ফেরাউনের পত্নী স্মরণ
ফেরাউন এখন মিশরের রাজ তখতে বসে প্রবল প্রতাপে রাজ্য শাসন করছে। তার সুশাসন এবং কর্মকুলতা প্রজাবৃন্দকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে তুলছে। খুশীতে সমগ্র প্রজার মুখে রাজার গুণ-কীর্তন এবং প্রশংসা বানী ঘোষিত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার যোগ্যতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে যে অবস্থা ঘটে থাকে অতি শীঘ্রই মিশর রাজেরও সে অবস্থা হল। সে ভীষণভাবে আত্নাভিমানী হয়ে পড়ল। একদা সে কথায় কথায় মন্ত্রী হামানকে বলল, হামান! এখন সারা দুনিয়ায় আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। মিশর রাজ্যের প্রতি ঘরের ঘরে আমার নামের চর্চা হচ্ছে; কিন্তু দেখ কি আশ্চর্য! পত্নী আছিয়ার নিকট হতে কোন সাড়া পাচ্ছি না। সে কি এসব কিছুর খোঁজই রাখছে না? না দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছে? বেঁচে থাকলে মিশরের এ সম্রাট-পত্নীর আসনে এসে অধিষ্টিত হবার লোভ কিরুপে না হয়ে পারে?
হামান তার মন্ত্রী সুলভ জবাবে বলল, দেখুন বাদশাহ! আছিয়ার সাথে আপনি যেরূপ ব্যবহার করেছিলেন, তাতে তার পক্ষে সম্ভব নয় এখন এসে মিশর রাজের বেগমের আসন অলঙ্কৃত করা। যেহেতু একতা তার মনে উদয় হতে পারে যে, এখন আমাকে মিশর অধিপতি কোনক্রমেই গ্রহণ করবে না। সুতরাং তার পক্ষ হতে সাড়া না পাওয়াতে কোন বৈচিত্র নেই।
বাদশাহ বলল, সে সত্য কথা বটে, ইচ্ছা করলে মিশর অধিপতি এ মুহূর্তে দুনিয়ার কোন নারীকে বিবাহ করতে না পারে? পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খ্যাতিশীলা ও সুন্দরী রাজদুহিতারা এখন আমরা পত্নী হতে পারলে আপনাদেরকে ধন্য ভাববে। আছিয়া তো এক নগণ্যা রমণী। তবু ভাবতেছি কি জান? জীবনের প্রথম লগ্নে যার যাথে পরিণয়াবদ্ধ হয়ে পত্নীরূপে গ্রহণ করেছিলাম, সে যদি এসে আপনা হতে ধরা দেয় তবে অন্য নারীতে প্রয়োজনই বা কি!
চতুর হামান বুঝতে পারল যে, আছিয়ার প্রতি বাদশাহর আকর্ষণ এখনও বিদ্যমান। বাইরা সে যত যা কিছুই বলুক না কেন, আছিয়াকে ছাড়া তার জীবনে শান্তি আসবে না। অতএব তার মন্ত্রী হিসেবে এক বড় দায়িত্ব বিবি আছিয়াকে রাজ অন্তঃপুরে হাযির করে দেয়া। মনে সে এরূপ কল্পনা করে বাদশাহকে বলল, জনাব! বিবি আছিয়ার প্রতি কোনরূপ অন্যায় ধারণা করা যুক্তিযুক্ত নয়। সে যে অন্তরে গর্বের ভাব পোষণ করে আপনার সকাশে উপস্থিত হচ্ছে না সে কথা বিশ্বাস করা যায় না। তবে এমন হতে পারে যে, নারীর চিরদিনকার অভিমান বলে সে আপনার কাছে হাযির হচ্ছে না। নারী যত ক্ষুদ্রাদপী! ক্ষুদ্রই হোক সে কখনও পুরুষের কাছে পরাজয় মানে না। এটা নারী ধর্মের চিরন্তন রীতি। এটা তাদের অপরাধ নয়। সুতরাং আমি অনুরোধ করছি আপনি উদ্যোগী হয়ে আছিয়া বেগমকে রাজ-অন্তঃপুরে আনয়ন করুন।
ফেরাউন বলল, হামান! মিশরের বাদশাহ স্বয়ং একটি রমনীর কাছে এত নতি স্বীকার করবে, আর সে রমণী তার মস্তক উর্ধে তুলে রেখে বিজয়িনী বেশে মহলে এসে প্রবেশ করবে; তুমি আমাকে এ পরামর্শই দিচ্ছ?
এবার মন্ত্রী হামান মৃদ্যু হেসে বলল, বন্ধু! স্বীয় ভার্ষার কাছে এরূপ নতি স্বীকার করলে আপনার কোন হানি নেই। এটা সকলেই করে। তারপর যদি এটা আপনার মনে একান্তই বাধে তবে না হয়ে যে কোন প্রকারে আমিই এ কাজ সমাধা করে দিব। আপনার কোন কিছু ভাবতে হবে না।
ফেরাউন বলল, হামান! মিশর রাজের মান-সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে যা খুশী তোমার তাই করতে পার কিন্তু স্মরণ রেখেও ব্যক্তিত্বের হানি ঘটিয়ে কোন কিছু করো না।
হামান বলল, জাঁহাপনা! মিশর অধিপতির প্রধানমন্ত্রী আমি, আপনি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত থাকুন এতটুকু দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ নিশ্চয়ই আমার আছে।
অতঃপর সে বিবি আছিয়ার প্রতি শাহী ফরমান লিখে তাতে বাদশাহর দ্বারা দস্তখত দিয়ে তা উপযুক্ত লোক মারফত রাজকীয় পরিবেশে আছিয়া সমীপে পাঠিয়ে দিল। ফরমানে লেখা ছিল-
পত্নী আছিয়া! অতীত বিচ্ছেদকালের কথা ভূলে গিয়ে এখন বর্তমানকে স্বীকার করে নাও। সম্প্রতি তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে, আমি তোমাকে আনার জন্য বাহক পাঠিয়ে দিলাম। তুমি অগৌণে চলে আস।