আল্লাহর উপর ভরসার প্রতিদান

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য: আল্লাহর উপর ভরসা

মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন—

“মুমিনদের জন্য আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।”
(সূরা ইবরাহীম: ১১)

আরও বলেন—

“যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।”
(সূরা তালাক্ব: ৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

“যদি তোমরা আল্লাহর উপর যথাযথভাবে ভরসা করতে, তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দান করতেন যেমন পাখিদের দেন। তারা সকালে খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।”
(তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫০৬৯)

আল্লাহর উপর ভরসা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস
(১) বনী ইসরাঈলের এক অনন্য ঘটনা

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইলো। ঋণদাতা বলল,
“কয়েকজন সাক্ষী আন।”

সে বলল,
“সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।”

ঋণদাতা বলল,
“তাহলে একজন যামিনদার আন।”

সে বলল,
“যামিনদার হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।”

ঋণদাতা বলল,
“তুমি সত্য বলেছ।”

অতঃপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল।

ঋণগ্রহীতা সামুদ্রিক সফরে গেল। কাজ শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য যানবাহন খুঁজল, কিন্তু কোনো নৌযান পেল না। তখন সে একটি কাঠের টুকরো নিল, তা ছিদ্র করে এর ভেতরে এক হাজার দীনার ও ঋণদাতার নামে একটি চিঠি রেখে বন্ধ করল।

সমুদ্র তীরে এসে সে বলল—

“হে আল্লাহ! তুমি জানো, আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার ঋণ নিয়েছি। সে আমার কাছে যামিনদার ও সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম—আল্লাহই যথেষ্ট। সে তাতে সন্তুষ্ট হয়েছিল।
আমি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো যানবাহন পাইনি। তাই আমি বিষয়টি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম।”

এই বলে সে কাঠের টুকরোটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল।

অন্যদিকে ঋণদাতা প্রতিদিন সমুদ্র তীরে অপেক্ষা করত, যদি ঋণগ্রহীতা আসে। একদিন সে ঐ কাঠের টুকরোটি দেখতে পেল এবং জ্বালানির জন্য বাড়িতে নিয়ে গেল। কাঠটি চিরতেই সে দীনার ও চিঠি পেয়ে গেল।

কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা আবার এক হাজার দীনার নিয়ে উপস্থিত হয়ে বলল—

“আল্লাহর কসম! আমি সময়মতো আসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু এর আগে কোনো নৌযান পাইনি।”

ঋণদাতা বলল,
“তুমি কি আমাকে কিছু পাঠিয়েছিলে?”

সে বলল,
“না, আমি তো বলেছি—আমি কোনো নৌযান পাইনি।”

ঋণদাতা বলল,
“তুমি যে কাঠের টুকরোর মধ্যে পাঠিয়েছিলে, আল্লাহ তা তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পৌঁছে দিয়েছেন।”

অতঃপর সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দীনার নিয়ে ফিরে গেল।
(বুখারী হা/২২৯১, কিতাবুল কিফালাহ)

(২) রাসূল ﷺ–এর অতুলনীয় তাওয়াক্কুল

জাবের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে নজদের দিকে জিহাদে বের হয়েছিলাম। ফেরার পথে এক উপত্যকায় দুপুরের বিশ্রাম নেয়া হলো। রাসূল ﷺ একটি বাবলা গাছের নিচে বিশ্রাম নিলেন এবং তরবারি গাছে ঝুলিয়ে দিলেন। আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ তিনি আমাদের ডাকলেন। দেখলাম, এক বেদুঈন তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে রাসূল ﷺ–এর তরবারি হাতে নিয়ে বলল—

“আজ তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?”

রাসূল ﷺ শান্তভাবে বললেন—
“আল্লাহ।”
তিনি তিনবার এ কথা বললেন।

ফলে লোকটির হাত থেকে তরবারি পড়ে গেল। রাসূল ﷺ তরবারি তুলে নিয়ে বললেন—

“এবার তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?”

সে বলল,
“আপনি উত্তম তরবারিধারক হয়ে যান।”

এরপর সে প্রতিশ্রুতি দিল যে, সে কখনো রাসূল ﷺ–এর বিরুদ্ধে লড়বে না এবং তাঁর শত্রুদের সাথেও থাকবে না। তখন রাসূল ﷺ তাকে ছেড়ে দিলেন।

সে তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে বলল—
“আমি সর্বোত্তম মানুষের কাছ থেকে ফিরে এসেছি।”
(বুখারী ও মুসলিম)

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হন। উপরোক্ত দুটি হাদীস তার বাস্তব প্রমাণ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই হাদীসসমূহের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন।
আমীন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!