ ‘চার ইঞ্চি !’ সম্রাট অবাক! তিনি বললেন, সে কী কথা? তুমি ঠিক বলছ তো? হ্যাঁ, হুজুর। মাত্র চার ইঞ্চি! আমরা দুই চোখে যা দেখি তা সত্য। কিন্তু দুই কানে যা শুনি তা অনেক সময়ে সত্য নয়, অনেক সময় মিথ্যা। চোখ দিয়ে দেখা এবং কান দিয়ে শোনা, এ দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান, চার ইঞ্চির বেশি নয় সম্রাট সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যও ততটুকু। জবাব শুনে সম্রাটের মুখ প্রফুল্ল হয়ে উঠল। সম্রাট সমঝদার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বীরবলকে বললেন, ‘সত্যি, তোমার তুলনা তুমিই।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।