বিচক্ষণ জ্বিনদের গল্প

বর্ণনায় হযরত ইসহাক বিন আবদুল্লাহ বিন আবী ফারওয়াহ (রহঃ) একবার কয়েকজন জ্বিন মানুষের রূপ ধরে একজন মানুষের কাছে এসে বলে- তুমি নিজের জন্য কি জিনিস পছন্দ করো?

সে বলে- আমি উট পছন্দ করি।

জ্বিনেরা বলে- তুমি নিজের কোঠার পরিশ্রম ও দীর্ঘ মুসীবত পছন্দ করেছ। তোমার প্রবাসজীবন অবশ্যম্ভাবী, যা তোমাকে তোমার বন্ধুবর্গের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। (কেননা উট ওয়ালাদের) ক্ষেত্রে এরকমই ঘটে থাকে।

এরপর সেই মানুষরূপী জ্বিনের দলটা তার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে অন্য এক মানুষের কাছে যায় এবং তাকে প্রশ্ন করে- তুমি নিজের জন্য কোন জিনিস পছন্দ করো?

সে বলে- আমি ক্রীতদাস পছন্দ করি।

ওরা বলে- তাহলে তো তোমার অনেক মান-মর্যাদা হবে। কীলকের মতো ক্রোধ হবে। ধন-দৌলত অর্জিত হবে। এবং দূর দূরান্তে সফরও করতে হবে। তারপর ওরা তাকে ছেড়ে অন্য এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে-

তুমি কি পছন্দ করো?

সে বলে- আমি পছন্দ করি ছাগল।

জ্বিনরা বলে- তোমার জীবিকা হালাল হবে। সাহায্যপ্রার্থীর অভাব পূরণের সৌভাগ্যও জুটবে। তবে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে না। এবং দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তিও মিলবে না।

এরপর ওরা তাকে ছেড়ে অন্য একজনের কাছে যায়। এবং তাকে প্রশ্ন করে, তুমি নিজের কাছে কোন জিনিস রাখতে পছন্দ করো?

সে বলে- আমি গাছপালা পছন্দ করি।

জ্বিনরা বলে- তিনশ ষাটটি খেজুর সারা বছরের জন্য যথেষ্ট।

তারপর ওরা তাকে ছেড়ে অন্য একটি লোকের কাছে যায় এবং তাকেও যথারীতি প্রশ্ন করে- তুমি নিজের জন্য কি পছন্দ করো?

সে বলে- আমি পছন্দ করি ক্ষেতখামার।

জ্বিনরা বলে- তোমার জীবন-জীবিকা এভাবে নির্ধারিত হয়েছে যে, তুমি চাষবাস করলে পাবে। আর যদি না করো, তো পাবে না।

অতঃপর জ্বিনের দলটি তাকে ছেড়ে ফের রওয়ানা দেয়। অন্য লোকের কাছে যায় এবং তাকেও সেই একই প্রশ্ন কর। তিনি বলেন- প্রথমে তোমরা নিজেদের সম্পর্কে বলো যে, যাতে আমি তোমার কাছে কিছু আশা করতে পারি। একথা বলার পর তিনি ওই মানুষরূপী জ্বিনদের কাছে রুটি নিয়ে আসেন।

জ্বিনরা বলে- কার্যোপযুক্ত শস্য।

এরপর তিনি তাদের কাছে মাংস নিয়ে আসেন।

জ্বিনরা বলে- এ হল আত্মা, যা আত্মাকে খাবে। এটা যত কম হবে, তত ভাল বেশীর থেকে।

এরপর তিনি খেজুর ও দুধ নিয়ে আসেন।

ওরা বলে- খেজুরদের খেজুর আর ছাগলের দুধ। আল্লাহর নামে খাও।

খানা-পিনা শেষ করার পর সেই জ্বিনরা মানুষটিকে প্রশ্ন করে- আপনি বলুন, কোন জিনিস বেশী তেজি, কোন বস্তু বেশী সুন্দর এবং কোন জিনিস সুগন্ধের বিচারে বেশী উৎকৃষ্ট?

মানুষটি বলেন- সবচেয়ে তেজি সেই ক্ষুধার্ত দাঁতের পাটি, যা ক্ষুধার্ত পেটে খাবার প্রভৃতি নিক্ষেপ করে। সবচেয়ে সুন্দর সেই বৃষ্টি যা মেঘ করার পর উঁচু জমিতে বর্ষিত হয়। আর সবচেয়ে সেরা সুগন্ধি সেই ফুল বা ফোটে বৃষ্টির পর। এবার জ্বিনরা জানতে চায়- আপনি নিজের জন্য কোন জিনিস পছন্দ করেন? তিনি বলেন- আমি মৃত্যুকে পছন্দ করি।

জ্বিনরা বলে- আপনি তো এমন জিনিস পছন্দ করেছেন যা আপনার আগে কেউই করেনি। এখন আপনি আমাদের কিছু উপদেশ দিন এবং সফরের পাথেয়ও দান করুন।

লোকটি ওদেরকে এক মশকভরা দুধ দিয়ে বলেন- এই তোমাদের সফরের পাথেয়।

জ্বিনরা বলে কিছু উপদেশ দান করুন।

উনি বললেন- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়তে থাকবে। এটি আগে পিছনের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট। এরপর সেই জ্বিনের দল মানুষটির কাছ থেকে বিদায় নেয়। এবং তাকে ওরা জ্বিন ও মানুষের মধ্যে সেরা বলে গন্য করে।

আবূ নাসর বিন কাসিম বলেছেনঃ ওই জ্বিনের দলটি যে শেষোক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল, উনি ছিলেন হযরত উওয়ামির আবু দারদা (রাঃ)।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।