সতীশ । আমি তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি , নেলি।
নলিনী । কেন , কোথায় যাবে।
সতীশ । জাহান্নমে।
নলিনী । সে জায়গায় যাবার জন্য কি বিদায় নেবার দরকার হয়। যে লোক সন্ধান জানে সে তো ঘরে বসেই সেখানে যেতে পারে। আজ তোমার মেজাজটা এমন কেন। কলারটা বুঝি ঠিক হাল ফেশানের হয় নি !
সতীশ । তুমি কি মনে কর আমি কেবল কলারের কথাই দিনরাত্রি চিন্তা করি।
নলিনী । তাই তো মনে হয়। সেইজন্যই তো হঠাৎ তোমাকে অত্যন্ত চিন্তাশীলের মতো দেখায়।
সতীশ । ঠাট্টা কোরো না নেলি, তুমি যদি আজ আমার হৃদয়টা দেখতে পেতে—
নলিনী । তা হলে ডুমুরের ফুল এবং সাপের পাঁচ পাও দেখতে পেতাম।
সতীশ । আবার ঠাট্টা ! তুমি বড়ো নিষ্ঠুর। সত্যই বলছি নেলি, আজ বিদায় নিতে এসেছি।
নলিনী । দোকানে যেতে হবে?
সতীশ । মিনতি করছি নেলি, ঠাট্টা করে আমাকে দগ্ধ কোরো না। আজ আমি চিরদিনের মতো বিদায় নেব।
নলিনী । কেন, হঠাৎ সেজন্য তোমার এত বেশি আগ্রহ কেন।
সতীশ । সত্য কথা বলি, আমি যে কত দরিদ্র তা তুমি জান না।
নলিনী । সেজন্য তোমার ভয় কিসের। আমি তো তোমার কাছে টাকা ধার চাই নি।
সতীশ । তোমার সঙ্গে আমার বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছিল—
নলিনী । তাই পালাবে? বিবাহ না হতেই হৃৎকম্প।
সতীশ । আমার অবস্থা জানতে পেরে মিস্টার ভাদুড়ি আমাদের সম্বন্ধ ভেঙে দিলেন।
নলিনী । অমনি সেই অপমানেই কি নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হবে। এতবড়ো অভিমানী লোকের কারও সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ রাখা শোভা পায় না। সাধে আমি তোমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনলেই ঠাট্টা করে উড়িয়ে দি।
সতীশ । নেলি, তবে কি এখনো আমাকে আশা রাখতে বল।
নলিনী । দোহাই সতীশ, অমন নভেলি ছাঁদে কথা বানিয়ে বলো না, আমার হাসি পায়। আমি তোমাকে আশা রাখতে বলব কেন। আশা যে রাখে সে নিজের গরজেই রাখে, লোকের পরামর্শ শুনে রাখে না।
সতীশ । সে তো ঠিক কথা । আমি জানতে চাই তুমি দারিদ্র্যকে ঘৃণা কর কি না।
নলিনী । খুব করি, যদি সে দারিদ্র্য মিথ্যার দ্বারা নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করে।
সতীশ । নেলি, তুমি কি কখনো তোমার চিরকালের অভ্যস্ত আরাম ছেড়ে গরিবের ঘরের লক্ষ্মী হতে পারবে।
নলিনী । নভেলে যেরকম ব্যারামের কথা পড়া যায়, সেটা তেমন করে চেপে ধরলে আরাম আপনি ঘরছাড়া হয়।
সতীশ । সে ব্যারামের কোনো লক্ষণ কি তোমার—
নলিনী । সতীশ, তুমি কখনো কোনো পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারলে না। স্বয়ং নন্দী-সাহেবও বোধ হয় অমন প্রশ্ন তুলতেন না। তোমাদের একচুলও প্রশ্রয় দেওয়া চলে না।
সতীশ । তোমাকে আমি আজও চিনতে পারলেম না, নেলি।
নলিনী । চিনবে কেমন করে । আমি তো তোমার হাল ফেশানের টাই নই, কলার নই—
দিনরাত যা নিয়ে ভাব তাই তুমি চেন ।
সতীশ । আমি হাত জোড় করে বলছি নেলি, তুমি আজ আমাকে এমন কথা বোলো না। আমি যে কী নিয়ে ভাবি তা তুমি নিশ্চয় জান—
নলিনী । তোমার সম্বন্ধে আমার অন্তর্দৃষ্টি যে এত প্রখর তা এতটা নিঃসংশয়ে স্থির কোরো না। ঐ বাবা আসছেন। আমাকে এখানে দেখলে তিনি অনর্থক বিরক্ত হবেন, আমি যাই।
সতীশ । মিস্টার ভাদুড়ি, আমি বিদায় নিতে এসেছি।
ভাদুড়ি । আচ্ছা, তবে আজ—
সতীশ । যাবার আগে একটা কথা আছে।
ভাদুড়ি। কিন্তু সময় তো নেই, আমি এখন বেড়াতে বের হব।
সতীশ । কিছুক্ষণের জন্য কি সঙ্গে যেতে পারি।
ভাদুড়ি। তুমি যে পার তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি পারব না। সম্প্রতি আমি সঙ্গীর অভাবে তত অধিক ব্যাকুল হয়ে পড়ি নি ।
নলিনী । চিনবে কেমন করে । আমি তো তোমার হাল ফেশানের টাই নই, কলার নই—
দিনরাত যা নিয়ে ভাব তাই তুমি চেন ।
সতীশ । আমি হাত জোড় করে বলছি নেলি, তুমি আজ আমাকে এমন কথা বোলো না। আমি যে কী নিয়ে ভাবি তা তুমি নিশ্চয় জান—
নলিনী । তোমার সম্বন্ধে আমার অন্তর্দৃষ্টি যে এত প্রখর তা এতটা নিঃসংশয়ে স্থির কোরো না। ঐ বাবা আসছেন। আমাকে এখানে দেখলে তিনি অনর্থক বিরক্ত হবেন, আমি যাই।
সতীশ । মিস্টার ভাদুড়ি, আমি বিদায় নিতে এসেছি।
ভাদুড়ি । আচ্ছা, তবে আজ—
সতীশ । যাবার আগে একটা কথা আছে।
ভাদুড়ি। কিন্তু সময় তো নেই, আমি এখন বেড়াতে বের হব।
সতীশ । কিছুক্ষণের জন্য কি সঙ্গে যেতে পারি।
ভাদুড়ি। তুমি যে পার তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি পারব না। সম্প্রতি আমি সঙ্গীর অভাবে তত অধিক ব্যাকুল হয়ে পড়ি নি ।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।