হযরত ওমর (রাঃ) এর মানব সেবা – শেষ পর্ব
খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর রাজকোষ হতে তোমরা নিয়মিত মাসিক সাহায্য পাবে। বৃদ্ধা মহিলা খুব আন্দিত হয়ে তাঁকে প্রাণ ভরে দোয়া করতে লাগল। একদা গভীর রাতে একটি দীর্ঘাকৃতি ব্যক্তি শহরের পথ দিয়ে চলছে। চতুর্দিক নীরবে পথ চলছে। এমনি হঠাৎ একটি তাবুর কাছে আসতেই তিনি শুনতে পেলেন নারী কণ্ঠের করুন অস্ফুট আওয়াজ। তিনি কান পেতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাবুর দিকে অগ্রসর হল। তাবুর দরজায় এক ব্যক্তি বিশেষ চিন্তিত হয়ে বসেছিল। একটি লোককে আসতে দেখে সে উঠে দাড়াল। আগন্তুক তাঁকে প্রশ্ন করলেন, এ তাবুর হতে একটি রমনীর আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। ব্যাপার কি জানতে পারি? লোকটা উত্তর দিল, আমরা বেদুঈন, পথে প্রান্তরে মরভুমিতে আমাদের দিন কাটে।
আমরা বহুদুর হতে আজ এসেছি খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সঙ্গে দেখা করার প্রত্যাশায়। শুনেছি তিনি অতিশয় দয়ালু। আমাদের দুঃখের কথা শুনলে তিই নিশ্চয় সাহায্য করবে। কিন্তু খুব বিপদে পড়েছি এখানে এসে। আমার স্ত্রী ছিল আসন্ন-প্রসবা। এখানে আসার পরেই তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। এখানে আমি একা এবং অসহায়। কি যে উপায় হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। তখন আগন্তুকটি বললেন, আপনি ব্যস্থ হবেন না। আমি শীঘ্র এর একটা ব্যবস্থা করছি। এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন এবং কিছু ক্ষনের মধ্যেই একজন মহিলা সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলেন। মহিলাটির সঙ্গে প্রসব করানোর উপযোগী সরঞ্জামাদি ছিল।
তিনি সগুলো নিয়ে তাবুর মধ্যে প্রবেশ করলেন। আগন্তুক ব্যক্তির সঙ্গে কিছু ময়দা এবং অপর কছু খাদ্য এনেছিলেন। তিনি সেগুলো বেদুঈনটিকে প্রদান করলেন। অনেক ক্ষণ পর তাবুর মধ্য হতে মহিলাটি সহর্ষ কণ্ঠে বললেন, আমীরুল মুমীনীন, আপনি আপনার বন্ধুটিকে বলুন তাঁর একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেছে। কে আমীরুল মুমিনীন? বেদুঈনটি রীতিমত চমকে উঠলেন। সে বিস্মিত দৃষ্টিতে আগন্তুকের মুখের দিকে তাকাল। আগন্তুকটি বললেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ভাই। লোকে আমাকেই আমীরুল মুমীনীন হযরত ওমর (রাঃ) বলে জানে। আর ওই মহিলাটি আমার স্ত্রী উম্মে কুলসুম। বেদুঈন ভয়ে ভক্তিতে নত হয়ে খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর কদমবুছি করলেন।
মৃদু স্বরে বললেন, আমার বেয়াদবি মাফ করুন জাঁহাপনা। আমি না জেনে অনেক অপরাধ করেছি। খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) স্বস্নেহে তাঁর মাথায় হাত রাখলেন। বললেন, তোমার কোন অপরাধ নেই ভাই। আচ্ছা, এবার আমরা যাই। আগামীকাল আমার সাথে দেখা করবে। খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) বেদুঈনটির হাতে কিছু অর্থ দিলেন, অতঃপর বেগম সাহেবাকে সঙ্গে নিয়ে মরুভূমির পথে অন্ধকারের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। জেরুজালেম খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মাঝে বিবাদ শুরু হয়েছিল। সে বিবাদ সমাধার জন্য খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সে জায়গায় হাজির থাকা প্রয়োজন মনে করলেন। তিনি হাজির না থাকলে এর মীমাংসা কিছুতেই হবে না। অতএব তাঁকে জেরুজালেমের দিকে রওয়ানা করতে হল।
মদীনা হতে জেরুজালেম প্রায় ৩০০ শত কিলোমিটার। এ সুদীর্ঘ পথ তাঁকে অতিক্রম করতে হবে। নবাব বাদশাহরা পথ চলতে যেমন লোক লস্কর, সিপাহী,শাস্ত্রী, হাতি ঘোড়া আরও কত কি সাথে নিয়ে খুব জাকজমক করে চলতেন, খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সেরূপ কিছুই প্রয়োজন হল না। মাত্র একটি উট, সে উটের পিঠে চড়ে তিনি রওয়ানা হল। একজন রাখাল উটের দড়ি ধরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল, মরুভূমির পথ বালুময়। উপরে প্রচণ্ড রৌদ্রে আর নিচে উত্তপ্ত বালুর সাগর, দুরন্ত লু, হাওয়া ক্ষনে ক্ষনে ছুটে আসছে ধুলো ঝড় উড়িয়ে। এরই মধ্যে ৩০০ শত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) কে। হযরত ওমর (রাঃ) মনে মনে ভেবে দেখলেন, এতখানি পথ রাখাল একাই উটের দড়ি টেনে নিয়ে যাবে তাঁকে। এ কথাটি ভাবতেই তিনি দুঃখ অনুভব করলেন। অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) স্থির করলেন, কিছুটা পথ তিনি উটের ওপর বসে যাবেন।
অতঃপর তিনি নেমে রাখালটিকে উটের হাওদার উপরে উঠিয়ে দেবেন। আর তিনি নিজ দড়ি ধরে আগে আগে যাবেন।এমনি করে দু’জন মিলে পথ চলবেন। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। হযরত ওমর (রাঃ) রাখালকে উটের পিঠে চড়িয়ে দিলেন এবং নিজে উটের দড়ি ধরে সম্মুখে দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। এভাবে পালা করে তাঁরা পথ চলতে লাগলেন। জেরুজালেমবাসীগণ সে রাখালকেই খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) বলে মনে করলেন। অতঃপর তাঁরা যখন সম্পর্ন বিষয় জানতে পারলেন। তখন তাঁদের বিষ্ময়ের আর সীমা রইল না। তাঁরা সবাই বলাবলি করতে লাগলেন, এমন মহান খলিফা তাঁরা আগে কখনো দেখেন নি।