সা জ্জা ক হো সে ন শি হা ব : গ্রামের নামটি একডালা। ভারি সুন্দর। এই গ্রামে নানা রকম ফুল আছে, ফল আছে। বিল আছে, ঝিল আছে। এই বিল-ঝিলে আবার শাপলা ফুলও ফোটে। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুন্দর এক নদী। নাম তার বারানই। তার ধার বেয়ে আছে সাদাসাদা কাশবন। এ যেন এক মায়াপুরী। এই গ্রামে আবার নানা রকম পাখি আছে। শালিক, টিয়ে, মাছরাঙ্গা, ফিঙে, ময়না, ঘুঘুসহ নানান পাখিতে ভরা এই গ্রাম। সারাদিন তাদের কিচির-মিচিরে গ্রাম ভরে থাকে। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই পাখির কলতানে মুগ্ধ হয়। কিন্তু এই গ্রামেই থাকত এক দুষ্টু শিকারি। শিকারিটা বেশ নিষ্ঠুর। সারাদিন সে পাখি শিকার করে। আজ তুলতুলে শালিক তো কাল নাদুসনুদুস মাছরাঙা। পরশু আবার ঘুঘু। প্রায় সব পাখিই আছে তার শিকার তালিকায়। তবে সে সবচেয়ে বেশি শিকার করে যে পাখি তা হলো বক। এ কারণে সবাই তাকে বগা বলে ডাকে। পাখি শিকারের কারণে সে গ্রামের লোকজনের পিটুনিও খেয়েছে। কিন্তু সে পাখি শিকার থামায়নি। পিটুনি খেয়ে একটা জিনিস শুধু বদলে গেছে। আগে যেখানে সে প্রকাশ্যে পাখি শিকার করত, এখন তা করে চুপিসারে। লোকজনের আড়ালে। কারণ মানুষজন দেখলেই তাকে তাড়া করে। পিটুনি দেয়। আর এ কারণে সে ভয়ও পায়। আর সেসব জায়গাগুলোতে সে পাখি শিকার করে যেখানে লোকজনের ওঠাবসা কম। গ্রামের যে জায়গাগুলো নির্জন সেখানেই সে পাখি শিকারের জন্য বেছে নেয়। এই গ্রামেই আবার তুর্যদের বাড়ি। একটা নির্জন জায়গায়। তাদের বাড়ির চারদিকে গাছগাছালিতে ভরা। আর বাড়ির অদূরেই আছে একটা পুকুর। এই খরা মৌসুমে তাতে পানি খুবই কম। এই আধহাতখানিক। সেখানেই আসতো দুটো সাদাবক। তুর্য দূর থেকে তাদের দেখতো আর মজা পেত। বক দুটো তাদের লম্বা লম্বা ঠোঁট দিয়ে ছোট ছোট মাছ শিকার করত। কখনো আবার এক পায়ের ওপর ভর দিয়ে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকত। তুর্য তা দেখে বেশ মজা পেত। একা একা তাদের দেখে হাসত। একদিন সকালে এইপথে যেতে যেতে বক দুটো চোখে পড়ে দুষ্ট শিকারির। ঐদিন বিকালেই সে ঠগা পাতে সেখানে। গ্রামে বক মারার ফাঁদকে সবাই ঠগা বলে। শিকারিকে দূর থেকে ঠগা পাততে দেখতে পায় তুর্য। শিকারি যেই ঠগা পেতে আড়ালে যায় ঠিক তখনই তুর্য ঠগা ওলটপালট করে দিয়ে আসে। এভাবেই দিনের পর দিন বগা ঠগা পাততেই থাকে আর তুর্য তা নষ্ট করতে থাকে। শিকারি মনে করে বক দুটো খুবই চালাক। ওদের ধরা এতো সহজ কথা না। তাই সে বুদ্ধি আঁটে। একদিন পুঁটিমাছের পেট চিরে তাতে সে বিষ মেশায়। আর তা ফেলে রাখে পুকুরের ছিপছিপে পানিতে। তুর্য সেটাও সরিয়ে ফেলে। এভাবে প্রায় এক মাস চেষ্টা করেও বগা বক ধরতে ব্যর্থ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও বক ধরতে ব্যর্থ হয়ে দুষ্টু শিকারি হতাশ হয়ে যায়। একদিন সে একা একা বিড়বিড় করে বলে, এখনকার বকেরাও দেখি চালাক হয়ে গেছে। না আর বক শিকার করবো না। এমনকি পাখিও। এরপর থেকে সেই হতাশ বগাকে আর কখনোই ঐ পুকুরে দেখতে পায়নি তুর্য।