স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ১
একদা আছিয়া তাঁর কক্ষে আরাম কেদারায় বসে স্বীয় চুল আঁচড়াতেছিলেন। তাঁর মনে কোনরূপ শান্তি ছিল না। স্বামীর অধর্মাচারণ, তাঁর নিজের প্রতি স্বামীর অসহ্য নির্যাতন তাছাড়া নির্দোষ হতভাগ্য বনী ইসরাঈলদের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার প্রভৃতি তাঁর মনটিকে একবারে বিষাক্ত করে তুলেছিল।
তিনি চক্ষের পানি বইয়ে ক্রন্দন করছিলেন। এখন তিনি দিবানিশি প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই এভাবে ক্রন্দন করেন। রাত্রে শয্যায় শায়িত হয়ে চক্ষু মুদে শুধু কেঁদেই রাত্রি ভোর করে দেন! নিদ্রা তাঁর নিকট হতে বিদায় নিয়েছে অনেক পূর্বে। দিবা ভাগে তাঁর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজগুলি করতে বসেও তিনি কাঁদেন।
ক্রন্দন ছাড়া তাঁর অন্য কোন সম্বল নেই। ইবাদত করতে বসে এত অধিক ক্রন্দন করেন, যাতে মনে হয় তিনি দুনিয়াতে বুঝি শুধু কাঁদতেই এসেছিলেন। কাঁদার কারণগুলো উপরে যা উল্লেখ করলাম তা তো ছিলই কিন্তু সর্বপ্রধান কারণ তাঁর স্বামীর ভয়াবহ পরিণামের ভাবনা।
তিনি প্রতি মুহূর্তে যেন চোখের উপরে দেখেন যে, তাঁর স্বামীর উপরে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ আযাব প্রয়োগ করছেন এবং স্বামী তাতে অসহ্য হয়ে মর্মস্পর্শীভাবে চিৎকার করছেন, আছিয়া আমাকে রক্ষা কর! আমাকে রক্ষা কর!
ওদিকে চুল আঁচড়াবার হঠাৎ তাঁর হস্ত হতে চিরণীখানা নীচে পড়ে গেল। তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে চিরণী খানা উঠিয়ে নিলেন।
ওদিকে ফেরাউন কিছটা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে এ মুহূর্তে আছিয়ার কক্ষে প্রবেশ করল। গত কিছুদিন যাবত তার মনের অবস্থা খুব ভাল নয়। চারদিকে সে যেন কিসের একটা অশুভ লক্ষণ অনুভব করেছিল। মুছাকে নিয়েই তার অধিক ভাবনা ছিল।
যাকে নদীর বক্ষ হতে কুড়ায়ে এনে শাহী মহলের মাঝে রেখে রাজপুতের মত পালন করে বড় করা হল এখন সেই মুছাই তার বিরুদ্ধে হয়েছে। এখন মুছাই তার খোদাই দাবীকে সমর্থন করছে না বরং মনে হইতেছে যেন ভিতরে ভিতরে তার সহচর ও সভাসদগণের অনেক লোককেই সে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে।