এক বনে বাঘ আর সিংহের ভীষণ ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
বাঘ বলল, “আমি হবো বনের রাজা।”
সিংহ বলল, “তুই কে হে! জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি সিংহই হচ্ছে বনের রাজা। কখনো শুনেছিস বাঘ বনের রাজা হয়?”
বাঘ বলল, “দিন অনেক বদলে গেছে। এখন বাঘের রাজা হওয়ার দিন।”
সিংহ বলল, “উঁহ্! দিনের বেলা তুমি রাজা থাকবে আর রাতে বুঝি আমি রাজা হবো? এটা কেমন করে হয়?”
বাঘ কিছুই বুঝতে না পেরে বলল, “মানে?”
সিংহ বলল, “ওই যে তুমি না বললে এখন বাঘের রাজা হওয়ার দিন! মানে বাঘ হবে দিনের রাজা আর সিংহ হবে রাতের রাজা। কিন্তু সেটা কি হয়? বনের পশুরা কি BaghSinghorGolpo01.gifসেটা মেনে নেবে? আমিই তো মানবো না।”
বাঘ বলল, “ওরে হাঁদারাম সিংহ আমি কি সেটা বলেছি নাকি? আমার কথাই যখন তুমি বুঝতে পারছো না তখন তখন তোমার রাজা হওয়ার যোগ্যতাও নেই। বুঝেছ?”
সিংহ বলল, “তোমার বুঝি যোগ্যতা আছে? আমার মতো এত সুন্দর সোনালি কেশর দেখাও তো? থাকলে তো দেখাবে!”
বাঘ বলল, “আমার শরীরে কী সুন্দর ডোরাকাটা দাগ, দেখেছ? দেখাও তো এমন ডোরাকাটা দাগ? পারবে? পারবে না। তাই বলছিলাম অনেক হাম-তাম করেছ। আর নয়। এবার ভালোয় ভালোয় আমাকে রাজা মেনে নাও।”
সিংহ বলল, “বললেই হলো! বনের পশুরা এখনো আমাকে রাজা হিসেবেই জানে। আর কোনো সিংহ নিজেকে কখনো রাজা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না। বুঝেছ মিঁয়াওর ভাগ্নে?”
নাহ্! এই বিড়ালের জন্য ইজ্জতটা রক্ষা করা গেল না। কে যে বলেছে বিড়াল বাঘের মাসি। এখন সিংহরে কাছে অপমান হতে হলো বিড়ালের ভাগ্নে বলে?
বাঘ বলল, “মিঁয়াওকে মাসি বলে মেনে নিলে তো!”
সিংহ বলল, “মানো আর না মানো মিঁয়াও তোমার মাসি এটা বনের সবাই জানে। এমনকি বনের ওই পাশে যে মানুষরা থাকে, তারাও জানে। মিঁয়াওয়ের গোষ্ঠী! আবার এসেছে বনের রাজা হতে। ভাগো!”
বাঘ বলল, “তুমি ভাগো!”
সিংহ বলল, “তুই ভাগ!”
বাঘ বলল, “তুই ভাগ!”
সিংহ বলল, “কী তুই আমাকে তুই করে বলছিস! রাজাকে তুই করে বলার খেসারত কিন্তু দিতে হবে তোকে। মনে রাখিস।”
বাঘ বলল, “তুই-ই তো আগে রাজাকে তুই করে বলেছিস। তোকেও খেসারত দিতে হবে। মনে রাখিস।”
বাঘ সিংহের ঝগড়ার এসময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক শেয়াল। বাঘ-সিংহের ঝগড়া শুনে শেয়াল বলল, “কী নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে?”
সিংহ বলল, “আমি বনের রাজা। অথচ বাঘ বলছে ও নাকি বনের রাজা।”
বাঘ বলল, “রাজা বদলাতে পারে না? সিংহের একাই রাজা হওয়া বাঘ মানে না। বাঘেরও রাজা হওয়ার ক্ষমতা আছে।”
শেয়াল বলল, “বনে বনে এখন এটাই একটা ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধান দিতে পারে আমাদের শেয়াল রাজা।
বাঘ আর সিংহ দুজনই অবাক। বলে কি শেয়াল! শেয়ালদের আবার রাজা আছে নাকি?”
শেয়াল বলল, “আছে না আবার! আমাদের শেয়াল রাজাই বনের রাজা কে হবে তা ঠিক করে দেয়।”
শেয়ালের কথায় সিংহের আঁতে ঘা লাগল। দাম্ভিক সিংহ বলল, “কোন বনে কে রাজা হবে সেটা শেয়াল রাজা ঠিক করে দেয়ার কে শুনি?”
শেয়াল বলল, “কে না জানে কূট-কৌশলে শেয়ালের চেয়ে বড় আর কোনো পশু নেই। তাই পশুদের রাজা ঠিক করে দেয়ার কাজটি শেয়াল রাজাই করেন।”
বাঘ বলল, “তা তোদের শেয়াল রাজা কোথায় থাকে?”
