কাবুসের বাদশাহী লাভ- পর্ব ২

কাবুসের বাদশাহী লাভ-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মৃত্যুকালে তাঁর কতিপয় পুত্র, পৌত্র ছিল। কিন্তু তাদের রাজ সিংহাসন ভাগ্যের জুটল না। যেহেতু মৃত রাজার পাত্র-মিত্র এবং দেশের জনসাধারণ সকলেই ছিল কাবুস ভক্ত। অতএব তারা সকলে মিলে তাকেই রাজ সিংহাসনে বসিয়ে দিল। এভাবে কাবুস তার উচ্চাকাঙ্খার মূল লক্ষ্যে উপনীত হল।

এতদিন যদিও কাবুস মিশর রাজ্য নিজের হাতেই পরিচালনা করে আসছিল, তবু তার উপরে বাদশা উপাধিধারী জনৈক ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল। এবার আর তাও রেল না। সে বাদশাই এবার স্বয়ং কাবুস। এখন সে তার ইচ্ছানুযায়ী যা খুশী তা করতে পারে তার উপরে প্রশ্ন করার কেউ নেই।

কাবুসের দোষের সাথে গুণেরও অভাবে নেই। সে তার পূর্ব বন্ধু হামানের কথা সর্বক্ষণ মনে রেখেছে। এবার বাদশাহ হয়ে সর্বপ্রথম হামানকে তার প্রধান মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করলো। হামান এরূপ অভাবনীয় পদমর্যাদা লাভে মনে মনে কাবুসের কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল।

বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা হামানেরও যথেষ্ঠ ছিল। তাই সে প্রধান মন্ত্রীর পদ গ্রহণ করতঃ যথাযথভাবে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে চলল।

আল্লাহ তায়ালার লীলা-খেলা বুঝা মানুষের পক্ষে ভার। যে কাবুস ও হামান দুটি লম্পট যুবক মিশরের এক গন্ডগ্রামে লাম্পট্য এবং দুষ্কৃতি দ্বারা মানুষের কাছে ছিল ঘৃণিত এবং বিরক্তির পাত্র, অদৃষ্টের জোরে তাদের একজন আজ মিশরের একচ্ছত্র রাজাধিরাজ আর অন্যজন তার ডান হাত প্রধান উজির।

উন্নতির উচ্চ মর্গে আরোহণ করে উভয়ই এবার ভীষণ গর্বিত হয়ে পড়ল। বহু প্রাচীনকালে মিশর রাজ্যে রামশিস নামে এক প্রবল পরাক্রমশালী বাদশাহ ছিলেন। কাবুস বাদশাহ হয়ে তাঁর নামের অনুকরণেই রামশিস নাম ধারণ করে নিজেকে দ্বিতীয় রামশিস নামে প্রচার করে দিল। পূর্বে মিশরের সকল শাসকগণই ফেরাউন নামে অভিহিত ছিল। সে হিসাবে কাবুস ওরফে দ্বিতীয় রামশিসও সেই একই খেতাবে ভূষিত হল। ফেরাউনগণের মধ্যে এর নামের প্রসিদ্ধি সর্বাপেক্ষা বেশী।

এ প্রসিদ্ধি ঘটিয়েছে তার কুকর্মের দ্বারা, কোন সতকার্য দ্বারা নয়। সেই কুকর্মের কাহিনী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। আর এ কারণেই ফেরাউন সারা জগত ব্যাপি পরিচিত হয়েছে। এখনও তার সে নাম লোকদের মুখে মুখে আছে। মনে হয় যতদিন জগত থাকবে ততদিন লোকগণ তার নাম ভূলবে না।

কাবুস গৃহত্যাগ করার কিছুদিন পরেই তার বৃদ্ধ শোকাতুর পিতা মৃত্যুবরণ করে। আর তারও কিছুদিন পরে তার পুত্র শোকাভিভুতা জননীও সেই একই পথের পথিক হয়।

অতঃপর এখন এ পরিবারে একাকিনী আছিয়া ব্যতীত আর কেউ রইল না।

আছিয়া তাঁর শ্বশুর প্রদত্ত বিপুল অর্থ এবং জায়গা জমির মালিক হয়ে ভাবছিলেন, তিনি ঐ সম্পদ দ্বারা কি করবেন! সতী সাধ্বী নারীদের প্রধান সম্পদ তার পতী। যার সে সম্পদ নেই তার নিকট অতুল ঐশ্বর্য, জায়গা জমি, বাড়ী সব কিছুই অসার। বাইরে সে সম্পদশালিনী বটে, কিন্তু ভিতরে সে রিক্তা। মন তার শূন্য। সুখ বা শান্তির লেশমাত্র তার নেই।

বিবি আছিয়ার স্বামী থেকেও তিনি স্বামীহারা, তাই তাঁর মনও অবিকল তদ্রুপ। দুনিয়াতে সুখ বলতে কি বস্তু বুঝায় তা তাঁর জানা নেই। অতুল সম্পদ দ্বারা তাঁর কি প্রয়োজন আছে? তিনি কি করবেন এ অর্থ দ্বারা? কে ভোগ করবে এ সম্পদ। এ অর্থ তাঁর নিকট সুখ ও শান্তির স্থলে দুঃখ ও বিরক্তির কারণ হয়ে পড়ল। এটা তাঁর উপরে অনাহুত এক বোঝার তুল্য মনে হতে লাগল।

তিনি মনে করলেন, এ বোঝা মাথার উপর হতে ঝেড়ে ফেলে ভারমুক্ত হবেন। আর যদি এর উছিলায় নিঃস্ব গরীবদের কিছু উপকার হয় তবে সাধন করে পূণ্যার্জনের চেষ্টা করবেন। সে সময় তাঁর স্বগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রামসমূহের বনী ইসরাইল অধিবাসীগণ অতি অভাব-অনটনে কাটাতেছিলেন।

কাবুসের বাদশাহী লাভ-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।