হযরত আছিয়ার জন্মলাভ – শেষ পর্ব
হযরত আছিয়ার জন্মলাভ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পত্নী কথাটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সহসা মুখে তা বেঁধে গেল। মোজাহাম অতি উৎসুক চোখে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাই পত্নী আবার অনেক কষ্টে চোখের দৃষ্টি আনত করে অস্ফুট স্বরে বললেন, এ মাসে আমার যে রক্তঃস্রাব হল না। শরীরও কেমন যেন ভার বোধ হচ্ছে। এটা যে কিসের ইঙ্গিত মোজাহাম তা বুঝতে পেরে স্মিত হাস্যে বললেন, তবে এতদিনে আল্লাহ্ হয়ত আমাদের প্রতি দয়া করলেন। এবার লজ্জা পেয়ে পত্নীর দৃষ্টি আরও বেশী আনত হয়ে পড়ল।
দেখতে দেখতে নয় মাস অতীত হয়ে গেল। মোজাহাম পত্নী এখন দশম মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গৃহের কাজ-কর্ম কিছুই করেন না। অধিকাংশ সময় তিনি শয্যায় কাটিয়ে দেন। কর্মব্যস্ত মোজাহামও বেশী পত্নীর কাছে আসতে পারেন না। একদা তাঁর কাজকর্মের অবসরে তিনি পত্নীর শয্যার পার্শ্বে এসে বসলেন এবং পত্নীর কাছে তাঁর শারীরিক কুশল বার্তা জিজ্ঞেস করলেন।
পত্নী বললেন, তাঁর দেহ অতিশয় দুর্বল বোধ হচ্ছে এবং অত্যন্ত ভয় হচ্ছে। মোজাহাম তাঁকে নির্ভয় এবং সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, প্রিয়তমা! একটি বিষয় আমার কেবলই ভাবনা হচ্ছে তা কি বলতে পার?
পত্নী বললেন, তা কি বলুন না শুনি?
মোজাহাম বললেন, যদি আল্লাহ আমাদের কন্যা দান করেন তবে যে ভীষণ বিপদের কথা। কিবতীগণের আচরণ তো দেখতেই পাচ্ছ!
পত্নী এর জবাবে বললেন, এরূপ চিন্তা সর্বক্ষণ আমার মনেও উদয় হচ্ছে এবং সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের পুত্র সন্তান দান করেন। মোজাহাম বললেন, দিবা নিশি এ একই প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে আমিও জানাচ্ছি।
কিন্তু সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার মর্জী তাঁর বান্দাগণের বাসনা ও কামনার ঠিক অনুরূপ হয় না। অবুঝ মানুষগণ এমতস্থলে বিরুপ ব্যাখ্যা করে। নিরাশ হয়ে পড়ে। কেউবা হয়ত মর্ম বেদনায় অস্থির হয় যায়। কিন্তু মর্জী তার ভিতরে গূঢ় রহস্য থাকে। বাহ্য দৃষ্টি দ্বারা সমূহ ক্ষেত্রে উহাকে বান্দার অনুকূল রূপে মনে না হলেও উহার যে প্রয়োজন আছে, উহার ভিতরে আল্লাহ তায়ালার কোন যে গোপন উদ্দেশ্য আছে তা অজ্ঞ মানুষগণ যথাস্থলে অনুভব করে।
মোজাহাম দম্পতি ঠিক এমন একটি ঘটনার শিকার হলেন। তাঁদের মনের বাসনা পূর্ণ হল না। তাঁদের একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হল কিন্তু পুত্র হল না। তাঁরা একটি কন্যা সন্তান লাভ করলেন।
এতে প্রথমতঃ তাদের মন দমে গেলেও স্বামী-স্ত্রী দু-জনই ধার্মিক এবং জ্ঞানী ছিলেন। তাই আল্লাহর এ দানকে তাঁরা অবহেলা করা পাপ মনে করলেন এবং মনের কালিমা ঝেড়ে মুছে অচিরেই শিশু কন্যার প্রতি স্নেহশীল হলেন।