শেয়াল বলল, “আটলান্টিকের ওপার।”সিংহ বলল, “আটলান্টিক আবার কী জিনিস?”
শেয়াল বলল, “একটা মহাসাগর। ওই মহাসাগরের ওপারে থাকেন শেয়াল রাজা। আটলান্টিকের এপারে আরেক শেয়াল থাকে। তবে ওপারের শেয়াল যা বলে, এপারের শেয়াল তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হুয়া হুক্কা করে কেবল। আমাদের শেয়াল রাজা চাইলে বনের কোনো ছুঁচোকেও রাজা বানিয়ে দিতে পারেন। তার অনেক ক্ষমতা।”
সিংহ বলল, “তাহলে তোদের শেয়াল রাজাকে বল, আমাকে রাজা বানিয়ে দিতে।”
বাঘ বলল, “বিশ্বে এখন পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আমাদের খুদে বনটাই বা এই পরিবর্তন থেকে বাদ যাবে কেন? এতদিন সিংহরা একা রাজত্ব করেছে। এবার বাঘদের পালা। তুই তোদের শেয়াল রাজাকে বল আমাকেই এই বনের রাজা করে দিতে। আমি তোকে আমার পরামর্শক বানিয়ে দিলাম। পারবি না আমাকে রাজা বানাতে?”
শেয়াল বলল, “চেষ্টা করে দেখি। তার আগে বলো আমাদের শেয়াল রাজাকে কে কীভাবে খুশি করবে? শেয়াল রাজাকে যে বেশি খুশি করতে পারবে, সে-ই রাজা হবে।”
সিংহ বলল, “বেশ ভালো প্রস্তাব। ঠিক আছে। রাজা হলে আমি আমার বনের অর্ধেকটা তোদের শেয়াল রাজাকে দিয়ে দেবো।”
বাঘ বলল, “আমি পুরো বনটাই দিয়ে দেবো।”
শেয়াল বলল, “পুরো বন দিয়ে দিলে রাজত্ব করবে কেমন করে? আমাকেই বা দেবে কী। রাজা বানিয়ে দিলে আমাকে কিছু দেবে না?”
সিংহ বলল, “তোকে এই বনের সব বনমোরগ দিয়ে দেবো।”
বাঘ বলল, “আমি তোকে সব বনমোরগের সঙ্গে বনমুরগিগুলোকেও দিয়ে দেবো। তোর আর খাবারের অভাব হবে না। মোরগ-মুরগির খোঁজে তোকে আর বনের এ মাথা ও মাথা ঘুরতে হবে না। আহ্হা রে! খাবারের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে নিজের চামড়ার রঙটাই তোর বদলে গেল। কী কষ্ট তোর। তোর কষ্ট দেখলে তো আমারই চোখ দিয়ে পানি গড়ায় রে শেয়াল।”
সিংহ বলল, “শেয়ালের জন্য আলগা দরদ দেখছি। বলি এই দরদ এতদিন কোথায় ছিল? শোন শেয়াল। বনের রাজা কিন্তু আমাকেই বানানো চাই। মনে রাখিস রাজা হওয়ার অভিজ্ঞতা কিন’ কেবল আমারই আছে।”
শেয়াল মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “আমি বললেই তো আর হবে না। আমাদের শেয়াল রাজার সঙ্গে আলাপ করে দেখি। তারপর জানাচ্ছি।”
বলেই চলে গেল শেয়াল।
চলে গেল বাঘ।
চলে গেল সিংহ।
যে যে যার যার পথে।কিন্তু নতুন রাজা না হওয়া পর্যন্ত বনের রাজা কে থাকবে? বন তো আর রাজা ছাড়া থাকতে পারে না? শেয়ালের পরামর্শে ততদিন একটা বুনো ষাঁড়কে বনের রাজা বানিয়ে দেয়া হলো। এই বুনো ষাঁড়ের ইয়া লম্বা লম্বা দুখানা শিঙ। মাঝে মাঝে শিঙ দুখানা দেখিয়ে বাঘ আর সিংহকে সে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাঘ সিংহকি এত সহজে ডরায়? উল্টো ওরা হালুম হুলুম করে। লাফ ঝাঁপ করে। কিন্তু বুনো ষাঁড়কে কিছু বলে না। বুনো ষাঁড়কে কিছু বললেই যদি শেয়াল রাজা রাগ করেন? শেয়াল রাজার মতি-গতির ঠিক নেই। কখন কাকে রাজা করে বসে ঠিক নেই। তাই শেয়াল রাজাকে রাগাতে চায় না কেউই। বনের পশুদের মতো ওরাও অপেক্ষা করে আছে-দেখা যাক কী হয়।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।