আছিয়ার মনোভাব-পর্ব ৩
আছিয়ার মনোভাব-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অক্ষৌহিনী সৈন্য সামন্ত ও শত সহস্র দাস দাসী আপনার নির্দেশ পালনে রত। দেশের কোটি কোটি প্রজা আপনার একান্ত বাধ্যগত ও আপনার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল। তাছাড়া পারিবারিক জীবনেও আপনি অতিশয় সুখী।
আপনার স্ত্রী এবং সাতটি সন্তান সকলেই আপনার একান্ত অনুগত। আপনার অতুলনীয় যশ গৌরব সারা দুনিয়ায় বিস্তৃত। এ সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য দ্বারা আপনি যে অপূর্ব শান্তিময় জীবন যাপন করছেন তেমন জীবন এ দুনিয়াতে আর কয়জনে লাভ করেছে?
আপনার ন্যায় সুখী, তৃপ্ত মানব দুনিয়াতে আর কেউ আছে বলেই তো মনে হচ্ছে না।
এ সময় হঠাত ফেরাউন বলে উঠল, হ্যাঁ মহিষী! তুমি সত্যিই বলেছ, আমি ত্রিজগতে অদ্বিতীয় সুখী। কিন্তু আমাকে তৃপ্ত বলতেছ? না আমি মোটেও তৃপ্ত নই। আমার আকাঙ্ক্ষা কি জান, সমস্ত দুনিয়ার লোক যতদিন না আমাকে সারা জগতের অধিপতি রূপে স্বীকার করবে, ততদিনে আমার হৃদয় তৃপ্ত হবে না।
আছিয়া বললেন, স্বামী! তা আপনার পক্ষে অসাধ্য কার্য নয়। চেষ্টা করলে হয়ত দুনিয়ার সমস্ত রাজা-বাদশাগণই আপনার অধীনতা স্বীকারে বাধ্য হবে। আর সারা দুনিয়া দখল করে দিগ্বিজয়ী মহাবীর নামে আখ্যায়িত হওয়া কোনরূপ অবৈধ কাজও নহে। কিন্তু আপনি যে পথে পা বাড়াচ্ছেন, সে পথে অগ্রসর হবার পূর্বে আপনাকে এ বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য নিবেদন করছি। যদি না করেন তবে, আমি মনে হয় নিশ্চয় দুঃখে আঘাতে প্রাণ ত্যাগ করবো।
ফেরাউন বলল, আছিয়া! তোমার এ কথার তাতপর্য এখনও আমার নিকট উদঘাটিত হল না। তুমি কি বলতে চাও সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে বল।
আছিয়া বললেন প্রিয় স্বামী! আপনি নিশ্চয়ই জানেন এ পৃথিবী, আকা্শ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, মানব, দানব, পশু, পক্ষী, কীট, পতজ্ঞ সমস্ত কিছুকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি মহা শক্তিমান আল্লাহ তায়ালা। এটা মানুষের অসাধ্য কাজ।
মানুষ যত বেশী ক্ষমতার অধিকারী হউক না কেন, ক্ষুদ্র একটি পতজ্ঞ সৃষ্টি করতেও সক্ষম নহে। আল্লাহ স্রষ্টা এবং মানুষ তাঁর সৃষ্টি; সুতরাং মানুষ অসীম ক্ষমতা লাভ করলেও আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতার কাছে তা অতি নগণ্য ও সামান্য। দুনিয়ার সমস্ত শক্তিমান মানুষ কেবল আল্লাহ তায়ালার ইঙ্গিতেই ঘুরতেছে। মানুষ যত দীর্ঘ জীবিই হউক না কেন তারা মরণশীল। আল্লাহর ইঙ্গিতক্রমে একদা তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অথচ প্রভু আল্লাহ তায়ালা অনাদি, অনন্ত, চির অমর; তাঁর মৃত্যু বা জড়তা নেই। তিনি ভূত ভবিষ্যৎ, বর্তমানের খবর রাখেন।